somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের সুশীল সমাজ ও সংস্কার প্রসঙ্গে

০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের সুশীল সমাজকে নিয়ে চাইলে আপনি ফিল্ম বানাতে পারেন, বই লিখতে পারেন। এরা দেশের একটি অতি আশ্চর্য শ্রেণী। এদের পড়ালেখা বেশি, বই লিখেন, পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা করেন, কখনো আমলা কখনো গামলা ইত্যাদি। জাতির বিবেক গঠনে এরা কাজ করে থাকেন। বিদেশি প্রেসক্রিপশন এরা দেশের আরোগ্য লাভে ব্যবহার করতে চান। কেউ কেউ আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে সুচতুর ভাবে অন্য রাজনৈতিক দলকে বাঁশ দেন। সুশীলদের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে রয়েছে এনজিওর কর্ণধার, অবসর প্রাপ্ত আমলা, সেনাবাহিনীর অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা, লেখক, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক । এরা বিভিন্ন দলের সুশীল শাখা হিসাবে সমাজে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব করেন।

বিগত শেখ হাসিনার আমলে এসব সুশীল সমাজের প্রেসক্রিপশন ধরে শেখ হাসিনা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ১/১১ এর সময়ের সুশীল সমাজ চেয়েছিলেন বড়ো দুইটি রাজনৈতিক দলকে মাইনাস করে উহারা সংস্কার পার্টি গঠন করবে। কিন্তু সেই প্রজেক্ট ফেইল করে। এসব সুশীলদের মধ্যে আবার শতকরা ৮০ ভাগ আওয়ামী লীগ পন্থী সুশীল। এরা মূলত আওয়ামী লীগের সুদিনে স্লিপার সেল হিসাবে ও আওয়ামী লীগের খারাপ সময়ে এরা একটিভ হয়। এবার জুলাই অভ্যুত্থানের সময় বিশেষত জুলাই আগস্ট মাসে অনেক আওয়ামী সুশীলস তাদের খোলস চেঞ্জ করে ছাত্র-জনতার পক্ষে চলে যায়। তারা ছাত্রদের সুরক্ষার জন্য আদালতে মামলা করে। ৫ই আগস্টের পর শেখ হাসিনা পলায়নের পর আওয়ামী সুশীলসরা ছাত্র-জনতার সাথে বিজয় উৎসব করে যদিও তাদের অন্তর পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছিল। সবার আগে সুশীলদের আসল মুখোশ ছেড়ে বের হয়েছিল পান্না সাহেব। এরপর বিভিন্ন টকশোতে রেগুলার অংশগ্রহণ করে ইনিয়ে বিনিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলেন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। সাংবাদিক মাসুদ কামাল তো আরো এক কাঠি উপরে। তিনি তো একমাসের মধ্যে ড. ইউনূসের সরকার কেন বাংলাদেশ কে বেহেশত বানাতে পারছে না তার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। এরকম হাজারো আওয়ামী সুশীলস রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ড. ইউনূসের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর ভুলত্রুটি মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খুজে বের করার জন্য মাঠে নামেন। তারা ইউটিউব চ্যানেল খুলে শুরু করে দেন আগেই তো ভালো ছিলো বলা লোকজনের সাক্ষাতকার নেয়া। এরা মূলত এমন একটি প্রেক্ষাপট তৈরি করতে চান মানুষকে ব্রেইন ওয়াশ করে যাতে আওয়ামী লীগ ফিরে আসলে মানুষের মনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার না হয়।

