somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিন্দার- নরকে

২০ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নিন্দার- নরকে
*************
পর্ব---১
********
হেন্না,একজন বৃটিশ বাংলাদেশী নারী।যদিও মা বাবা আদর করে নাম রেখেছিলো পরম স্নিগ্ধতা,আবীর মাখা সুরভি আর মোহনীয় শুভাশীষ ফুলের মুগ্ধতায়।

ইংল্যান্ডের ঠান্ডা আর শুষ্ক পরিবেশে সুন্দর করে মানিয়ে নিতে ভালোবাসার বাগানে পুস্প মঞ্জুরীর সঞ্জীবনী সুধা দিতে বাবা মা সযত্নে হরেক রকম ফুলের নামে মেয়েদের নাম রাখেন নিজেদের আকাংখার প্রতিফলন হিসাবে।

সে হিসাবে পরিবারের বড় মেয়ের নাম রাখেন-
'হ্যাঁ' হাসনাহেনা তার আসল নাম।

কিন্ত নামের সাথে যদি বাংগালীয়ানা থাকে তাইলে তো পুরো পৃথিবীর সবাই ভাববে গোঁয়ো তাই নামটা মর্ডানাইজ হয়ে রুপান্তরিত হয়ে গেলো হেন্না'। মনে যখন লালন করে বাহুল্যপূর্ণ ভাবনা, নামটা যত ছোট ততই সুমিষ্ট তাই নাম বদলে নেই কোন কার্পন্য।
"নেই কোন বিবর্তনের দায়"!!
কে নামটা কি কারণে?কি মোহাচ্ছন্ন মোহে রেখেছিল তা শুনার কি কোমলপ্রাণ আছে!

আসল নামের সক্রিয়তা আর সৌরভ তুষারপাতে ঢাকা পড়লো আধুনিক প্রগতিশীল সমাজকে তুষ্ট করতে। শুধু সে না তার আরো ছয়বোন সবার নাম যেমন,জেসমিন হয়ে গেলো জেস,
চামেলী হয়ে গেলো লী,জারুল হয়ে গেলো জারা, পারুল হয়ে গেলো পুরু,শিমুল হয়ে ওঠে শীম্মু ভিজেমাটি পছন্দ বলে বর্ষায়ই দেখা দেয় দোলনচাঁপা৷ গাছের আগায় এদের ফোটে থাকে প্রজাপতি গড়নের সুগন্ধি সাদা ফুলের থোকা আর ছোট মেয়েটাকে দোঁলনচাপার সাথে সাদৃশ্য দেখে বাবামায়ের আদরের দেয়া নাম হারিয়ে হয়ে যায় দোলা। সে নৃত্য দোলা দেয় প্রেমিক হৃদয়ে।
এভাবেই সকলের নাম মডিফাই হয়ে গেলো যে আপন বোনই তার বোনের আসল নাম ভুলতে বসেছে।

নিজেকে একজন পুরুদস্তর বৃটিশ নারী ভাবতেই হেন্নার ভালো লাগে।যদিও পঞ্চাশের দশকে তার পুর্বপরুষরা বাংলাদেশ থেকে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে এদেশে এসেছে। বৃটিশ হিসাবে এটা তাদের থ্রার্ড জেনারেশন।
সেই কবে দাদা জাহাজে এসে এদেশে ঘর বেঁধেছেন।
বাবা এসেছেন তার বয়স যখন ছয় কি সাত ছিলো।
আর হেন্না ও তার অন্য ছয় বোন সবার জন্ম ও পড়ালেখা এদেশে।বৃটিশ সোসাইটির তথা মুল ধরার লোক হিসাবে তাদের চলাফেরা আচার আচরণ।
পরিবারের দু একজন,দুর সম্পর্কের দাদা-দাদী ও আত্মীয় ছাড়া কারো সাথে বাংলা কথা বলতে পারে না। কষ্ট হয় বাংলা কথা বলতে। পুরো বাংলা লাইন আবার বুঝে না।
এরমধ্যে আবার তার কাছে বাংলা ভাষা দু প্রকার একটা সিলেটি বাংলা আরেকটা ঢাকাইয়া বাংলা।

