নোনা গন্ধ আমার চারপাশে, কি এক রক্তিম আভা, ঘোলাটে আলো - আর কি জানি এক ক্লান্তিহীন ধুক....ধুক.....ধুক শব্দ অনবরত বেজেই চলছে।
এখন আর নিজেকে বন্দী মনে হচ্ছে না। আছি তো খুব ভালো। ঐ যে, তেড়ে আসা নেকড়েগুলো ক্ষানিকবাদেই মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবে। ভাবতে ভালোই লাগে। খুব যন্ত্রণা দেয় এগুলো। আমার খুনসুটি করার সাথীগুলো এদেরকে কয়েকগুন বেশী যন্ত্রণা দিয়ে নিঃশেষ করে দেয়। খুব মায়া হতো একটা সময়। কিন্তু নিবিড় আলিঙ্গনে যখনই এদেরকে বরণ করে নিই, জানোয়ারের মতো এদের হিংস্র দাঁতগুলো দেখে শিউড়ে উঠি। নাহ্, খুব ভালো আছি।
এতোটা ব্যস্ততার মধ্যেও আমার বন্ধুরা 'আমি' বলতে অজ্ঞান। তাদের ধ্যান জ্ঞান সত্ত্বা জুড়ে কেবলি আমি। মাঝে মাঝে ঐ অনবরত বাজতে থাকা ধুকধুকানি অসহ্য মনে হতো। মুঠো পাকানো হাত দিয়ে চরম যন্ত্রণায় ঐ বুড়িটার টুঁটিঁ চেপে ধরতে ইচ্ছে করতো। জানি না, কি ছটফট করতাম তখন। পরম মমতার কোনো অদৃশ্য হাত আমার ব্যুহ দেয়াল ভেদ করে আমায় শান্ত করত। এখনো মাঝে মাঝে ঐ অস্থিরতার ভান করি, অন্তত ঐ মমতাটা পাবার আশায়।
তবে কেন এবং কিভাবে জানি না, বুড়িটাই আমার সবচাইতে ভালো বন্ধুতে পরিণত হলো একটা সময়। চারিদিকে যখন অদ্ভুত রকমের নিরবতা বিরাজ করতো, বুড়ি তখন আমাকে ওপারের অদ্ভুত গল্প শোনাতো - এক বিশাল জগতের গল্প, যেখানে শত-সহস্র আমাকেই খুঁজে পাবো আমি, যেখানে হেসে-খেলে-গেয়ে ছুটতে পারবো অবারিত, পরম মমতার তাঁকে খুঁজে পাবো - যেখানে গুটিসুটি মেরে আর নাকি এইরকম মুঠি পাকিয়ে বসে থাকতে হবে না - যেখানে পাবো হারিয়ে যাওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা, ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার এক অপূর্ব পরিবেশ - বুড়ি গল্প বলে, কিন্তু তার ধুকধুকানি কমে না একটুও। আমি জিজ্ঞেস করি,
''তুমি একটু জিরিয়ে নাও না কেন?''
একটু হেসে বুড়ি বলে,
''আরে বোকা, একটু জিরোলে তো তোমার ঐ পরম মমতার তাঁকে আর কখনোই খুঁজে পাবে না।''
কিছু না বুঝেই মাথা নাড়ি আমি।