সুশীলদের মধ্যে এনজিওর কর্ণধার কিছু মানুষ এবার ড. ইউনূসের সরকারে জায়গা পেয়েছেন। এরা আবার সর্বসম্মতি ক্রমে সরকার গঠিত ৬টি সংস্কার কমিটির মধ্যে কিছু সুশীলকে নিয়োগ দিয়েছেন। উপদেষ্টা পরিষদের সুশীলস দের বেকগ্রাউন্ড চেক করলে দেখা যাবে এরা শেখ হাসিনার সময়ে সরকার থেকে অনেক প্রিভিলিজ পেত। সারাজীবন যাদের থেকে প্রিভিলিজ পেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে এখন অনেকের সংকোচ হয়। নাম ধরে ধরে বলা যাবে কারা বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেত, সুযোগ সুবিধা পেত। এরা যখন সরকারে গিয়েছে তাদের প্রধান দায়িত্ব হিসাবে আওয়ামী লীগ কে যতটুকু সম্ভব কম কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তার ব্যবস্থা করছেন। ঢিলেমি ভাবে ডিসিশন নিচ্ছেন এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলছেন।

সংকার কমিটিতে থাকা সুশীলেরা তো পারলে সংস্কার করে দেশকে ইউরোপ আমেরিকা বানায় ফেলতে চান। তাই এসব সংস্কার কমিটিতে বিদেশ নাগরিকত্ব পাওয়া বাংলাদেশি সুশীলেরা নিয়োগ পেয়েছেন। তারা সবাই মিলে এখন পর্যন্ত যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার মধ্যে আলোচিত হচ্ছে নির্বাচন বিষয়ক সংস্কার। আনুপাতিক হারে নির্বাচন, এমপি হওয়ার বয়স এগিয়ে আনা, ভোটার বয়স এগিয়ে আনা, সংসদে উচ্চ ও নিম্ন কক্ষ সৃষ্টি করা, প্রতি চারবছর পর নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমিয়ে ফেলা, সরাসরি ভোটের মাধ্যমে রাস্ট্রপতি নির্বাচন সহ আরো অনেক কিছু । কিন্তু উপদেষ্টা ও সংস্কার কমিটির বাইরে থাকা সুশীলেরা প্রশ্ন তুলেছেন এসব সংস্কার করে কি হবে যদি না দলগুলোর নিজেদের সংস্কার না হয়। অর্থাৎ পরিবারতন্ত্র থেকে কিভাবে রাজনৈতিক দলকে মুক্ত করা যায় তার সংস্কারও দরকার বলে মনে করেন সুশীল সমাজ। মজার ব্যাপার হইলো ক্ষমতায় থাকা সুশীলস ও বাইরে থাকা সুশীলেরা কেউ গণতান্ত্রিক কাঠামোতে বিভিন্ন মতাদর্শের দলের রাজনীতি করার ক্ষেত্রে কোন সংস্কার নিয়ে আলোচনা করছেন না। এত বিজ্ঞ ব্যক্তিদের চোখে এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিভাবে এড়িয়ে গেল তাই আচানক ব্যাপার। এখন উপরের সংস্কারগুলো পুরোপুরি সম্পন্ন হতে যে দীর্ঘদিন লাগবে এবং একটি অনির্বাচিত সরকার দেশ চালাবে তা নিয়ে সুশীলস'দের কোন মাথাব্যথা নাই। সুশীলস দের মধ্যে অনেকে আবার জঙ্গী বয়ান তৈরি করতে মাঠে নেমেছে যা ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত। নির্বাচন কমিশন সংস্কারে থাকা এক সুশীল তো বলেই ফেলেছেন " এমন সংস্কার করবো যে মানুষ আজীবন মনে রাখবে "। অর্থাৎ নানাভাবে সুশীলেরা মানুষের মধ্যে তাদের গার্বেজ মার্কা মতবাদ দিয়ে যাচ্ছেন। জনগণও ইন্টারনেট এমবি খরচ করে এসব সুশীলসদের নৃত্য দেখছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:১২
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিয়ে দেখতে দিন কে বাঘ কে বিড়াল?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬



সব দলের অংশগ্রহণে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিন। কোন দলকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে কি করেনি সেইটাও জাতিকে দেখতে দিন। পিআর পদ্ধতির জাতীয় সংসদের উচ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×