somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এরশাদের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সক্রেটিসের পর প্রগতিশীল চিন্তাধারা ছড়িয়ে দেয়ার অপরাধে ইতিহাসের দণ্ডিত দ্বিতীয় পুরুষ ড. ইউনূস। সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ। এই দেশের শেয়ার মার্কেটের গুণ্ডারা ধরা পড়লেও বিচার করা যাবে না, কারণ অর্থমন্ত্রীর মতে তারা নাকি অসম্ভব প্রভাবশালী। উপদেষ্টা মসিউর বলেছেন, এই দেশের মাটি ব্যবহার করলে ট্রানজিটের পয়সা চাওয়ার নাম অসভ্যতা। এই দেশেই বন্দুকের নলে মতা দখল করা স্বৈরাচারের সাথে নির্বাচন করে পরে গদি থেকে টেনে নামানো সত্ত্বেও তাকে নিয়েই মহাজোট। অতীতে জামায়াতের অফিসে ঘুরতে ঘুরতে জুতার সুকতলি য় করে এখন জামায়াতের বিরুদ্ধে কিসাস ঘোষণা। এই দেশের রাষ্ট্রপতি ২৭ ফাঁসির আসামিকে মার ইতিহাস লিখে গণতন্ত্রের বিলুপ্তি আর অলিখিত সামরিক শাসনের উদাহরণ হলেন। সামান্য পদ্মা সেতুর দরপত্র পর্যন্ত ঠিকমতো লিখতে পারে না আবুল হোসেন আর যত্ত দোষ নন্দ ঘোষ ইউনূসের। ২০ বিলিয়ন ডলারের গার্মেন্ট শিল্পে একজন শ্রমিক তার মজুরি দিয়ে নাশতা পর্যন্ত কিনতে পারে না। জাতিসঙ্ঘে বিশ্বশান্তির মডেল উপস্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী, এ দিকে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে নাৎসী পার্টির মতো ভয়ঙ্কর আচরণ। গরিব দেশের সরকারের রাজকীয় ব্যয় দেখে এ কথা মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ন্যূনতম ১০০ হাজার ডলার। গণতন্ত্রের নামে ৪২ বছর ধরে অব্যাহত স্বৈরাচার, ৪৬ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের বিরুদ্ধে দেশ স্বাধীন করে ফেললাম কিন্তু ৪৬০ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের বিরুদ্ধে পাঁচ বছর পরপর সুয়োরানি-দুয়োরানি খুঁজতে পার করে দিলাম ২২ বছর। এত উদাহরণ সত্ত্বেও আন্দোলনের ইস্যু খুঁজে পায় না টকশো বিপ্লবীরা?

তৃতীয় শ্রেণীর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রথম শ্রেণীর আন্দোলন হয়েছিল ’৬৯-এ। এখন প্রথম শ্রেণীর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে নবম শ্রেণীর আন্দোলন পর্যন্ত জমাতে পারছে না। পুরুষ বলতে এখন একমাত্র খালেদা জিয়াই, আহত সৈনিকের মতো রণাঙ্গনে রক্তাক্ত হাত তুলে হঠাৎ হঠাৎ হুঙ্কার ছাড়েন, এখনো মরি নাই ইডিপাস! দেশজুড়ে স্বৈরশাসনের দহন। এ অবস্থায় একমাত্র খালেদা জিয়াই সব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে জনসভায় গিয়ে প্রমাণ করছেন, টকশোতে গলাবাজি করে লাভ হবে না। বলতে চাইলে

রাস্তায় নেমে চিৎকার করতে হবে, গণতান্ত্রিক দেশে স্বৈরাচারী শাসন মানি না, মানব না।