হেন্নার মাইন্ডসেট এরকম যে,

সিলেটি বাংলা তো যাহোক দু চার কথা বলতে ও বুঝতে পারি
'কিন্ত'
ঢাকাইয়া বাংলা শুনলে কানে দু'হাত চেপে ধরে,না শুনে বরং সীসা ঢেলে দেয়াই ভালো।
----ওটা কোন ভাষা নাকি?
"কেমন জানি কর্কশভাবে টানিয়ে টানিয়ে কথা বলে"!!কথা নয় মনে হয় যেন ঝগড়া চলছে। ।
সিলেটি ভাষাও তাই, কোন রস নেই, বড্ড কঠিন আর ফ্যাকাশে।
---বড় অদ্ভুত মনে হয় এই বাংগালী মানুষ ও ভাষাটাকে!
--সবগুলো মানুষ গে্ঁয়ো আর স্মার্টনেসের কোন কিছুই ওদের কাছে দেখতে পাই না।
- বড়ই আজব এই বাংগালীরা--
-"এরা মনে হয় মানুষ নয়"
---মঙ্গল গ্রহের কোন প্রাণী অথবা "এলিয়েন "
--এদেরকে ফ্রেশী ( Freshi) বলেই গালি দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হয়।
উল্লেখ্য যে,বর্তমান সময়ে বৃটিশ বাংগালী প্রায় সব ছেলেমেয়েরা বাংলাদেশী লোক যারা এদেশে জন্ম নয় তাদেরকে ফ্রেশী বলে ডাকে যার সারমর্ম হলো অজপাড়াগায়ের লোক, যারা বৃটিশ বাংগালী সমাজের জন্যে মানানসই নয়।
তাই তাদেরকে Backdated or underestimated করে ফ্রেশী হিসাবে অভিহিত করা হয়।
এসব ধারণা থেকে এখনকার অধিকাংশ বৃটিশ বাঙালি ছেলেমেয়েদের বাঙালি সংস্কৃতির সাথে মেলামেশা নেই এবং এই বাঙালীদের সাথে তারা বিবাহিত জীবন সাজাতে চায় না। এদের মধ্যে অনেকেই বাংগালীদের বিয়ের কথা শুনলে নাক,মুখ ভেঁচকি দিয়ে যেন এখুনি বমি করে দিবে এমন অসংযত আচরণ করে যা শিষ্টতারের সীমালঙ্ঘন বললেও ভুল হবে।
এদের অনেকেই আবার কালো বা নিগ্রো ছেলে মেয়ের সাথে দহরম-মহরম করাকে প্রেস্টিজ হিসাবে মনে করে, প্রয়োজনে কালো কি বিয়ে করবো তবুও ফ্রেশী বাঙালিদের নয়।

হেন্নার ২০০৯ সালে ইষ্ট লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে 'ল' উইথ ক্রিমিনোলজি নয়ে মাষ্টার্স শেষ করে। বৃটেনে ডিগ্রি শেষ করে মাষ্টার্স পর্যন্ত লেখাপড়া করতে একজন লোকের আনুমানিক সতাশ বছর হয়ে যায়। কাজ শেষে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্নে আর বাড়তি হিসাবে পরিবারের সবার বড় হওয়াতে তার কাঁধে ভাই বোনদের দেখাশুনার গুরু দায়দায়িত্ব এসে বর্তায়। হেন্না পড়াশোনার শেষ করার পর একটি সরকারি সংস্থায় বাঙালি "এথনিসিটির ভিকটিম সাপোর্ট" হিসাবে এডভোকেসির একটা কাজ পায়।
সেখানে প্রতিনিয়ত তাকে হজম করতে হতে হয় ট্রিপিক্যাল বাঙালীদের প্রত্যাহিক জীবনের শত অনাচার আর অবিচারের কাহিনীর জীবন্ত সাক্ষী।
সতীনের সংসার বলতে কথাটার সাথে হেন্না কোন কালেই পরিচিত ছিলো না। এখন প্রতিদিন এই রকম অভিযোগ আসে,স্বামী দেশে গিয়ে বলে প্রথম বউয়ের সাথে ছাড়াছাড়ি বা বউ নেই এরকম হাজারো মিথ্যা কথা বলে নতুন আরেকটি বিয়ে করে চলে আসে।স্বামীর নতুন বিয়ে পুরানো স্ত্রী সহজাতভাবেই মেনে নিতে পারে না,ফলে শুরু হয় মারামারি আর বাচ্চাদের দায়িত্ব নিয়ে টানাপোড়েন যা স্বভাবতই চলে কোর্টে মামালা।
প্রতিদিন সে ভাবতে থাকে আজ নতুন কি শুনবো, কিসের মামলা হবে,কখনো মানিব্যাগ থেকে টাকা চুরি,কখনো দেশে টাকা পাঠানো নিয়ে স্বামী স্ত্রীর ঝগড়া, হাতাহাতি, মারাত্মক বা আহত হয়ে হাসপাতাল ফলশ্রুতিতে মামলা।

