
জুলাই অভ্যুত্থানের পর নির্বাচন ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি কম সমালোচনার শিকার হয় নি। বিএনপি শুরু থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে সমন্বয়ক দের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় । শেখ হাসিনার পতনের পর সবার আগে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবী জানায়। এতে সমন্বয়ক ও তাদের গুরুরা বিএনপিকে নিয়ে ট্রোল করা আরম্ভ করে। বিএনপি বিগত ১৬ বছর লুটপাট করে খেতে পারেনি তাই লুটপাটের জন্য দ্রুত নির্বাচন চায়। বিএনপি আম্লিক ও শেখ হাসিনার বিচারের জন্য আগ্রহী নয়। তাদের লজ্জা নেই। সমন্বয়ক গং বিএনপিকে আওয়ামী লীগের মতোই ফ্যাসিস্ট দল হিসাবে ট্যাগ দেয়। বিএনপির নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজি ও টেন্ডার বাজি করছে। ক্ষমতায় গিয়ে এগুলো যাতে ভালো ভাবে করতে পারে তার জন্য দ্রুত নির্বাচন চায়। এভাবে নানা ভাবে তারা বিএনপিকে অপমান করার চেষ্টা করেছে বা করে যাচ্ছে।
সংস্কার বাদে সমন্বয়ক গং বাংলাদেশে নির্বাচন হতে দিবে না বলে হুশিয়ারি দিচ্ছে। তাদের গুরুরা ইন্টেরিম সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার জন্য নানা ধরণের অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তারা নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করছে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়। প্রশাসনের সকল সুযোগ সুবিধা তারা পাচ্ছে। নতুন রাজনৈতিক দলের সরকারের সাথে এমন সখ্যতা নিয়ে সবার মধ্যে এক ধরণের বিরক্ত দেখা যাচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধা হয়েও তাদের কে সমালোচনা শুনতে হচ্ছে। কিন্তু ইন্টেরিম সরকার ও সমন্বয়ক গংয়ের এসব নিয়ে কোনো ভাবনা নেই। কচ্ছপ গতির সংস্কার ও নিজেদের দলকে সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী করা নিয়ে তারা ব্যস্ত।
ইন্টেরিম সরকারের সময় মিডিয়া স্বাধীন ভাবে কাজ করবে এমনটাই ভেবেছিলো সবাই। কিন্তু একজন সমন্বয়ক পরিকল্পিত ভাবে তথ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে সে সম্ভাবনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। পরিকল্পিত ভাবে নিজেদের লোকদের অপকর্ম গোপন করে কেবল বিএনপির অপকর্মের বিষয় গুলো মিডিয়াকে প্রচারের নির্দেশ দেয়। এদের সাথে যোগ দিয়েছে পলাতক স্বৈরাচারের দোসর মিডিয়া হাউজ । নিজেদের পেছন রক্ষা করতে তারা সরকারের সাথে হাত মেলায়। কিন্তু তাতেও বেশি সুবিধা করতে পারে নাই। বিএনপি তাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতা-কর্মী অপরাধের দায়ে বহিস্কার করেছে। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে নিজস্ব উদ্যোগে। অন্যদিকে যখন পাহাড় সমান অপকর্ম কেউ করতে থাকে তখন যতই তা গোপন রাখার চেষ্টা করা হবে কোনো লাভ হয় না এতে। সমন্বয়কদের ক্ষেত্রে ঠিক এমন ঘটনাই ঘটছে।
বিভিন্ন স্থানীয় নিউজ পোর্টাল গুলোতে সমন্বয়কদের অপকর্মের নিউজ হাল্কা করে প্রকাশিত হয়। মিডিয়ার উপর চাপ আছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু তৃতীয় মাত্রার জিল্লুর রহমানের সমন্বয়ক পরিচয়ে ঢাবির শিক্ষার্থীর টেন্ডার বাজি নিয়ে তথ্য প্রমাণ দেয়ার পর সবাই আগের চেয়ে সাহসী হয়ে উঠে। এরপর গ্রামে শহরে সালিশ ও বিচারে অর্থ চাওয়া, থানা থেকে ছাড়াতে অর্থ নেয়া সহ নানা অভিযোগ খবরের কাগজ গুলোতে প্রকাশ হয়। এতে শিক্ষার্থী সমাজ ও আম-জনতার মধ্যে সমন্বয়কদের নিয়ে অস্বস্তি বাড়তে থাকে।
জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের অধিকাংশ গ্রাজুয়েশন শেষ করে চাকুরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থী। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। অধিকাংশ শিক্ষার্থী টিউশন করে বা পার্ট টাইম কাজ করে নিজেদের হাত খরচ চালায়। তাদের চোখে অনেক স্বপ্ন আছে কিন্তু বাস্তবতা হলো সে সব স্বপ্ন পূরণের জন্য যে অর্থ দরকার তা তাদের কাছে নেই। দেশে কর্মসংস্থানের তীব্র সংকট চলছে। বিগত সরকারের আমলে ব্যাপক পরিমাণ দলীয় লোক সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো । জুলাই অভ্যুত্থানের পূর্বে নতুন করে কোটা পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত তাই শিক্ষার্থী সমাজ কে ক্ষুদ্ধ করে তোলে। তারা রাস্তায় নামে এবং শেখ হাসিনাকে প্লেনে করে ভারত পাঠিয়ে দেয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর সমন্বয়ক দের প্রতিনিধিরা যখন সরকারে যায় তখন শিক্ষার্থী সমাজ ভেবেছিলো এবার বুঝি বেকারদের ফেয়ার ভাবে নিয়োগ পাওয়ার পথ সুগম হলো। কিন্তু সমন্বয়করা গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর মতো ক্ষমতায় গিয়ে বেকারত্ব নিরসনের আশ্বাস দিচ্ছে। তারা এমন সব অদ্ভুত বিষয় নিয়ে রাজনীতি করছে যা তাদের যে শিক্ষার্থী ইমেজ তার সাথে যায় না। রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার কমিশনে সদস্য হতে পারে না কিন্তু তারা হয়েছিলো। এভাবে শিক্ষার্থী ইমেজ কাজে লাগিয়ে তারা রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
প্রশাসনের সাথে সমন্বয়কদের দহরম মহরম দেখে অনেকেই আশঙ্কা করছে এদের আমলারা নষ্ট করছে । ব্যবসায়ীদের সুযোগ সুবিধা দেয়ার বিনিময়ে তারা দামী গাড়ি ও লাক্সারি লাইফ লিড করার সুযোগ পাচ্ছে। অন্যদিকে তাদেরই সমবয়সী শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে দিন-রাত এক করে দিচ্ছে একটি চাকুরি লাভের আশায়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমন্বয়কদের লাইফ স্টাইল নিয়ে যখন ক্ষোভ বাড়ছে এমন সময় নিউজ এলো সমন্বয়কদের সুপারিশে মাস্টার রোল বা আউটসোর্সিং এর জন্য ওয়াসাতে লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বল্প সময়ের জন্য চুক্তিভিত্তিক অনেক লোক নিয়োগ দেয়া হয়। এসব নিয়োগ প্রক্রিয়া যে একেবারেই স্বচ্ছ হয় না তা ওপেন সিক্রেট। যেহেতু এক্ষেত্রে পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ হয় তাই কি পরিমাণ তদবীর বাণিজ্য হয় সহজেই অনুমেয়। বিগত সরকারের আমলে অসংখ্য লোককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে যারা দলীয় রাজনীতি করতো। তাই যখন সরকার পতন ঘটে এসব স্লিপার সেলরা তাদের চাকুরি স্থায়ী করার নামে আন্দোলন করে পরিবেশ- পরিস্থিতি জটিল করে তোলে। ভঙ্গুর রাষ্ট্রব্যবস্থায় তখন সমন্বয়করা তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেয়। চাকুরি প্রত্যাশীদের নিকট তাদের এই ভূমিকা ছিলো খুবই প্রশংসনীয়। কিন্তু খোদ সমন্বয়কদের সুপারিশে যখন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানে তা দেখে চাকুরি প্রত্যাশীরা হতাশ হয়ে পড়েছে । তাদের এই হতাশা তেমন গভীর হতো না যদি সারকুলার ও পরীক্ষা সময়মতো হতো। প্রশাসনিক জটিলতা ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে সব স্থগিত হয়ে পড়েছে। তাই সমন্বয়ক কতৃক একশত পঞ্চাশ জন কে আউটসোর্সিং ভিত্তিতে নিয়োগ দানের সংবাদে চাকুরি প্রত্যাশীদের মধ্যে সমন্বয়কদের প্রতি অনাস্থা ও অবিশ্বাস বাড়ছে। অনেকে বলছে শাসক দল কেবল পরিবর্তন হয়েছে সব কিছু চলছে আগের নিয়মে।
সমন্বয়কদের সুপারিশে এমন নিয়োগ তেমন বড়ো কোনো অপরাধ বলে গণ্য হতো না যদি না তারা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাতো মানুষ কে । সাধারণ মানুষ খুব ভালো করেই জানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা। সমন্বয়করা যখন নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চালু করার কথা বলেছিলো তখন সবাই অবশ্যই ঘুষ, দূর্নীতি ও তদবির-বাণিজ্য বিহীন সুন্দর সমাজ বিনির্মানের কথা ভেবেছিলো। কিন্তু নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলে পুরাতন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে ফেরত গেলে তাদের সমালোচনা হবে অন্য যে কারো থেকে বেশি। কারণ যে স্বপ্ন মানুষ তাদের নিয়ে দেখেছিলো তা নিজের চোখের সামনে ভঙ্গ হতে দেখলে খারাপই লাগবে বৈকি !

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



