somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আরফার
এই অংশটা নিজের জন্য না রেখে বরং অন্য সবার জন্য রাখা উচিৎ ছিলো। সবাই আমার ব্যাপারে ভালো-খারাপ সব কিছুই বলবে- ঐ রকম হলে ভালো হতো। কারন পৃথিবীর মধ্যে শক্ত এবং দূরূহ কাজগুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে নিজের সম্পর্কে বলা। কারন এমনিতেই আমার সামনে কেউ আমার প্রশংসা করলে আ

নিঃশব্দ আর্তনাদ

১১ ই অক্টোবর, ২০১০ ভোর ৫:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
নিঃশব্দ আর্তনাদ



(১)

চোখ দুটো ভীষণ জ্বালা করছে অয়নের। দোদুল্যমান নৌকার সাথে তাল মিলিয়ে পৃথিবীটাও মনে হচ্ছে এক দুর্বার গতিতে দুলছে। শক্ত হাতে নৌকার গলুইয়ের উপর যে কতক্ষন সে বসে আছে তা মনে করতে পারছে না সে। ছাউনির ভেতর থেকে শোনা যাচ্ছে রাকিব ভাইয়ের দরদী কন্ঠের টান -
''নাচো গো নাচো কালী, নাচো গো
আমার ই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো, নাচো গো...''


প্রথম পর্বের গঞ্জিকাসেবন পর্ব শেষ করলো তারা। উদাসী দৃষ্টিতে অয়ন তাকিয়ে আছে বিলের টলমল রূপালী পানির দিকে; ভয়ঙ্কর সুন্দর, যেন গ্রাস করবে এখনই। হাতছানি দিয়ে ডাকছে যেন। পিটপিট করে ঘড়ির দিকে তাকালো অয়ন। রাত এগারটা। ঘুরেফিরে বারবার বিকেলের কথাই মনে হচ্ছে তার। আকস্মিক সুন্দর কি বলা যায়? সুন্দর হলে তবে তীর কেনই বা বুকে এসে বিধঁবে? অমন দৃশ্যের মুখোমুখী কেনই বা সে হলো? ভাবে অয়ন। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে যেন মাথার কোথাও। লিকলিকিয়ে ওঠা হিংস্র স্মৃতিদেহ ক্রমাগত তাড়া করে ফিরে তাকে। শুধুই। নৌকার তলদেশে আছড়ে পড়া ঢেউ যেন কোন অশরীরি হিংস্র থাবা। হঠাৎ রাকিব ভাইয়ের উদ্ধত কন্ঠ। হাঁক ছেড়ে ডাকে সে।
- ঐ ব্যাটা, ভিত্‌রে আয়। এইবার চল্‌বো নিমাই। যন্ত্রণা সব ভুইলা যাবি। আয়।

ছাউনির একপাশ হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে ভিতরে এসে বসে অয়ন। একাগ্র চিত্তে রাকিব ভাইয়ের একাগ্রতার নমুনা দেখছে সে। পরম যত্নে প্রতিটা সিগারেট কে তামাক ভরমুক্ত করা, পাশে রাখা কাগজের টুকরার উপর ঝুরঝুরে তামাকের নিবিষ্ট সন্নিবেশ করা, মুড়িয়ে রাখা কোনো কাগজের অভ্যন্তরীন জিনসটাকে কাঁচি দিয়ে কেটে টুকরা টুকরা করা, নির্দিষ্ট অনুপাতের সংমিশ্রণ, তারপর আবার নিবিড়ভাবে ফাঁপা ঐ সিগারেটের খোলের ভেতর ঢুকানো - প্রতিটা কাজেই লোকটার কি নিবিষ্ট মনোযোগ। ভাবে অয়ন। সে-ও তো মনোযোগীই ছিল সব ব্যাপারেই; সুন্দর ভবিষ্যতের আল্পনা এঁকে রেখেছিল মনের দৃশ্যপটে। নাহ্, এই নগ্ন প্রতারনার কোনো মানেই হয় না। কপালের শিরা গুলো দপ দপ করছে তার।
- নে, ধরা। বলে একটা স্টিক অয়নের দিকে বাড়িয়ে দিল রাকিব ভাই। মনে থাকে যেন্, নিমাই চল্‌বো কিন্তুক, নিমাই।