নির্বাচন ১৯৮৬ : আওয়ামী লীগ তখন জামায়াতকে সাথে নিয়ে নির্বাচনে গেলে ফলাফল, জাতীয় পার্টি ১৫৩টি আসন, আওয়ামী লীগ ৭৬, জামায়াত ১০। ওই সাজানো নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছিল। ওই নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতের সাথে গড়ে ওঠে নিবিড় সম্পর্ক। ’৮৬-এর সংসদ থেকে এক সাথে পদত্যাগ এবং এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নিজামীর সাথে জোড়া কবুতরের মতো রাজপথ রক্তাক্ত করেছেন শেখ হাসিনা। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনেও সাথে জামায়াত। এখন বলছেন, যুদ্ধাপরাধী নিজামীদের বিচার না করলে মুক্তিযুদ্ধ ময়লা হয়ে যাবে। প্রতিবন্ধী মানুষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করতে পারে, ’৮৬-তে নিজামী যদি যুদ্ধাপরাধী না হয়ে থাকে, এখন কেন হলো? নুরেমবার্গ ট্রায়ালের ধুয়া তুলে লাভ নেই, কারণ পাবলিক সেন্টিমেন্টকে আমলে নিয়ে ওই বিচারটি ছিল সম্পূর্ণ সান্ত্বনামূলক। ওই বিচারের মেরিট তখনো ছিল না, এখনো নেই। এর কোনোটারই ব্যাখ্যা শেখ হাসিনা দিলেও লাভ নেই, কারণ তিনি হুজুগে বাঙালির দায়িত্বে আছেন। এরাই পাঁচ বছর পরপর ঠিক করে দেয়, দেশের চেয়ে দল এবং ব্যক্তি কত বড় হওয়া উচিত।

১৯৯০-তে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ১/১১-এর চেয়ে অধিক স্বৈরাচারের যুগ, যাকে ছোটখাটো আইয়ুব যুগ বললেও অত্যুক্তি হবে না।

১৯৯১-তে খালেদা জিয়া যখন জোট সরকার গঠন করেন, সাথে নিলেন সাত ভাগ মানুষের দল জামায়াতকে। এরশাদকে ঢোকালেন জেলে। শুরু হলো বিরোধী দলের সংসদ বর্জন, লাগাতার হরতাল, খুন আর জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন।

১৯৯৬-এর নির্বাচনের আগে জামায়াতকে সাথে নিয়ে পদত্যাগ করে জোটের আশায় শেখ হাসিনা সরাসরি গোলাম আযমের শরণাপন্ন হন। সেই গোলাম আযমই এত বছর পর যুদ্ধাপরাধী? সরকার না শুনলেও আন্তর্জাতিক মহলে বিচারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তুমুল বিতর্ক, যা অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতায় ছড়িয়ে দিচ্ছে উত্তাপ। বিস্ফোরক বক্তৃতা দিয়ে মানুষকে উত্তেজিত করার কারণে ভয়ঙ্কর সামাজিক অস্থিরতার আলামত ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। মহা আনন্দে চলছে খুনের মিছিল।

২০০৭ সালের নির্বাচনে নিশ্চিত বিজয় জেনে মহাজোটের নৌকায় উঠলেন চরিত্রহীন এরশাদ, যার বিরুদ্ধে দুই নেত্রী এক দিন জোড়া কবুতরের মতো একসাথে রক্তাক্ত করেছিলেন রাজপথ। সেদিনের বিপ্লবী স্লোগান, ‘এরশাদের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র’। তারপর কি হলো? অতীতেও জোটে নেয়ার জন্য খালেদার দেয়া মামলাগুলোকে ব্যবহার করেছে আওয়ামী লীগ। ’৯৮-তে খারিজ হয়ে গেলে ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা রাখার জন্য দিলো নতুন মামলা। এই খুনি এরশাদের হাতে ’৬৯-এর মতোই বাঙালির তাজা রক্ত। এরশাদ ভালো, ১/১১ খারাপ? জামায়াত খারাপ, এরশাদ ভালো? সংসদে বিলুপ্ত গণবাহিনীর খুনি সদস্য ভালো, রাস্তায় বন্দুক হাতে ছাত্রলীগ ভালো? এরশাদ সরকারে পুরো ক্যান্টনমেন্ট, মাইনু-ফখরু সরকারের ভাগে আধাআধি। মানুষ জানতে চায়, শেখ হাসিনা যখন ১/১১-এর বিরুদ্ধে মুখে এতবার কামান দাগাচ্ছেন, বন্দুকের নলে মতা দখলকারী এরশাদ কেন মহাজোটে? দেশ ছাড়ার সময় এয়ারপোর্টে বলেছিলেন, মতায় গেলে ১/১১-এর সবকিছুই বৈধ করবেন। আমরাও ইকোনমিস্টের রিপোর্ট ছাড়াই বুঝতে পারি, ভারতের বস্তা বস্তা টাকায় ২০০৮-এর নির্বাচন। মানুষ দেখছে, ১/১১ আর এরশাদের বন্দুকের নলের সব সুফল একাই খেয়েছে হাসিনার দল। মতায় যাওয়ার জন্য জামায়াত, এরশাদ, ১/১১… হানাদার বাহিনী বনাম মিত্রশক্তি প্রশ্নে প্রতিবারই তিনি মহাত্মা গান্ধী। আবার গান্ধী যখন মতা পাকাপোক্ত করতে সহিংস হয়ে যান, সে দৃশ্য অত্যধিক ভয়ঙ্কর।

বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণে ’৭০-এর সরকারকে পর্যন্ত পেছনে ফেলে দিয়েছে এই দলটি। অতীতে খালেদা জিয়ার অনেক সমালোচনা করেছি, বর্তমানে স্যালুট করি। কারণ বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র পুরুষ যিনি ২০৬ খানা হাড় চুরমার হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন (ভবিষ্যতে তিনিও পাল্টাবেন না সেই গ্যারান্টিও নেই)। একমাত্র তিনিই ’৭৫-এর মতো জরুরি অবস্থা জারির আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। ১৭৩ দিন হরতাল দেয়ার বদলে আমি তার ধৈর্য, সহ্য, বাকসংযম, ভদ্রতা, মুখ ও শরীরের ভাষার প্রশংসা করি। সর্বেেত্রই তিনি হাসিনার থেকে আলাদা বলে প্রতিষ্ঠা করেছেন। মানুষও তার এই গুণাবলির প্রশংসা করতে শুরু করেছেন। সংখ্যালঘু সমাজ বিএনপির দিকে ঝুঁকছে। হিন্দুরা কি ভুলে গেছে রীবাহিনীর অত্যাচার আর লাখে লাখে দেশত্যাগ? পরিকল্পিতভাবে হাজার বছরের বৌদ্ধবিহার ধ্বংসের কথাও ভুলবে না। প্রায় ৭৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অর্পিত সম্পত্তি লুটপাটের সাথে শত্র“ সম্পত্তি আইন বাতিলের উদ্দেশ্য বুঝে গেছে (পরে সব দলই লুটপাট করেছে)। প্রায় চার বছর ধরে ক্রমাগত আক্রমণের পরও খালেদা জিয়া যে সুস্থ থেকে দল চালাচ্ছেন, জনসভা করছেন, পুরুষ প্রশ্নে ‘ইউনূস’ পর্যন্ত ধরা খেলেন। অধিকারের সংগ্রামে প্রায় আট কোটি পুরুষকে খালেদা জিয়া বড়ই লজ্জায় ফেলে দিয়েছেন।

১৯৭২, ১৯৯৬ এবং ২০০৮ সালের সরকারগুলোর লাগাতার ব্যর্থতা প্রমাণ করেছে এরা মাঠকর্মী হতে পারে কিন্তু প্রশাসন চালানোর যোগ্যতা নেই। ’৭২-এর সাড়ে তিন বছর ধরেই অপশাসন, দুই টার্মেই শেয়ারবাজারের গোডাউনে ঢুকে ডাকাতি, এই টার্মে ড. ইউনূস, পদ্মা সেতু, কুইক রেন্টাল, হলমার্ক, ফাইওভার, গুম, ক্রসফায়ার…। ’৮৬, ’৯০, ২০০৮-এ দলের রাজনৈতিক চরিত্র বিশ্লেষণ করলে একটি কথাই স্পষ্ট, ৮৫ শতাংশ জনসমর্থন হারিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারই মতায় যাওয়ার একমাত্র কৌশল। বুঝলাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কমুক্ত করছেন। আমার প্রশ্ন ডা: মিলন এবং নূর হোসেনের রক্ত যার হাতে সেই এরশাদকে মহাজোটে রেখে শহীদের মা’দেরকে কী ব্যাখ্যা করবেন শেখ হাসিনা? আমিও একজন মা, সেই জায়গা থেকে অবশ্যই বলতে পারি, সবার আগে আপনাকে এরশাদের বিচার করতে হবে এবং এরশাদের সাথে যারা জোট করে তাদেরও বিচার করতে হবে। তারাইবা যুদ্ধাপরাধীর চেয়ে কম কিসে। কারণ ’৭১-এ পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ না দিয়ে বরং ’৮২-তে দেশে ফিরে ফুরফুরা এরশাদ সেনাবাহিনীতে ঢুকেই ’৮৩-তে মতা দখল। মুক্তিযুদ্ধকে মিলিটারির বুটের তলে পিষে ফেলে বন্দুকের নলে মতা দখলের পর অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা খুন? সুতরাং জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার আগে জাতীয় পার্টি কেন নিষিদ্ধ হবে না, আওয়ামী বিপ্লবীদের কাছে এই অধমটি প্রশ্ন তুলতেই পারে যে, যারা বন্দুকের নলে মতা দখল করা এরশাদের সাথে জোট করে মতায় গেছে তাদেরও বিচার হবে না কেন? ৮৩ বছরের বৃদ্ধ লম্পট এরশাদ যদি মুক্তিযোদ্ধা খুন করার পরও মতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে তাহলে মুক্তিযুদ্ধের মহাভারত নোংরা হবে না কার নির্দেশে? মুখে কামান দাগানো কোনো একপরে অধিকার নয়। ইতোমধ্যেই চরম তিগ্রস্ত হয়েছে দুই প্রজন্ম। এই অবস্থার উত্তরণ ছাড়া ভবিষ্যতের জন্য রয়েছে কঠিন অনিশ্চয়তা।

