somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুটবলে ঐতিহাসিক ফেরা ( কামব্যাক ) প্রথম পর্ব

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
*************** ঐতিহাসিক ফেরা ( কামব্যাক ) প্রথম পর্ব **************




ফুটবল বিশ্বে এমন অনেক ম্যাচ হয়েছে যেসব ম্যাচে দুইদল অসাধারন খেলে তৈরি করেছে ইতিহাস। এমন অনেক ম্যাচ আছে যেগুলো তে কয়েক গোলে পিছিয়ে পড়েও ম্যাচ জিতেছে, শিরোপা জিতেছে অনেক দল। এসব দ্রুপদি ম্যাচ গুলো দর্শকদের মনে সারাজীবন দাগ কেটে রাখবে। সারাজীবন যখনই এসব ম্যাচের কথা ভাববে তখনই জয়ী দল তৃপ্তির ঢেকুর তুলবে আর পরাজয় বরন কারী দল দীর্ঘশ্বাস ফেলবে। এমনি কিছু ম্যাচে নিয়ে আজ থেকে শুরু হচ্ছে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন ঐতিহাসিক ম্যাচে অসাধারন কামব্যাক, অর্থাৎ পিছিয়ে পড়েও ফিরে আসা।

এই ধারাবাহিকতায় আজ প্রথম পর্ব। থাকছে ২০০৫ সালের চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনালের বর্ণনা, ফুটবলের পাড় সমর্থক রা এই ম্যাচের কথা বার বার মনে করবে আর ভাববে আহা কি ম্যাচ ছিল।

ম্যাচ টি হয়েছিল ইংল্যান্ডের অন্যতম সফলতম ক্লাব লিভারপুল এবং ইতালির জায়ান্ট এসি মিলানের মধ্যে। লিভারপুলের ছিল ষষ্ঠ ফাইনাল এর আগে তারা ১৯৮৫ সালে শেষ বারের মত ফাইনাল খেলেছিল, আগে তারা ৪ বার ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৮১, ১৯৮৪ সালে। মিলানের এটা ছিল দশম ফাইনাল এর আগে তারা ৬ বার ১৯৬৩, ১৯৬৯, ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯৪ এবং ২০০৩ সালে ফাইনাল জিতেছিল।

১ম হাফ

লিভারপুল হঠাৎ করে এই দিন তাদের ফরমেশনে কিছু চেঞ্জ আনে, তারা ৪-৪-১-১ এ খেলা শুরু করে, অপর দিকে মিলান ৪-৪-২ ফরমেশনে খেলা শুরু করে। হয়তো লিভারপুল কোচ রাফায়েল বেনিতেজের এইটা একটা চাল, অথবা কিছুটা ডিফেন্সিভ খেলে সুযোগ বুঝে গোল আদায় করে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাফার এই ট্যাকটিকস মিলান কোচ কার্লো আনচেলোত্তির চালের কাছে হেরে যায় ১ম হাফে। খেলার শুরুতেই মিলান ফ্রিকিক পায়, পিরলোর বাকানো ফ্রিকিক থেকে ভলি করে ১ম মিনিটেই মিলান কে লিড এনে দেন অধিনায়ক মালদিনি। ১৩ মিনিটে আবার আক্রমন কিন্তু এবার হার্নান ক্রেসপোর অসাধারন হেড গোল লাইন থেকে ফিরিয়ে দেন লিভারপুলের স্প্যানিশ খেলোয়াড় লুইস গার্সিয়া। কয়েক মিনিট পর ব্রাজিলিয়ান লিজেন্ড কাকার অসাধারন পাসে গোল করেন শেভচেঙ্কো, কিন্তু দুর্ভাগ্য ক্রমে গোলটি অফসাইডের কারনে বাতিল হয়ে যায়। কয়েক মিনিট পর আবার শেভচেঙ্কোর শট প্রতিহত করেন লিভারপুল গোলরক্ষক ডুডেক। ম্যাচের ৩৯ মিনিটে কাকার অসাধারন ড্রিবলিং এবং পাসিং এর ফল স্বরুপ বল পায় শেভচেঙ্কো, বল বাড়িয়ে দেয় আগুয়ান ক্রেসপোর দিকে, এবার আর কোন ভুল নয়, গোলরক্ষক কে ফাকি দিয়ে গোলে শট করেন তিনি স্কোর ২-০। মিনিট ৫ পর আবার ও ক্রেসপো এবারো কাকা, কাকার পাস ক্রেসপোর কাছে এবং গোলরক্ষক কে এগিয়ে আসতে দেখে ক্রেসপো অসাধারন এক চিপে ব্যাবধান ৩-০ করেন। এর কিছুক্ষন পরেই রেফারি ১ম হাফের খেলা শেষ করেন।

দল ৩-০ তে পিছিয়ে এরপর একজন কট্টর সমর্থকের মনেও আশা থাকে না, কিন্তু সমর্থক রা যে লিভারপুলের, যারা কিনা বিশ্বে লয়্যাল ফ্যান দের মধ্যে অন্যতম ফ্যান বেজ। হাফ টাইমের সময় লিভারপুলের সমর্থক রা চোখে অশ্রু আর মনে আশা নিয়ে শুরু করে তাদের বিখ্যাত অনুপ্রেরনার গান You Never Walk Alone. মনের ভিতর দুরু দুরু ভয় আর বুক ভরা আশা নিয়ে শুরু হয় ২য় হাফ।