নিমাই পর্ব শেষ করে কিছুক্ষন ঝিম মেরে বসে রইল দুজনই। এটাকেই কি ভরমুক্ত বলে? ভাবে অয়ন। মনে হচ্ছে, অসংখ্য সে - একটার পর একটা যেন ঠিকরে বের হয়ে যাচ্ছে ভেতর থেকে। নিজেকে এক স্তুপ বালুর মতো মনে হচ্ছে তার। ঝরঝর করে ঝরে পড়ছে বালুকণা তার দেহ থেকে। শুধুমাত্র ঐ প্রতারিত আত্মাটাই বাকি পড়ে আছে এই নৌকার ছাউনির ভেতর - এই রাত দুপুরে।

টলতে টলতে অয়ন নৌকার ছাউনির উপড় উঠে বসে। অথৈ সমুদ্রের মাঝে সে? জায়গাটা চিনতে তার খুব অসুবিধা হয় হঠাৎ। দূর, ঐ দূরে ছিটেফোঁটা আলোর নিশাণ দেখা যাচ্ছে। তাহলে অথৈ দরিয়ার মাঝে নয় সে, হয়তো কোন নদী কিংবা বিলের পানিতে ভাসছে সে - কিছুটা স্বস্তি পায় অয়ন। শুয়ে পড়ে সে ছাউনির উপর।

উপরের আকাশটাকে বেজায় হাস্যোজ্জ্বল দেখাচ্ছে আজ। তারার ডালি সাজিয়ে বসে আছে যেন - মধ্যমণি ঐ চাঁদ। নিচ থেকে আবার ভেসে আসে রাকিব ভাইয়ের গলা-
''আমি একটা জিন্দা লাশ,
কাটিস না রে জংলার বাঁশ,
আমার লাইগা সারে তিন হাত কবর খুঁড়িস না....
আমি পিরিতের অনলের পোড়া
মরার পরে আমায় পুড়িস না;
তোরা মরার পরে আমায় পুড়িস না...''


ডুকরে কেঁদে উঠে অয়ন। সামনে ভেসে উঠে সারা-র নিস্পাপ মুখ। ঐ কচি মুখ দু হাতে আকড়ে ধরে কতোই না তারা বলেছিল তাদের স্বপ্নের কথা। কোমল দুটি হাত ধরে কতোই না বুনেছিল আশা, কতো পরিকল্পনা। শান্ত, নিরব আখিঁপটে এক বিশাল সমুদ্রের দৃশ্যপট অঙ্কন করতো প্রতিনিয়তই। সব কিছুই হঠাৎ খুবই অর্থহীন মনে হতে থাকে অয়নের। প্রতারণার সূক্ষ্ম আঁচটা আগেই ধরা উচিৎ ছিল তার। প্রতারণাই যদি হবে তাহলে এত স্বপ্ন বোনা কিসের, কিসের এত মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া - ভেবে পায় না অয়ন।

উপরের ঐ আকাশের মতোই তো আজ হাস্যোজ্জ্বল ছিল সে। সারাটাদিনই তো টুটুলের সাথে এখানে ওখানে ঘুরেছে। সারাকে একটা সারপ্রাইজ ও দিতে চেয়েছে - তার ভালো একটা চাকরি হাওয়ার খবরটা দিয়ে। হুট করেই তাদের সামনে চলে আসে গাড়িটা। ভেতর থেকে বের হয়ে আসে থলথলে শরীরের এক বুড়া, তার সাথে আবার ২১-২২ বছরের এক তরুণী - খিলখিলিয়ে ক্রমাগত হাসতে থাকা বুড়ার হাত আবার সোজা তরুণীর কোমরে প্যাঁচানো। শিঁস দেবার মতো শব্দ করে টুটুল সাথে সাথেই অয়নকে ডেকে বলে,
- দোস্ত, কর্পোরেট মাগি দ্যাখ, কর্পোরেট মাগি।

মেয়েটাকে চিনতে অয়নের একদমই কষ্ট হয় না। এ তো তার সারাই ছিল, যে তাকে বলেছিল ভালোবাসার কথা। এতটুকু খুঁত তো ছিল না তার নিজের ভালোবাসাতেও। আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন হতে শুরু করল হঠাৎ। তার সাথে একাগ্রতা প্রকাশ করতেই কি হাস্যোজ্জ্বল আকাশের অমন কান্নার প্রস্তুতি? আনমনে ভাবতে ভাবতে অয়ন ডুবে যায় কোন এক অদ্ভুত জগতে, জরাজীর্ণতার ঠাঁই নেই যেখানে একদম-ই। মাথায় বাজতে থাকে কোন অতিপরিচিত গানের কথা, ধরতে পারে না অয়ন কিন্তু ঢুকে যায় সে ক্রমান্বয়ে..
...My head grew heavy, and my sight grew dim
I had to stop for the night
There she stood in the doorway
I heard the mission bell
And I was thinking to myself
This could be Heaven or this could be Hell
Then she lit up a candle
And she showed me the way
There were voices down the corridor
I thought I heard them say..
.


