আজ আকাশের বুকটা অফ হোয়াইট।অফ হোয়াইট আমার বেশ পছন্দের একটি রঙ।বৃষ্টির দিনে আকাশের বুকে যখন অফহোয়াইট রঙ জাল বুনে আমি চোখ মেলে দেখি সেই দৃশ্য।আহা! কতই না মনোহর!বক্ষের বাম পাশে নীহার মিলিত বাতাস এসে তা দিতে শুরু করে।আমি পরম যত্নে তা অনুভব করি।অফিসের জানালার গ্রিল ধরে শূন্য মননে ভাবি আজকের এই কর্মব্যাস্তময় দিনটাকে যদি ছুটি দিতে পারতাম!
ভাবতেই খুব খারাপ লাগে আজ আমি একজন কর্মজীবী মানুষ।এখানে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা নেই।সেই সকাল দশটায় প্রারম্ভ হয় আর বিকেল পাঁচটায় গিয়ে ঠেকে।কাজ যখনই শেষ করুন ছুটির ঘন্টার না বাজলে নিস্তার নেই।আসলে পরের অধীনে চাকরি করলে যা হয় আর কি!
সত্যি বলতে অফিসের এই চার দেয়াল বন্দী রুমে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।ভাগ্যিস একটি জানালা আছে।তাই কিছুটা হলেও স্বস্তিতে শ্বাস ফেলতে পারি।জানালার ধার ঘেঁষেই টেবিলটা সেট করেছি।যখন এক ঘেয়ে কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাই জানালার ওপারের মুখ করি।কফিতে চুমুক দিতে দিতে নিত্যদিনের চিত্রগুলো দেখি। তীব্র রোদে ট্রাফিক পুলিশ বেচারা ছাতা হাতে নিজ দায়িত্ব পালন করছে।দীর্ঘক্ষণ যাবত বাসে বসে থাকতে থাকতে লোকজন অনেকটাই বিরক্ত।ফুটওভার ব্রীজ থাকতেও মানুষ হইহুল্লোড় করে রাস্তা পারাপার করছে।হকাররা মাথায় করে ঠান্ডা পানি সরবারহ করছে।আর আমি!আমি সেগুলো ভুলে আকাশের দিকে মুখ করি আর আল্লাহর প্রশংসা করি।কি সুন্দর আকাশ!আকাশ দেখলে হৃদয়ে শান্তি শান্তি লাগে।
কফিতে চুমুক দিতেই লক্ষ্য করলাম, আকাশের রঙ হঠাত বদলাতে শুরু করেছে।মেঘগুলো ধীরে ধীরে কালো আবরনে ঢেকে যাচ্ছে।কিছুক্ষনের মধ্যে পুরো আকাশ কালো হয়ে গেল!জমকালো মেঘের আড়ালে কখন যে আদিত্যটা লুকিয়ে গেছে টেরই পেলাম না!আমার অনুভূতি জুড়ে পরিবেশটা এখন শীতল।মনে হচ্ছে এখনই বৃষ্টি নামবে।
হঠাত বাতাস বইতে শুরু করল!বাতাসের সাথে ধূলাবালি মিলে একাকার।মানুষ যে যেভাবে পারছে ধূলাবালি থেকে আত্মরক্ষা করছে।ধুলার চাদরে এ যেন অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন একটি শহর।আমি শুধু চুপচাপ দেখছি।আচমকা দুর্বার ঝড়–বৃষ্টি শুরু হলো। দ্রুত করে জানালাটা বন্ধ করে দিলাম।–কি জানি বাতাস কখন আবার ভাঙ্গা ডাল-পালা আমার দিকে ছুড়ে মারে।বাহিরে দুরন্ত বাতাসের সাথে শ শ করে বৃষ্টি পড়ছে। শঙ্খিনীর ন্যায় জানালার কাঁচ বেয়ে বেয়ে বৃষ্টি কণিকারা নামছে।আমি খুব মনোযোগ দিয়ে দেখি সেই নজরকাড়া দৃশ্যটা।ইচ্ছে করছে জানালাটা খুলে দিই।কিন্তু কি লাভ?পুরো রুমে বন্যা বয়ে যাবে।বাহিরে মাত্রারিক্ত বৃষ্টি।মাঝে মাঝে অতিরিক্ত বৃষ্টিও দুঃখের কারন হয়।ইশ! এখন যদি বাসায় থাকতাম দিব্যি একটা ঘুম দিতে পারতাম।
দীর্ঘক্ষণ পর বৃষ্টির তীব্রতা কমেছে।এবার জানালাটা খোলা যাক।জানালা খুলে যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।পুরো শহর হিরার ন্যায় জ্বলজ্বল করছে।কোথাও কোনও ছিটে ফোটা মলিনতা নেই।তবে একটা দৃশ্য দেখে হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝে উঠতে পারছি না।বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দালানের নীচে আশ্রয় নেয়া লোকজন ভিজে চুপসে যাওয়া আমের মতো হয়ে গেছে।অবশ্য আফসোস করেও লাভ নেই।কারন ভুল জায়গায় পা রাখলে এমনই হয়।যাক গে সে কথা।
আমি ওপরের দিকে তাকালাম,আকাশের গায়ে লেপটে থাকা জমকালো মেঘগুলো সরে গিয়ে এক অন্যরকম মেঘ এসে সে স্থান দখল করে নিচ্ছে।অফহোয়াইট!হুম, অফহোয়াইট।