somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সামরিক জান্তার প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবসম্মত ?

০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ফেসবুক পোস্টে সম্প্রতি ব্রেকিং নিউজ— মিয়ানমার নাকি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার জনকে ফেরত নিতে প্রস্তুত! আরও ৭০ হাজার যাচাই-বাছাইয়ে আছে। যেন সাত বছর পর হঠাৎ বুদ্ধির উদয় হয়েছে, আর ভাবছে, "আহা, মানুষগুলোকে তো ফেরত নেওয়া দরকার ছিল!" কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে— কোন মিয়ানমার? সেই মিয়ানমার যেটা নিজেই এখন দেশের অর্ধেক অংশে নিজের ছায়াও দেখতে পায় না? নাকি সেই ‘ফেসবুক মিয়ানমার’ যেটার ঘোষণা শুনে ফাইল পড়ে ঢাকা থেকে উল্টোদিকে শীতলক্ষ্যার জলে ঢেউ ওঠে?

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এখন এমন এক সরকার, যারা নিজেই নিজেদের রাজ্য থেকে বিতাড়িত। রাখাইনের ৯০ শতাংশ এলাকাই এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি তাকালেই দেখা যায়, কোথায় তাদের দখল, কোথায় তাদের ক্ষমতা। অথচ বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক আশাবাদ— এই জান্তার কাছেই ফেরত পাঠানো হবে লাখ লাখ রোহিঙ্গা ! যে জান্তা ২০১৭ সালের চুক্তিও রাখতে পারেনি, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দূরে থাক, পরের মাসেই প্রতিশ্রুতি ভাঙা শুরু করেছিল— তাদের আজকের কথায় ভরসা রাখা মানে, কসাইয়ের আশ্বাসে ছাগল ঈদের দিন স্বস্তিতে থাকা।

সবচেয়ে বড় প্রশ্নটা হচ্ছে— রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ঘোষণাটা বাস্তবে দাঁড়ায় কোথায় ? যে জমি থেকে তারা বিতাড়িত, সেই জমিই তো জান্তার দখলে নেই। মংডু, বুথিডং, রাথিডং— সবই এখন আরাকান আর্মির হাতে। সেখানেই তো রোহিঙ্গাদের ঘর ছিল। এখন যদি জান্তা বলে, “আসো ভাই, ফেরত চলো”, জিজ্ঞেস করতে হয়— “কই যামু?” এই জবাবটা যদি “তুমি এসো, বাকিটা আমরা দেখব”— তাহলে এটা আর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নয়, এটা জাতিসংঘের নতুন থ্রিলার সিরিজের স্ক্রিপ্ট!

জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস পর্যন্ত এখন বলে যাচ্ছেন— রাখাইনে ‘হিউম্যানিটারিয়ান করিডোর’ বানান, নয়তো নিরাপদ অঞ্চল তৈরি করুন। কিন্তু সেজন্য দরকার আরাকান আর্মির সঙ্গে আলাপ। যাদের হাতে এখন ভৌগোলিক নিয়ন্ত্রণ, বাস্তবতাকে তাদের পাশ কাটিয়ে কূটনীতি করতে চাওয়া মানে হচ্ছে— ‘অন্ধকার ঘরে কালো বিড়াল খুঁজে বেড়ানো, যেটা নেই-ও না।’ বাংলাদেশ সরকারের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো, নিজের হাতে থাকা কার্ডগুলো চিনে তাস খেলা শুরু করা। অথচ আমরা এখনো ‘জান্তা’ নামক মরা ঘোড়ার ওপর বাজি ধরছি— যেখানে ঘোড়া মরলেও গাড়ি ছুটবে এমন ভাবনায় বিশ্বাস রাখতে চাচ্ছি।