(২)

রাত দুটা বাজার টিক টিক শব্দ কানে এলো সারার। বাইরে বৃষ্টিতে যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ছে।

আজ অয়নকেই দেখল না তো সে? বিকেল থেকেই এই চিন্তাটা মাথায় ঘুরাঘুরি করেই যাচ্ছে। ভালো একটা পার্টি পাওয়া গিয়েছিল আজ সকালে। সকালেই আনিস ভাইয়ের ফোন পেয়েই ইউনিভার্সিটিতে যাবে না বলে ঠিক করে ফেলল সে। আনিস ভাই অফিস থেকে গাড়ি পাঠালেন সাথে সাথেই, কাজটা যেভাবেই হোক হাসিল করানো লাগবেই- অনেক টাকার মামলা। তারপর থেকেই সারার এই পার্টির সাথে সকাল থেকেই ঘুরাঘুরি। আনিস ভাইয়ের কাজটা এতক্ষনে হয়ে গেছে নিশ্চই। উটকো ঝামেলা হলো ঐ বুড়োর সাথে রাত কাটানো। বুড়ো ১২টায়ই দম ফুরিয়ে বেহুঁশ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে।

হঠাৎ অয়নের কথা মনে হলো সারার। নিস্পাপ ঐ চেহারার কথাটা মনে হলেই তার অন্যরকম ভালো লাগা শুরু হয়। নিজেকে খুবই ভাগ্যবতী মনে হয় তার। উজাড় করা ভালবাসা পেয়েছে সে অয়নের কাছ থেকে। সে নিজেও তো তাকে কম ভালবাসে না। তার যত যা উপার্জন, তা তো দু'জন মিলেই খরচ করে। অনেকটা চাপ অন্তত অয়নের মাথা থেকে সে মুক্তি দিতে পেরেছে।

মাঝে মাঝে খুব পাপবোধ হয় তার এইধরনের শহুরে প্রস্টিটিউশনের জন্য। আবার ভাবে, ছেড়েই তো দিবে, অয়নের চাকরিটা হলেই সব ছেড়ে দিবে সে। কোনো গ্লানি, বা অপরাধবোধ থেকে যে সে এই পথে আসে নি, এটা যেমন সত্য, তেমনি খুবই মাঝে মাঝে এই অপরাধবোধের তাড়া তাকে চরমভাবে খেতে হয়, এটাও সত্য। মাঝে মাঝে কিছু উটকো ঝামেলাও এসে ভর করে। যেমন, প্রায় প্রতি রাতেই তার অফিসিয়াল নাম্বারে ফোন আসে আজব কিছু কম বয়েসী ছেলেদের,
- আপা, আপনি নাকি কলগার্ল? আপ্নের রেট কত?
খুব ভালো ভাবেই এদেরকে ম্যানেজ করতে শিখে গিয়েছে সারা। কারা যে এই নাম্বার লিক করে কে জানে!

বারান্দায় এসে দাঁড়ায় সারা। কাল অয়নের সাথে দেখা করার কথা। সকাল সকাল বাসায় ফিরেই অয়নের প্রিয় লাল রঙের একটা কামিজ পড়ে বের হবে ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে। বুড়ার কাছে অয়নের জন্য একটা ভালো চাকরির ব্যাপারেও কথা বলে রেখেছে সে। কতোই না খুশী হবে ছেলেটা, ভাবতেই ভালো লাগে সারার।

জানালার গ্রিলের ভেতর দিয়ে হাত বের করে দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা ধরতে চেষ্টা করে সারা। হঠাৎ তার মনে হয়, অয়নকে সে ঠকাচ্ছে না তো? নাহ্। কেন ঠকাবে? সে-ও যে ভালবাসে তাকে, নিরেট এবং নিখাঁদ। আনমনেই দু'চোখ বেয়ে অঝোরে পানি বের হয়ে আসে সারার।


(ছবি : ইন্টারনেট)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৩
৫৪টি মন্তব্য ৬০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×