বাংলাদেশের শিক্ষিত প্রজন্ম রাজনীতির প্রতি বিমুখ কারণ তারা পল্টিবাজ রাজনীতিবিদ দের কার্যক্রম দেখে হতাশ। রাজনৈতিক ভাবে সুবিধা নেয়ার জন্য তারা নিজেদের অর্জিত সম্মান বিসর্জন দিতে কার্পণ্য করেন না। জুলাই অভ্যুত্থানের পর এমনই একজন রাজনীতিবিদের পল্টিবাজি নিয়ে আলোচনা চলছে সর্বত্র। বলছি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কথা ! উনাকে যদি গিরিগিটি নামক প্রানীর সাথে তুলনা করা হয় ভুল কিছুই হবে না। জুলাই অভ্যুত্থানের পূর্বে তিনি প্রকাশ্য অথবা গুপ্ত ভাবে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার প্রতি দরদ ছিলো। ইহাতে তেমন কোনো সমস্যা ছিলো না কারণ আওয়ামী লীগের একসময়কার গৌরবউজ্জ্বল ইতিহাসের কারণে প্রগতিশীল ও স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষ থাকা মানুষের মিলন মেলা ছিলো সেখানে। কালের বিবর্তনে এখন সে সব কিছুই অবশিষ্ট নেই। আওয়ামী লীগ এখন পুরোদস্তুর মাফিয়া সংগঠনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কাদের সিদ্দিকীর মতো মানুষ নষ্ট হয়ে গন্ধ বের হওয়া দলটির বিরুদ্ধে কখনো কঠোর অবস্থায় যেতে দেখা যায়নি। বরং তিনি আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার জন্য উহার জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলেন।
কাদের সিদ্দিকী অতীতকালে টাঙ্গাইলে এক স্কুলে বক্তব্য দেয়ার সময় বলেছিলেন তিনি জামায়াতের সাথে বেহেশতেও যেতে রাজি নন। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মানুষের বিপক্ষে দাড়িয়েছিলো মুক্তিযুদ্ধের সময়। একজন মুক্তিযোদ্ধার মুখ থেকে এমন কথা শোনাই সবার নিকট আকাঙ্খিত ছিলো। অভ্যুত্থানের পর কাদের সিদ্দিকী যেন ইউটার্ন মারলেন। যে আপার জন্য তিনি জীবন উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন বর্তমানে সে আপাকে তিনি বাংলাদেশ ধ্বংসকারী বলে আখ্যা দিয়েছেন। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় কাদের সিদ্দিকী জামায়াতে ইসলামীর প্রশংসা করে বেড়াচ্ছেন এবং তাদের ইফতার মাহফিলেও গিয়েছেন । যাদের সাথে বেহেশতে যাওয়া অসম্মানজনক মনে করতেন কাদের সিদ্দিকী তাদেরই আয়োজিত মিলাদ মাহফিলে গিয়ে কি তিনি সম্মানিত হলেন ?
এবার আসি জামায়াত প্রসঙ্গে, জান্নাতী দলটির বিরুদ্ধে বেশি কিছু লিখতে চাই না কারণ আল্লাহ যদি নারাজ হন ! আল্লাহ যদি আমার এক চোখ কানা, এক পা লুলা করে দেন তাই এই দলের বিরুদ্ধে লেখার সা্হস পাই না। অতীতের মতো জামায়াতে ইসলামী একই ভুল এবারো করে বেড়াচ্ছে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে বারবার তারা সঠিক উত্তর দিতে ভুল করছে। অনেকে ভেবেছিলো এবার জুলাই অভ্যুত্থানে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখার পর ইহারা নিজেদের সংশোধন করবে। যেই লাউ সেই কদু ! জান্নাতী দলটি অতীতের মতো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাদের অগ্রজদের মনোভাব ত্যাগ করতে পারে নাই। তারা একদিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কে ভারতের দান বলে দাবি করছে অন্যদিকে জুলাই অভ্যুত্থান কে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসাবে প্রতিষ্ঠার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের বিভিন্ন চ্যালাপেলা দাবী করেছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পুরোপুরি মুক্তি পায় নাই কিন্তু ২০২৪ সালে পেয়েছে। একাত্তরের বিপরীতে অভ্যুত্থান কে দাঁড় করিয়ে তারা সেই ঐতিহাসিক ভুলের পথেই ঘূর্ণিপাক খাচ্ছে।
নিজেদের অতীত কৃতকর্ম নিয়ে জামায়াত বরাবরই হিনমন্যতায় ভুগে। তাই তারা চেষ্টা করছে কিছু মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু পল্টিবাজ রাজনীতিবিদ দের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে নিজেদের আদি পাপ মোচনের। এরই ধারাবাহিকতায় তারা প্রথমে কর্ণেল ওলীর সাথে সখ্যতা করেছে। এক সময় ওলী সাহেব তীব্র জামায়াত বিরোধী লোক ছিলেন। বিএনপির সাথে জামায়াতের জোট কখনই ভালো চোখে দেখেন নাই তিনি। কিন্তু এখন তিনি পালটে গেছেন। উনার মুখে শোনা যায় জামায়াত নাকি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলো না। এবার দেখার পালা কাদের সিদ্দিকী সাহেব কি বলেন ! তাদের উদ্দেশ্যে তরুণ স্বাধীনতাকামী দের পক্ষ থেকে একটা কথাই বলতে চাই " মুরব্বিরা ভালো হয়ে যান "।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৫৩