আরাকান আর্মি হয়তো রোহিঙ্গাদের নিয়ে পূর্ণ সদিচ্ছা দেখায়নি, কিন্তু জান্তার মতো প্রতিশ্রুতি ভাঙার সিরিয়াল অপরাধীও হয়নি। বাস্তবতা বলছে, যদি সত্যিই প্রত্যাবাসন হয়, তাহলে এর পথ যাবে রাখাইন দিয়ে— আর রাখাইন মানে এখন আরাকান আর্মি। তাই যদি বাংলাদেশ এই ইস্যুতে সামান্যতম কৌশলও দেখাতে চায়, তাহলে কথাবার্তা, মধ্যস্থতা, এমনকি দরকষাকষির টেবিলও বদলাতে হবে। কিন্তু সে তো দূর অস্ত ! আমাদের কূটনীতি এখনো পুরনো খসড়ার নিচে নাক গুঁজে বসে আছে।

বাংলাদেশের কূটনীতি এখন একধরনের "আশার পাইলটিং"— মিয়ানমারের জান্তা হয়তো ফেরত নেবে, হয়তো ব্যবস্থা করবে, হয়তো রাখাইন ‘কনট্রোল’ করবে। অথচ ওরা এখন ‘বেওয়ারিশ বুলেট’ আর ‘পলাতক প্রতিশ্রুতি’র ধারে বাস করছে। এই বাস্তবতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন মিয়ানমারের জান্তার মাধ্যমে চাওয়া মানে, ‘অসম্ভবের পায়ে মাথা কুটে মরার নামান্তর’। যদি না বাংলাদেশ নিজেদের কার্ড খেলে, গল্পটা এখানেই শেষ হয়ে যাবে— কিছু কাগজে, কিছু ফেসবুক পোস্টে, আর কিছু আশাবাদের ভাষণে। বাস্তব জীবনেই তো কেউ ফেরে না কথার ফাঁদে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৫০
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশে এমপি হওয়ার মতো ১ জন মানুষও নেই

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৪



দলগুলোতে মানুষই নেই, আছে হনুমান।

আমেরিকায় যদি ট্রাম্প ক্ষমতায় না'আসতো, বাংলাদেশে হ্যাঁ/না ভোট দিয়ে ইউনুসকে দেশের প্রেসিডেন্ট করে, দেশ চালাতো প্রাক্তন মিলিটারী অফিসারেরা ও বর্তমান জামাতী অফিসারা মিলে। দুতাবাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মজনু নামাজ পড়ার পর মোনাজাত ধরল তো ধরলই, আর ছাড়তে চাইল না | পাক আর্মির বর্বরতা!!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৭



১৯৭১ সালে পাকিস্তানী আর্মি পুরো বাঙালী জাতির উপর যে নৃশংস হত্যাংজ্ঞ, বর্বরতা চালিয়েছে যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। সত্যি বলতে ১৯৭১ সালে বাঙালী জাতির উপর পাকিস্তানী আর্মি কর্তৃক... ...বাকিটুকু পড়ুন

সব দোষ শেখ হাসিনার !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৬


অনেকদিন পর zahid takes এর ডা. জাহেদুর রহমানের এনালাইসিস ভিডিও দেখলাম। জুলাই আন্দোলনের পূর্বে বিশেষত যখন র‍্যাব স্যাংশন খায় তখন থেকেই উনার ভিডিও দেখা আরম্ভ করি। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মাঈনউদ্দিন মইনুলকে ১৩ বছর পুর্তি উপলক্ষে অভিনন্দন।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৭



সামুর সুসময়ের আদর্শ ব্লগারদের মাঝে মাঈনউদ্দিন মইনুল হচ্ছেন একজন খুবই আধুনিক মনের ব্লগার; তিনি এখনো ব্লগে আছেন, পড়েন, কমেন্ট করেন, কম লেখেন। গত সপ্তাহে উনার ব্লগিং;এর ১৩ বছর পুর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিয়তির খেলায়: ইউনুস ও এনসিপিনামা

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৪



২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া আমেরিকান চলচ্চিত্র 'আনব্রোকেন' একটি সত্যি ঘটনার ওপর নির্মিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, আমেরিকান বোমারু বিমানের কিছু ক্রু একটি মিশন পরিচালনা করার সময় জাপানিজ যুদ্ধ বিমানের আঘাতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×