somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৪ ডিসেম্বর। আজ এতো কষ্ট হচ্ছে ...

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আহারে, আজ এই দিনে কত কত সোনার সন্তানকে হত্যা করেছে জঘন্য নিকৃষ্ট অমানুষ জানোয়াররা। আজ কেন এত বেশি কষ্ট হচ্ছে আমাদের?
একজন মহান মানুষকে ওরা ধরে নিয়ে যায়,
জঘন্য কুৎসিত পিশাচের বিশ্রী নোংড়া হাত স্পর্শ করে একেকটি উদার শরীর। একেকজন জীবন্ত সম্ভাবনাকে নিমিষেই ওরা ধ্বংশ করে দেয়। একেকজন ভালো মানুষকে ঘাতকরা তাদের নোংড়া পায়ে পিষ্ট করে। মহান সুরস্রষ্টা কে তারা এই ভাবে হত্যা করে, যে ভাবে একটি হিংস্র নেকড়ে ঝাঁপিয়ে পরে কোমলতার গায়ে। ১৯৭১ এর এই সময়ে, নির্মম পাষন্ড রাক্ষসরা উল্লাসে মেতে হত্যা করতে থাকে একেকটি সূর্যকে। একজন লেখকের কলমকে তারা থামিয়ে দেয়, আহারে!! সেই কলমের আঁচরে না জানি কি ফুল ঝরে পড়ত সোনার খাতায়!!!
কুচক্রী শয়তানরা খুঁজে বের করে দেশের প্রতিটি সূর্য-সন্তানকে। শয়তানরা সোনার মানুষদের খুঁজে পায়, কারন, সূর্য-সন্তানরা সবসময় আলোকিত, উজ্জ্বল আর প্রকাশিত। একজন স্বাপ্নিককে রাজাকার-আল বদর-আল শামস্‌ নামক কুৎসিত জঘন্য হন্তারকরা নির্দ্বিধায় গুলি করে হত্যা করে। দেশকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিতে রাজাকারদের অনাবিল আনন্দ হয়েছিল, দেঁতো হাসি হেসে ছিল পাকিস্তানী জানোয়াররা। অমানুষ গুলো বুঝেছিল, জেনে ছিল, আবিষ্কার করেছিল যে, একটি দেশকে পঙ্গু করে দিতে চাইলে সে দেশের সূর্য-সন্তানদের হত্যা করতে হবে!

আহারে আহারে আহারে...

আজ আমার সোনার বাংলা অনেক বেশী সোনার বাংলা থাকতো সূর্য-সন্তানরা বেঁচে থাকলে। আমরা সবকিছুতে আরো বেশী বেশী "ভালো" পেতাম।

প্রতিটি মানুষের জীবন মূল্যবান। অমানুষরা জীবনকে ভালবাসেনা (হয়তো বাসতে জানেও না)। যারা মানুষের জীবনকে সুন্দর করতে চায়, চেয়েছিলেন...অমানুষরা তাদেরকে সহ্য করতে পারে না। আমানুষরা চায় দেশ পঙ্গু হয়ে যাক, দেশ মরে যাক, মরে যাক দেশের মানুষগুলো। একাত্তরে তাই অমানুষরা ঝাঁপিয়ে পড়ে মানুষকে হত্যা করতে। একাত্তরে অমানুষরা রক্তকমল ছিড়ে পায়ে পিষ্ট করে, এমনকি তারা ফুলের চেয়েও কোমল সুন্দর নিষ্কলুষ শিশুটিকেও হত্যা করতে দ্বিধা করেনি। আজ সোনার মানুষগুলো বেঁচে থাকলে আমরা বাংলাদেশকে আলোয় উদ্ভাসিত করতে পারতাম। আহারে, আমার সোনার বাংলার বঞ্চিত ত্যাগী সূর্য-সন্তানেরা...তোমরা আমাদের ভালবাসা জেনো অনন্ত কাল ধরে।