২য় হাফ

ফ্যানদের এই অনুপ্রেরনা মুলক গানেই কিনা লিভারপুল ২য় হাফের শুরু থেকেই অসাধারন খেলা শুরু করে। খেলার তখন ৫৪ মিনিট লিভারপুলের জন আর্নি রাইসের অসাধারন এক ক্রস ডিবক্সের ভিতর খুঁজে পায় অধিনায়ক স্টিভেন জেরার্ড কে, দারুন দক্ষতায় জেরার্ড ২য় বারের কর্নারের দিকে হেড করেন স্কোর হয় ৩-১ । এই গোলের ঠিক ২ মিনিট পর ৫৬ মিনিটে আবার লিভারপুলের গোল। ম্যাচের ১৫ মিনিটের মাথায় ইনজুরি তে পড়ে হ্যারি কেওয়েল মাঠ ছাড়েন আর তার পরিবর্তে মাঠে আসেন ভ্লাদিমির স্মিকচার। সেই স্মিকচার এর লং রেঞ্জ শট মিলান গোল কীপার কে পরাজিত করে এবং লিভারপুল আবার ম্যাচে ফিরে আসে, স্কোর ৩-২। লিভারপুলের সমর্থক রা তখন নতুন আশায় বুক বাধা শুরু করে, গান গেয়ে দলকে উৎসাহিত করতে থাকে। ২য় গোলের ঠিক ৩ মিনিট পর গুত্তুসো ডিবক্সের ভিতরে লিভারপুল অধিনায়ক জেরার্ড কে ফাউল করে বসেন, পেনাল্টি পায় লিভারপুল, পেনাল্টি নিতে আসেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার জাবি আলোনসো, গোল কীপারের ডান দিকে নিচু শট নেন আলনসো কিন্তু গোল কিপার ডিডা সেটা ঠেকিয়ে দেন। মজার ব্যাপার হল বল ঠেকিয়ে দিলেও তিনি বলের নিয়ন্ত্রন নিতে পারেন নি। ফিরতি বলে আলোনসো উচু উপরের বারের দিকে উচু করে শট নেন। গোলললললল স্কোর ৩-৩। এভাবেই চলতে থাকে পুরো ৯০ মিনিট। ৭০ মিনিটে অবশ্য মিলান সুযোগ পেয়েছিল লীড নেবার কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় ডুডেক। ৯০ মিনিটে যখন গোল হয় না তখন চ্যাম্পিয়নস লীগ ইতিহাসে ১৩ তম বারের মত খেলা এক্সট্রা টাইমে গড়ায়।
এক্সট্রা টাইমে দুই দলই আক্রমন প্রতিআক্রমনে খেলা চলতে থাকে কিন্তু কোন দলই গোল করতে সমর্থ হয় না। খেলা গড়ায় পেনাল্টি শুট আউটে।

পেনাল্টি শুট আউট

প্রথমেই শুট নেয় মিলানের সারজিনহো, কিন্তু ডুডেক তাকে কনফিউজড করে দেয় এবং সে বল বারের উপর দিয়ে মারে। পরের শুট লিভারপুলের দিমিতার হাফম্যান গোল করেন প্রথম সুযোগেই। এরপর মিলানের আন্দ্রেও পিরলোর শট ঠেকিয়ে দেন ডুডেক। পরের শটে সিসে লিভারপুল কে ২-০ তে এগিয়ে দেন। এর পর মিলানের থমসন গোল করলেও লিভারপুলের রাইস গোল করতে ব্যর্থ হন। মিলানের পক্ষে ৪র্থ কিক নিতে আসেন কাকা, গোল করেন। আবার স্মিতচার লিভারপুলের হয়ে গোল করলে স্কোর দাঁড়ায় এসি মিলান ২ - ৩ লিভারপুল। মিলানের পক্ষে ৫ম শট নিতে আসেন শেভচেঙ্কো, ম্যাচে টিকে থাকতে হলে মিলান কে এই শটে গোল করতেই হবে এবং পরের শট ঠেকিয়ে দিতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে শেভচেঙ্কোর শট ঠেকিয়ে দেন ডুডেক। আর রচিত হয় এক অসাধারন ইতিহাস। লিভারপুল তাদের ইউরোপিয়ান স্টেজে ৫ম বারের মত জিতে নেয় চ্যাম্পিয়নস লীগ।
ফুটবল বিশ্বে এমন অনেক ম্যাচ আছে যেগুলো মানুষের মনে সারাজীবন গেঁথে থাকে। সেরকমই একটা ম্যাচ ছিল এটা। এরকম কামব্যাক খুব কম ম্যাচেই দেখা গেছে। এই ম্যাচের পর সবাই একটা কথা শুধু বলতে পেরেছে Impossible is Nothing. আসলেই অসম্ভব কিছুই না।

পরবর্তী তে আবারো নিয়ে আসবো এমন আরেকটি ম্যাচের প্রতিবেদন।

চলবে ......
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×