একটা ছেলে মনে করেন ঢাকায় থাকে। বিবাহিত। মাসে তার ৫০,০০০ টাকা মাসিক ইনকাম। এখন তার বাবা মা গ্রামের বাড়িতে থাকে। বাবা মা নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে সন্তানকে পড়াশোনা করাইসে। কিন্তু ঢাকা শহরে ছেলের নিজেরই পরিবার নিয়ে ৫০,০০০ টাকা দিয়ে চলা কষ্ট। বাসা ভাড়া, খাবারদাবার, বাচ্চাকাচ্চার পড়াশোনা, ফিউচারের জন্য সন্চয়! তাই বাবা মা কে সে কিছুই দেয় না। সামান্য হাত খরচা বা চিকীৎসার খরচও না। কারন ঐ দিকে দিলে এ দিকে টান পড়ে যাবে! বাবা মায়ের আশা ছিলো ছেলে বড় হয়ে বাবা মা কে দেখবে, ছোট বোনটার বিয়ে দিবে।
.
কিন্তু কোথায় কি! উল্টো ছেলে বলে, বোনের বিয়ে দেওয়া তো আমার দায়িত্ব না। তোমাদের দায়িত্ব!
.
বাংলাদেশে যারা মধ্যবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত সে সব পরিবারের মধ্যে কিছু পরিবারের আশা থাকে যে, ছেলে নিজ পায়ে দাঁড়াক। আমাদের জন্য কিছু না করলেও চলবে। ছেলে সুখে থাক। সে সব পরিবারের সাধারণত ভালো একটা সন্চয় থাকে। সেটাই তাঁদের মূল ভরসা। ছেলের মুখাপেক্ষী তাঁরা নন।
.
নিম্ন মধ্যবিত্তদের মাঝে কিছু পরিবারের চিন্তা চেতনা এমন যে, পোলার পিছনে সব খরচ করি, জমি জমা সন্চয় ভেংগে ছেলেকে শহরে বা বিদেশে পাঠাই পড়াশোনার জন্য। ছেলে প্রতিষ্ঠিত হলে আর কোন চিন্তা নেই। সে আমাদের দেখবে।
.
কিন্তু ছেলেকে তারা তাঁদের সাধ্যের চে বেশি কমফোর্ট দিয়ে সব কিছু উজাড় করে দিয়ে বড় করার ফল হয় ছেলে আর লাইফ স্ট্যাইল চেন্জ করতে পারে না। বাবা মা নিম্ন মধ্যবিত্ত কিন্তু ছেলেকে দিসে উচ্চমধ্যবিত্তের সুখ! ছেলে যখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তখন সে নিম্ন মধ্যবিত্তে নামতে চায় না। বাবা মা তাকে যে লাইফস্টাইল দিয়েছে সে সেটাই ধরে রেখে বাবা মাকেই কে ছেড়ে দেয়! তাঁদের ধরে রাখলে তো তার ফিউচার নষ্ট হয়ে যাবে। তাঁর সন্তানদের ফিউচার নষ্ট হয়ে যাবে!
.
যে মেয়েকে সে বিয়ে করে অনেক সময় সে মেয়েই গুঁটিবাজি করে। সে মেয়ে নিজের সিকিউর ফিউচারের জন্য জামাইকে তার পরিবার থেকে ডিটাচড করে ফেলে। কিন্তু একবারও ভাবে না তার ভাইয়ের বইটাও যদি তার বাপ মায়ের সাথে এমন করে তাহলে তার বাবা মায়ের কেমন লাগবে! ঠিক তেমনই লাগে ছেলেটার বাবা মায়ের।
.
বিয়ের পরে বাবা মায়ের সাথে কোন কিছু নিয়ে মনোমালিন্য হতেই পারে,তার মানে এই না যে তুমি বাবা মায়ের প্রতি দায়িত্ব ভুলে যাবা,ছোট ভাই বোনের প্রতি দায়িত্ব ভুলে যাবা। রাগ রাগের যায়গায়, তুমি যদি সুসন্তানই হবা তাহলে নিজ বাবা মা ভাই বোনের প্রতি দায়িত্ব ভুলে যাওয়ার কথা না। আমি এমন ছেলেও দেখসি যে বাবা মায়ের সাথে মান অভিমান আছে মুখ দেখাদেখি বন্ধ প্রায় তাও ভাইয়ের পড়াশোনার খরচের টাকা এক মাসের জন্যও বন্ধ রাখেনি।নিজে অনেক কষ্ট করছে তবুও বাবা মায়ের উপর ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার খরচের চাপ তুলে দেয়নি।
.
বাবা মা ছোট ভাই বোনকে দেখভাল না করে যারা সমাজে ফুটানি মারায় তারা একেকটা স্পাইনলেস কুলাংগার। বাবা মা কে দেখভাল করার পর তোমার যে আর্থিক অবস্থা সেটাই তোমার প্রকৃত আর্থিক অবস্থা। বাবা মা কে ভাই বোন কে না দেখে সমাজে ফুটানি মারানো এমন কুলাংগার আমাদের চারপাশেই আছে। সাম্প্রতি একটা পরিবারের কথা শুনেছি। ছেলেকে বিয়ে করাই দিসে পরেই ছেলের আসল রূপ বের হয়ে গেছে। সেই সাথে বউয়ের কানপড়া পেয়ে এখন আর বাবা মায়ের সাথেই যোগাযোগ রাখে না! ঐ ছেলেকে বাবা মা অনেক আদরে বড় করসে। ছেলের মাকে বলতে ইচ্ছা করতেসে যে, পোলাকে এতো আদর না দিয়ে যদি থাব্রায়া থাব্রায়া মানুষ করতেন তাহলে ছেলে আজকে এমন স্পাইনলেস কুলাংগার হতো না।
---রিয়াজ হাসান
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:২৪