আহারে, আমার ভোলা ভালা শিক্ষক বাবামনি! তোমাকে ওরা কোথায় নিয়ে গেল? তুমি কোথায় আছো আজ? মা তোমার পথচেয়ে বসে আছে যুগ যুগ ধরে। ছোট্ট বোনটি তখন অনেক ছোট, তোমাকে বাবা বলে ডাকতে পারেনি কোনদিন। ও এতো বড় হবার পরও জানে না "বাবা" শব্দটার মানে। ওর বুকে সবসময় হু হু করে বয়ে যায় হাহাকারের তীব্র বাতাসের করাত।

আহারে আমার পৃথিবীর চেয়েও প্রিয় প্রেমিক! তুমি কেন আমাকে স্বপ্ন সুখের ছোঁয়া দিয়ে হারিয়ে গেলে হঠাৎ? আমি যে তোমার দেওয়া তীব্র ভালবাসাকে বুকে পুষে এক অনন্ত বিষাদের পৃথিবীর পথে পথে তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। তুমি মানুষকে আলো দিতে বলে ওরা তোমাকে হত্যা করেছে? নাকি তোমাকে ওরা কোথাও লুকিয়ে রেখেছে? তুমি কি ফিরে আসবে!!

আহারে আমার, বুকের মানিক, আমার হৃদয়ের টিয়া, আমার আকাশের চাঁদমনি মেয়েটি! ওকে বর্বররা নিঃশেষ করে দিল। এরপর থেকে আমি আর বেঁচে নেই এই পৃথিবীতে। এরপর থেকে আমার হৃদয় স্থবির হয়ে আছে!!! আমি হাহাকারের মহাসমুদ্রে ডুবে আছি।

মুক্তিযুদ্ধে সকল বাংলাপ্রেমীর মহান আত্মত্যাগ আমাদের বাংলাদেশ এনে দিয়েছে। আমার হৃদয় সেইসব ত্যাগী মানুষদের জন্য কেন জানি আকুল হয়ে থাকে। তারা কেমন ছিলেন! তাদের সাথে কথা বলতে পারলে আমার অনেক অনেক অনেক ভালোলাগতো। আমি মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ানক রকম ভালবাসি! একজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা বলার সময় আমি আমার আবেগকে কখনই ধরে রাখতে পারি না। একজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে দেখা হলে আমি তাকে ভাল করে দেখি, চোখ ভরে দেখি, বুক ভরে দেখি। আমার স্বপ্ন, আমি আমার প্রিয় মানুষকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশদের প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার কাছে গিয়ে আমার কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আসব, আমার গভীর ভালবাসার কথা বলে আসব, আমাদের প্রেমের কথা বলব, আমাদের স্বপ্নের কথা বলব, আমাদের সংগ্রামের কথা বলব।
আহারে! মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স হয়ে গেছে! প্রকৃতির নিয়মেই তাদের অনেকে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন, যাঁরা এখনো বেঁচে আছেন, তাদের অনেকেই অনেক কষ্টে দিন যাপন করছেন। কয়েক বছর পর হয়তো তাদের অনেকেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন একবুক অভিমান নিয়ে। আমরা অনেক লজ্জিত যে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের কিছুই দিতে পারিনি। এই কষ্ট আমাদের অনেক অনেক কষ্ট দেয়।

মুক্তিযোদ্ধা সোনা মানিকেরা, মায়ের জন্য প্রান উৎসর্গকারী সূর্য-সন্তানেরা, ১৯৭১ এ নিহত অমর মানুষেরা, ১৯৭২ এ হারিয়ে যাওয়া আলোকিত জীবনেরা, আমাদের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় জীবন দানকারী অগ্রপথিকেরা... ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ এ হারিয়ে যাওয়া আমাদের ভাই, আমাদের পিতা, আমাদের প্রেমী, আমাদের সন্তান, আমাদের বোন... তোমরা আমাদের ভালবাসা নিও। তোমাদের অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক বেশী ভালবাসি।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×