somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গান-বাজনার চাইতে ভিক্ষাবৃত্তি করে উপার্জন করা বেশ লাভজনক !

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হেলাল মিয়া জন্ম থেকেই চোখে দেখতে পান না । উনার পরিবারের তেরো সদস্যের মধ্যে নয়জনের কন্ডিশন একই। প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে আর দশজন মানুষ যেসব কাজ করতে পারেন হেলাল মিয়া এবং তার পরিবারের সদস্যরা সেই কাজ করতে পারে না। আজ থেকে ৫০ বছর পূর্বে কোনো এক বাউলের নিকট থেকে গান-বাজনার বিদ্যা শিখেন হেলাল মিয়া। সেটাই হয়ে উঠে তার জীবিকার একমাত্র উপায়। তবে বাউল আবুল সরকারের বিরুদ্ধে যখন তৌহিদি জনতা মাঠে নামে তখন তাদের নেক নজর অন্ধ গায়ক হেলাল মিয়ার দিকেও পড়ে।

স্থানীয় কতিপয় মাদরাসার ছাত্র(হেফাজতে ইসলাম) তাদের প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে অন্ধ গায়ক হেলাল মিয়ার নিকট এসে গান-বাজনা বন্ধ করতে বলে। তারা গান-বাজনার যন্ত্রপাতি ভেঙে ফেলার হুমকি দেয়। এতে করে বিপদে পড়ে যায় হেলাল মিয়ার পরিবার। প্রায় ৫ দিন তাদের উপার্জন বন্ধ থাকার পর স্থানীয় বিএনপির এক নেতার সাহায্যে মাদরাসা ও হেফাজত নেতাদের সাথে আলোচনা করে হেলাল মিয়ার গান-বাজনার উপর অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। আজ থেকে আবার হেলাল মিয়া তার পরিবার সহকারে গান-বাজনা করে উপার্জন করতে শুরু করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় হেলাল মিয়া আর কতদিন গান-বাজনা করবেন?

দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫৪ বছর হতে চললো আর হেলাল মিয়া গান-বাজনা করছেন প্রায় ৫০ বছর ধরে। এর মাঝে কত সরকার প্রত্যক্ষ করলো জনগণ কিন্তু হেলাল মিয়ার কোনো পরিবর্তন নেই। গান-বাজনা করলে পেটে ভাত জুটে না হলে জুটে না। বিভিন্ন সরকার কত সামাজিক সুরক্ষার নামে নতুন নতুন প্রকল্প খুলে কিন্তু এই অন্ধ গায়কের জীবনের পরিবর্তন ঘটেনি। বিগত শেখ হাসিনার আমলে দুস্থ ও প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও সেগুলো আলোর মুখ দেখেনি। অনেকে ভাতা পেয়েছে তবে সেটা চাহিদার তুলনায় একেবারে অপ্রতুল।

হেলাল সাহেবকে মাদরাসার ছাত্ররা গান-বাজনা বন্ধ করে ভিক্ষা করতে বলেছে। আইডিয়াটা মন্দ নয়। হেলাল মিয়া এবং তার অন্ধ পরিবার ঢাকায় এসে বস্তিতে রুম ভাড়া নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করতে পারে। ঢাকায় আমরা প্রায়শই দেখি কতিপয় অন্ধ হুজুর একসাথে হাটছেন আর গান করছেন। অভিনব উপায়ে সুললিত কন্ঠস্বরে মানুষের কাছে ভিক্ষা চাচ্ছেন। । দৈনিক ৫০০/৬০০ টাকা অনায়েসে আয় করা সম্ভব। আবার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্পটে ভাগ হয়ে ভিক্ষা করলে ডেইলি ১৫০০ থেকে ২০০০ ইনকাম সম্ভব। যখন ঢাকার মিরপুরে আমাদের টিনশেড বাড়ি ছিলো তখন বাসায় একজন ভিক্ষুককে রুম ভাড়া দিয়েছিলাম। ভিক্ষুকের বউ খুব সুন্দরী তবে বিনা খাটুনিতে পয়সা ইনকামের লোভে মাঝ বয়সী পঙ্গু লোকের সাথে ঘর বেধেছে। বাসায় সুন্দর কাপড় পড়তো তবে ভিক্ষা করার সময় মহিলা ছেঁড়া শাড়ি পড়ে জামাইকে ছোট ঠেলাগাড়ীর মধ্যে ঠেলে ঠেলে সারাদিন ভিক্ষা করতো। এই পরিবারকে ভাড়া দিয়ে আমি অবশ্য পরিবারের নিকট প্রচুর গালমন্দ খেয়েছিলাম।

ভিক্ষুক পরিবারটিকে আমি গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলাম। প্রতিদিন তাদের ৮০০/৯০০ টাকা আয় হতো। সকাল- দুপুর-সন্ধ্যা-রাত চারবেলা খেতে পারতো তারা। পরোটা, বট, মোঘলাই পরোটা সবসময় চলতো তাদের বাসায়। বাসার অন্যান্য ভাড়াটিয়া ছিলো গার্মেন্টস শ্রমিক কিংবা ড্রাইভার। তারা ভিক্ষুক পরিবারের লাইফ স্টাইল দেখে বিস্মিত হতো। ভিক্ষুক লোকটির কাছ থেকে মানুষ চড়া সুদে ধার দেনা করতো। মানে পুরোদস্তুর আয়েশী জীবন যাপন করেছে তারা। পরে অবশ্য ভিক্ষুকের ২০ হাজার টাকা নিয়ে তার বউ বয়ফ্রেন্ড সহকারে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় ; ভিক্ষুক রুম ছেড়ে দেয়।

ঢাকায় গিয়ে হেলাল সাহেবের পরিবার একই কাজ করতে পারেন। তিনি ৫০ বছর গান করে কিছুই করতে পারেন নি। বাংলাদেশ সরকার তার পরিবারকে কোন সাহায্য করবে না। তাই নিজের জীবন যেমন দারিদ্র্যতায় কেটেছে নেক্সট জেনারেশন যাতে একটু ভালো জীবন পায়, ভালোভাবে খেতে পারে সেই ব্যবস্থা করা উচিত। মাদরাসার ছাত্ররা বুদ্ধিটা খারাপ দেয় নি। ইসলামে গান-বাজনা করে উপার্জন করার চাইতে ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে উপার্জন করা উত্তম।


সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৭
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×