somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষমতা না জনতা ?

২৭ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্বাগতম ! আসুন, আমরা আমাদের জাতীয় বিমান সংস্থা 'বিমান'-এর নতুন নামকরণ করি: 'বিমান বাংলাদেশ: দ্য পলিটিক্যাল প্রেসার ক্যারিয়ার'। আমাদের বিমান এখন শুধু যাত্রী পরিবহন করে না, এটি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের দুটি পরাশক্তির বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং কূটনৈতিক চাপকেও বহন করছে। জনগণের টাকায় চলছে এই নাটক, আর আমরা সেই নাটকের দর্শক মাত্র।

গল্পের প্রথম অঙ্ক শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক বৈধতা কেনার পর্ব দিয়ে। ২০২৩ সালে যখন পুরোনো শাসককে পশ্চিমে 'গণতন্ত্রের সার্টিফিকেট' পেতে অসুবিধা হচ্ছিল, তখন ইউরোপের দিকে হাত বাড়ালেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের আগমন ঘটল, কিন্তু তিনি এলেন না দেশের গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াতে। তিনি এলেন এয়ারবাস A350-এর অফার নিয়ে। আমাদের বিশেষজ্ঞরা চিৎকার করে বলেছিলেন: এয়ারবাস কিনলে বিমানের বহর 'মিক্সড ফ্লিট' হয়ে যাবে, রক্ষণাবেক্ষণ জটিল হবে, আর সবচেয়ে বড় কথা—আমাদের এই অত্যাধুনিক বিমান চালানোর মতো 'টাইপ রেটেড' পাইলট নেই! কিন্তু গদির নিরাপত্তা যখন টলমলে, তখন পাইলট সংকট বা এয়ারবাসের ঐতিহাসিক দুর্নীতির রেকর্ড কোনো বিষয় নয়। ইউরোপের সমর্থন চাই, বিনিময়ে বিলিয়ন ডলারের লোকসান হাসিমুখে মেনে নেওয়া হলো। চুক্তিটা ছিল ক্ষমতা বাঁচানোর জন্য দেওয়া এক 'রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি'।

দ্বিতীয় অঙ্কের শুরুতে এল নতুন সরকার, কিন্তু পরিস্থিতি হলো আরও ভয়ংকর। আমেরিকা হাতে তুলে নিল ৩৫ শতাংশ ট্যারিফের বিশাল গদা। এই গদা থেকে বাঁচতে নতুন সরকার তড়িঘড়ি করে ইউরোপের প্রতিশ্রুতি ফেলে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিল। কেন? কারণ এই মুহূর্তে ট্যারিফ কমানোই ছিল দেশের জন্য সবচেয়ে বড় বাঁচা-মরার প্রশ্ন। এই সিদ্ধান্তের পেছনে বিমানের পাইলট সংকট (২৮টির মতো পদ খালি!), বিদ্যমান বিমানগুলো পুরোপুরি ব্যবহার না করতে পারার অক্ষমতা, কিংবা বোয়িংয়ের 737 MAX দুর্ঘটনার জঘন্য ইতিহাস—কোনো কিছুই বিবেচ্য ছিল না। বোয়িং কোম্পানির লবিং এবং ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর নীতি এখানে হাত মেলাল। জনগণ দেখল বিমান কেনা হচ্ছে, কিন্তু বুঝল না যে এটা আসলে আমেরিকান 'মুক্তিপণ' দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু নাটক এখানেই শেষ নয়। আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন বোয়িংয়ের দিকে ঝুঁকতে শুরু করল, তখন ইউরোপীয় খালারা ক্ষেপে গেলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ড. ইউনূসের সাথে দেখা করতে অস্বীকার করলেন। জার্মান রাষ্ট্রদূত স্পষ্ট বলে দিলেন: এয়ারবাস না কিনলে তোমাদের GSP Plus (শুল্কমুক্ত সুবিধা) এর আলোচনায় সমস্যা হবে। অর্থাৎ, আমেরিকা খুশি হলে ইউরোপ নারাজ। এটা কেবল বিমান কেনা নয়; এটা আমাদের পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ, অর্থনীতি এবং কূটনৈতিক সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন।

বিমান বাংলাদেশের বাণিজ্যিক স্বার্থ বা নিরাপত্তা (দুটি কোম্পানিরই নিজস্ব সমস্যা রয়েছে) এখানে গৌণ। মুখ্য হলো—কে ক্ষমতা ধরে রাখবে বা কার কাছ থেকে কতটুকু চাপ এড়ানো যাবে। পুরোনো সরকার চেয়েছিল ইউরোপের সমর্থন দিয়ে বাইডেনের 'গণতন্ত্রের চাপ' সামলাতে। নতুন সরকার চাইল বোয়িং কিনে ট্রাম্পের 'ট্যারিফের চাপ' এড়াতে। ফলাফল? জনগণ হলো উভয় সংকটের শিকার। এই সব বিলিয়ন ডলারের চাপ এবং কূটনৈতিক সমস্যার বোঝা—যা অন্তর্বর্তী সরকার সামলাতে না পেরে স্থগিত করে দিয়েছে—তা সুদে-আসলে বহন করতে হবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকেই। জনগণের টাকায় রাজনৈতিক চাপ সামলানোর এই কৌশলকে 'জাতীয় স্বার্থ' বলাটা এক দারুণ কৌতুক ছাড়া আর কিছু নয়।


মুল সংবাদ : https://www.itvbd.com/248235
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১:১৫
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×