
জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দেশি -বিদেশি চক্রান্ত শুরু হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে যে ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। বাংলাদেশে চরমপন্থী দের উত্থান হচ্ছে বলে দাবী করে আসছে ভারতীয় মিডিয়া। বাংলাদেশ নিয়ে নানামুখী ফন্দি ফিকির করছে ভারত। সরকার ভারতের এসব ডিজ-ইনফরমেশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। তবে সরকার অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় তেমন কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। একদল উত্তেজিত জনতার কার্যক্রমে শান্তিপ্রিয় মুসলিম দেশ হিসাবে বাংলাদেশের যে সুনাম ছিলো তা ক্ষুন্ন হয়েছে। কিন্তু এসব উত্তেজিত জনতার বিরুদ্ধে সরকার বলতে গেলে হুমকি দেয়া ছাড়া কোন একশন নেয় নি। এতে একই ঘটনা বারবার ঘটছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। পার্শবর্তী দেশ এসব ঘটনা রঙ চড়িয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রচার করছে যা বাংলাদেশের জন্য অশনিসংকেত। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে চরমপন্থী দলের জুজু মাঠে আনা হবে এই কথা সবাই জানতো। কিন্তু সরকার এর জুজু কে মোকাবেলায় কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয় নাই। দেশ ও বিদেশ থেকে চক্রান্ত করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে উগ্রবাদের উত্থান হচ্ছে এমন ভাষ্য তৈরিতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামা হয়েছে কিন্তু সরকারের পূর্বপ্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না । সাম্প্রতিক সময়ের কতকগুলো ঘটনা যদি আমরা বিশ্লেষণ করে দেখি :
মাজারে হামলা ও ওরশ শরীফ বন্ধ : জুলাই অভ্যুত্থানের পর মাজারে হামলা এবং ওরশ শরীফ বন্ধের ঘটনা ছিলো নিত্যদিনের ঘটনা। কিন্তু সরকার হামলা প্রতিরোধ করার জন্য কিছুই করেনি। সরকারের অজানা থাকার কথা নয় কারা এসব করছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় অনেক মাজারে অসামাজিক কার্যক্রম হয়। অনেক মাজার আছে যে গুলো 'লাল সালু' ছবিতে দেখানো টাইপের মাজার। এসব মাজারের বিরুদ্ধে সরকার চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারে। মব সৃষ্টি করে মাজার ভাঙতে গেলে প্রতিপক্ষের সাথে সংঘর্ষ অনিবার্য। বুঝ জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখেছি বাংলাদেশে কতিপয় গোয়েন্দা সংস্থা আছে। বিগত পনেরো বছরে এসব গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান কাজ ছিলো সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে বিরোধী মত কে দমন করা। ভিন্ন কাজে তারা এক্সপার্টিজ দেখাতে পারবে সেই আশা কেউ তেমন করেও না। সরকার গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্যে নিয়ে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে জনগণ কে রক্ষা করে। মাজার ভাঙা ও ওরশ শরীফ বন্ধ করা নিয়ে সংঘাত হতে পারে সরকার কে গোয়েন্দা সংস্থা এমন কোনো তথ্য দেয় নাই ? প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সহিংসতার আশঙ্কায় মাজার ও ওরশ শরীফ সাময়িক ভাবে স্থগিত করার উদ্যোগ দেখি নাই। তাহলে দেশে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে কি লাভ হলো ?