’৬৯-এ যারা প্রথম শ্রেণীর রাজনীতি করে অষ্টম শ্রেণীর স্বৈরাচার দূর করতে চেয়েছেন, ২০০৮-এ তারাই অষ্টম শ্রেণীর রাজনীতি করে প্রথম শ্রেণীর স্বৈরাচারকে বুকে আগলে রেখেছেন। ’৬৯-এর সেই বীর বিপ্লবীরা দলের মধ্যে কোমর ভাঙা বাঘ হয়ে ধুঁকে ধুঁকে কলঙ্কের ধুলা আর দুর্নীতির সম্পদ কুড়াচ্ছেন (এর চেয়ে বেকারত্বও সম্মানজনক)। ’৮৬, ’৯৬, ২০১২-এর কর্মকাণ্ডে প্রমাণ হয়েছে মূল দল থেকে ভ্রষ্ট লীগের ইজ্জত কিংবা নীতি বলতে কিছুই নেই। ’৭৩-এ দস্তখত দিয়ে ১৯৫ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীকে পাকিস্তানের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে এখন শিবের গীত গাওয়ার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকসহ প্রভাবশালী পত্রিকা ইকোনমিস্ট। ২০০৮-এর নির্বাচনে জামায়াতকে টানার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আমিনী টাইপের ইসলামি দলগুলোর সাথে গাঁটছড়া বেঁধে এই হাসিনাই ফতোয়ার পে হুঙ্কার তুললে দেশ-বিদেশে সেদিন ছিঃ ছিঃ রব, নেত্রী কি পাগল হয়ে গেলেন? ৮৫ শতাংশ জনসমর্থন হারিয়ে তাহরির স্কয়ার ঠেকাতে এই মুহূর্তে একটাই পথ, যেকোনো মূল্যে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি। সেই ল্েয কোটি কোটি টাকা খরচ করে মানববন্ধন, মিছিল, বিস্ফোরক বক্তৃতা এবং ঢাকঢোল পিটিয়ে মাসব্যাপী পাবলিক উত্তেজনার অনুষ্ঠান। বিচার করছেন আদালত, রায়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে কামান দাগাচ্ছে সরকার। ইকোনমিস্টে প্রকাশিত, স্কাইপে বিচারকের ফাঁস হয়ে যাওয়া কথোপকথন থেকে নির্বিঘেœ বলা যায়, ট্রায়াল এখন মিসট্রায়াল হওয়ার যথেষ্ট ত্রে তৈরি হয়ে গেছে। এই ট্রায়ালটি এখন ‘ওয়াটারগেট’ কেলেঙ্কারির মতো ‘গণভবনগেট’ কেলেঙ্কারি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ওয়াশিংটন হলে এই মাপের কেলেঙ্কারির কারণে তুলকালাম হয়ে যেত। জনসভায় পাঁচটি মূর্তির গলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলিয়ে জাতিকে যে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তা আদালতের ওপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার। নখদন্তহীন আদালত, টিআইবি রিপোর্টেও সে কথাই উঠে এসেছে। এই আদালতেরই এক সাবেক বিচারক হাসিনার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রায় লেখার কিছু আগে প্রায় ৩১ লাখ টাকা গ্রহণ করেছিলেন, আইনত যা অবৈধ। সুতরাং আদালতের ওপর আস্থা হারানোর যথেষ্ট কারণ আদালত নিজেই সৃষ্টি করেছেন। বিচার চলাকালীন সময়েও কামান দাগানো থামছে না, সব দোষ খালেদা জিয়ার। কারণ তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চাইছেন। বাস্তবে খালেদা জিয়া টুঁ-শব্দটিও করছেন না, কারণ শেখ হাসিনার ফালতু উত্তেজনায় তিনি মোটেও উত্তেজিত নন। বরং তিনি বলছেন, বিচার সুষ্ঠু হতে হবে এবং ঘরের মধ্যে যারা যুদ্ধাপরাধী হোক বেয়াই কিংবা তালই বিচার করতে হবে (আমি হলে ওই ১৯৫ জনের কথা আগে বলতাম)।