হেন্নার, সাথে তার একমাত্র বৃটিশ বাংলাদেশী কলিগ, রোজী বেগম।
হেন্না,প্রথম প্রথম Rose বলে ডাকতে শুরু করলো রোজী জানিয়ে দেয় সে তার আসল নামেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে অন্য কোন নামে না ডাকলে সে খুশী হবে।
হেন্না যেখানে অন্যান্য হোয়াইট কলিগদের মতো সর্ট স্কাট আর সুন্দর, সুগঠিত, মাংসালো দুটি যার মোহনীয়তা দেখলে কামুক দ্রোহ ছড়িয়ে পড়বে। ।তার ভিন্ন উদ্দেশ্য হলো চলনে বলনে, পোশাকে ইংলিশ স্টাইল আর বিদেশী মেম ভাব নিয়ে চলাফেরা করা।
তাদের ব্যাতিক্রম রোজীনা বেগম,সে লম্বা কোটের সাথে হিজাব পরিহিত অবস্থা পারিশালিন পোশাকে প্রতিনিয়ত কাজে যাতায়াত করে।


হেন্না, যখনি রোজীর সাথে বাঙালিদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে গল্প জুড়ে, তখনিই রোজী বেশ অপমানিত বোধ করে।
-সে বলে হাজার হোক আমাদের রক্ত বাঙালি তো।
--আমাদের রুট হলো বাংগালী,যেখান থেকে আজকের বৃটিশ আমরা সকলে ---
--বাংগালীদেরকে কেন ইংলিশদের সামনে ছোট করে তুলো?

"হেন্না" তার বান্ধবী রোজীর কথা শুনে মুচকি হাসে আর বলে--
---তুই তো বাঙালিদের পক্ষ নিবেই।
--- নো অউনডার, বিকজ ইউ হেভ মেরিড এ ফ্রেশী ---
--- হাউ ডিড ইউ গেট অন উইথ এ ফ্রেশী?
- আই কান্ট স্ট্যান্ড উইথ এ ফ্রেশী ইভেন এ সেকেন্ড?
-- ইউ বিকাম এ ফ্রেশী টু ম্যান--- লুল

রোজী এসব কথাশুনে চুপ থাকে, সে ভাবে এই মেয়ের মাথায় দোষ আছে,
নিজের দেশের লোকজন।
নিজের সত্তাকে কি ম্যানটাল ছাড়া কেউ অস্বীকার করে?
-এই মেয়ের কপালে দূর্গতি আছে আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি---

'যে তার রুটকে অস্বীকার করে,অহমিকায়,বিবেক রুদ্ধ হয়ে অন্ধ সেজে আছে!!
"সে আদৌ কি যুক্তিক,সুশিক্ষিত মানুষ"
-- কি এমন আহামরি তোমার আছে যে নিজেকে নিয়ে গর্ব করো?
"গর্ব করার জন্যে সেই রকম মহামৃল্যবান রত্ন দুস্পাপ্য তা থাকতে হয়" ধন সম্পদ ও বিলাসী জীবন গর্বের নয় তা সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে রাতের আধারে বিলুপ্ত হয়ে যাবে যদি তাতে আলো'র বিস্ফোরণ না থাকে।---
---তার মাঝে কি কোন নৈতিকতাবোধ, পারিবারিক শিক্ষা আছে?
--সে যে পিতামাতার গর্ভ থেকে এসেছে তারাও তো বাঙালি!!---
তাই বাঙালীদের অপমান মানে তো নিজের পিতামাতাকে অপমান।
তোমার নিজস্বতা বলতে যদি কিছুই না থাকে তাহলে তুমিই একদিন এর ফল ভোগ করতে হবে।
যখন বুঝবে আসলে এই সাময়িক বড়াই ধ্বংস ছাড়া কিছুই নয় তখন হয়তো খুব দেরি হয়ে যাবে।
ভেসে যাবে সাগরের অতল গহীন,কেঁদে কেঁপে আর তীরের দেখা মিলবে না।

-------------------(চলবে)------------------



সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৫৮
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×