ধানমন্ডি বত্রিশ সহ অন্যান্য বাড়িঘর ভাঙা ও লুটপাট : গোয়েন্দা সংস্থার উচিত ছিলো দেশের অভ্যন্তরে কি কি অতৎপরতা চলছে তা সরকার কে অবহিত করা । বিদেশি রাষ্ট্রগুলো কিভাবে বাংলাদেশ কে অস্থিতিশীল করার সুযোগ খুজেছে তা নজরে রাখা । ফেব্রুয়ারী মাসের তেরো তারিখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমেরিকা সফর বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শক্ত এভিডেন্স জোগাড়ের উদ্দেশে ভারত চাচ্ছিল এমন কিছু ঘটুক যা তাদের জন্য পোয়াবারো হবে। সে উদ্দেশ্য নিয়ে ভারতের মদদে শেখ হাসিনা ৬ই ফেব্রুয়ারী ভাষণ দেয়ার ঘোষণা দেন। এতে দেশব্যাপী তীব্র ক্ষোভ দেখা যায়। কিন্তু অতি উৎসাহী কিছু লোক ধানমন্ডি বত্রিশ সহ অন্যান্য স্থাপনায় হামলা করে। ভারতের যা দরকার ছিলো তারা সেটা পেয়ে গেল। আমেরিকায় গিয়ে ট্রাম্প কে নরেন্দ্র মোদি সে সময়কার ঘটনা নিয়ে তার আশংকার কথা জানান। দেশের গোয়েন্দা সংস্থা কি বিষয় গুলো বুঝতে পারে ? ভারতের প্রতিটি কার্যক্রম এনলাইসিস করলে গোয়েন্দা সংস্থা অবশ্যই সরকার কে জানাতে পারতো ষড়যন্ত্রের বিষয়ে। কিন্তু তারা এমন কিছুই করে নাই।
তুলসী গ্যাবার্ডের ভারত ভ্রমণ : মার্চ মাসের সাত তারিখ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীর খেলাফত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে লংমার্চ করতে চায়। পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার হুশিয়ার দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয় নি। যদি বাংলাদেশে গোয়েন্দা সংস্থা নামে কোন সংগঠন জীবিত থাকতো তারা কি সরকার কে সতর্ক করতো না এই ব্যাপারে ? হিজুবত তাহরীর মাঠে নামারই সুযোগ পাওয়ার কথা না। সারা বিশ্ব দেখলো একদল লোক খেলাফত প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করছে যারা আবার যুক্তরাষ্ট্রের চোখে নিষিদ্ধ সংগঠন। তুলসী গ্যাবার্ড ভারত সফরে এসে বাংলাদেশে খেলাফত আন্দোলন নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছে । অর্থাৎ পূর্বের ন্যায় একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব পার্শবর্তী দেশ ভ্রমণে আসবেন এবং বাংলাদেশে উগ্রবাদ-খেলাফত নিয়ে কথা বলবেন তার জন্য প্লট তৈরি করে রাখা হয়েছিলো। গোয়েন্দা সংস্থা বরাবরের মতোই সরকার কে সাহায্য করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সিপিবির অফিস দখলের চেষ্টা : দেশে পরিকল্পনা করেই নানা ইস্যুর সৃষ্টি করা হয় যাতে সংঘাত ঘটে। দেশ জুড়ে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে মিছিলে বাম দলের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সেই মিছিলে বিতর্কিত গণজাগরণ মঞ্চের একজন নেত্রী লাকি আক্তারকে পরিকল্পিত ভাবে মাঠে নামানো হয় সরকার কে বেকায়দায় ফেলতে। এই ঘটনার বদলা নিতে ফ্রান্সে বসবাসরত একজন বুদ্ধি বেশ্যা তার চ্যালাপেলাদের আহবান জানায় সিপিবির অফিস দখল নেয়ার জন্য। এতে সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে তখন জাতিসংঘের মহাসচিব অবস্থান করছিলেন। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেলে বাংলাদেশের ইমেজের তীব্র সংকট দেখা দিতো। যাই হোক কোনো ভাবে সংঘাত এড়ানো সম্ভব হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার উচিত ছিলো লাকি আক্তারের ব্যাপারে আরো আগেই সরকার কে সতর্ক করা। এবারো তারা ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা সঠিকভাবে তথ্য প্রমাণ দিয়ে সরকার কে সাহায্য করছে না। তারা কি আগেই ভালো ছিলাম পক্ষের লোক নাকি ? অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তারা কারো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার শোকে মারা গিয়েছে । তাদের আত্নার মাগফিরাত কামনা করি !
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