দেশপ্রেম আমরা আওয়ামী লীগের কাছে ইজারা দিয়েছি। ৪২ বছর ধরে আওয়ামী লীগ মানুষকে বিশ্বাস করিয়েছে, এই দেশ, দেশের পতাকা, মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান সব শেখ পরিবারের উত্তরাধিকার। এর বাইরে দেশপ্রেমিক বলে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি থাকতে পারে না। পরিবার পরম্পরায় একমাত্র শেখ ডায়নেস্টি ছাড়া এই দেশে মতায় যাওয়ার অধিকার অন্য কারোই নেই। ডিসেম্বর মাসে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচির বিরুদ্ধে ডিসেম্বরেই জ্বালাও-পোড়াও, খুন হরতালকারী শেখ হাসিনার সর্বশেষ কামান দাগানো এখন চরম পর্যায়ে। আসুন আমরা সর্বশেষ দ্বৈতনীতির সুরতহাল করি।

মতা গ্রহণের ২২ মাসে তাদের হরতালের হার ৮০ঃ২।

হরতাল, ১৯৯১-৯৬ = ১৭৩ দিন।

হরতাল, ২০০১-০৬ = ১৩০ দিন।

হরতাল, ১৯৯৬-২০০১ = ৮৫ দিন।

২০০৯-১২ বিএনপি = ২ দিন।

২০০১-০৬ আওয়ামী লীগ = ৮০ দিন।

প্রতি ডিসেম্বরেই হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও, খুন করছে বিরোধী দল আওয়ামী লীগ।

২০০৬-এর ১৮ এবং ২১ ডিসেম্বর সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সহিংসতায় প্রায় ২৩ জনের মৃত্যু। অক্টোবর মাসে বিএনপির পদত্যাগের পর ২০০৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জ্বালাও-পোড়াও, লগি-বৈঠা আন্দোলনে ৪৫ জনের অধিক মৃত্যু। ১৫ নভেম্বর, ১৯৯৮ ডেইলি স্টার, হাসিনাকে কোট করে লিখেছেন, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং দলের সভাপতি হিসেবে ঘোষণা দিচ্ছি যদি কখনো বিরোধী দলে যাই হরতাল করব না।’

০৪ জুলাই, ২০০৬, শেখ হাসিনার ঘোষণা, হরতাল না দিলে এদের সোজা করা যাবে না, হরতাল দিয়ে জনজীবন স্তব্ধ করে দিতে হবে, সুতরাং একটা লাশ পড়লেই আবার হরতাল।

চেম্বার অব কমার্স ২০১১ সালে জানায়, এক দিনে হরতালের তি ১০ হাজার কোটি টাকা।

সারমর্ম : বিজয় মাসেও শেখ হাসিনা জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল, লগি-বৈঠার আন্দোলন কোনোটাই বাদ দেননি। অতীতে এবং সর্বশেষ এই বিজয়ের মাসেই বিশ্বজিৎ খুনের মাধ্যমে প্রমাণ হলো আওয়ামী লীগ পুরোপুরি ক্যাডারভিত্তিক দল। এদের ছাত্রলীগ, যুবলীগের ছেলেরা জ্যান্ত মানুষের গায়ে চাপাতি মারে। এরা পরোয়া করে না বিশ্বজিৎ কোনো মৃত্যু নয় বরং একটি জীবন। ২০২১ সাল পর্যন্ত গদি আটকে রাখার জন্য এই দলটি লাশের রাজনীতি বেছে নিয়েছে। এরা বিচারপতিকে পর্যন্ত দলের ক্যাডার করে ফেলেছে। তার হাতে রাষ্ট্র এবং জানমাল অনিরাপদ বলে ইতোমধ্যেই প্রমাণ হয়েছে। (শেখ মুজিবের সাড়ে তিন হাত গজারি কাঠ আর শেখ হাসিনার লগি-বৈঠা)। ‘চোরের মার বড় গলা’।
[email protected] নিউ ইয়র্ক।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×