সমস্ত'টাতে রুক্ষ মরুর হাহাকার ধরে রাখা এ শহর- যত্নে আদরে লাবণ্য কিনে আনে !
প্রকৃতি অনাদরে রাখলে ও এখানকার মানুষগুলো বিষের বালিতে শুদ্ধ হয়ে মুক্তা ফলাতে শিখেছে। পা' বাড়ালেই পায়ের সাথে বালুর সাগর, ফুলের ঝাঁপি। প্রজাপতি ও দারুণ সুখে ডানা মেলে এ আকাশে। বছরের এ সময় টা বর্ণে গন্ধে হৃদ্যতা বিলায়। জমিয়ে রাখা কাশবন, ফুটেতে চাওয়া কৃষ্ণচূড়া সবাই স্বাগত জানায় পরিযায়ী পাখির দল। এ তো সেদিন শুভ্রতা স্নিগ্ধতায় রাতের আঁচলে তারা ফোটাত হিমঝুরি ফুলের গুচ্ছ। পাশের ব্যালকনী থেকে ম্যারি ক্রিসমাসের সুরের সাথে হৈ হুল্লোড় আনন্দ ধারা।
এ শহরে প্রায় সবাই পরিযায়ী মেঘ, গায়ে মাখা মাটির গন্ধ নিয়ে সময়ের ছিপে তুলে আনে নিজ শহরের রঙ। ছুঁয়ে থাকা সবুজে সবুজে রঙধনু ফুলের মেলায় যে ঢেউ আনে আরব সাগরের বাতাস। বঙ্গোপসাগর, আটলান্টিক বা প্রশান্ত মহাসাগরের সুবাস খুঁজে ফিরি তাতে আমরা সবাই। পরযায়ী মেঘ স্মৃতির ডানা মেলে সে সুবাসে।
সান্ধ্য বাতাসে যে প্রাণের দোলা থাকে সেখানে ও মিশে থাকে কিছু কাছের মানুষ কে ছুঁয়ে দিতে না পারার দীর্ঘশ্বাস। রাতের উজ্জ্বলতা যতখানি উৎসব মাখে পরতে পরতে ততখানি ই প্রিয়জনের প্রতীক্ষা লুকায় তার নুয়ে থাকা অন্ধকারে। বারবিকিউ আর এরাবিয়ান কফির সুগন্ধে আমি বুকে ভরে নিঃশ্বাসে ভেবে নেই তেলেভাজা আর চা' য়ের সুবাস। এ শহরে নেই সকালের কাক শোরগোল, রিকশার টুংটাং অথবা বিকেলের সিঙ্গারা র তেলের ঘ্রাণ।
" নাথিং ইজ ইম্পসিবল " নামের এ শহরে কাদামাটি সবুজের এক কোন রেখেছি শ্যামলিমায়; ক্লান্তদিনের সুখ করে, শ্রান্ত সময়ের শান্তি ভেবে। আঁজলায় ঢেকে রাখি হলদে ফুলের রঙ দু' একটা কাঁচা মরিচ অথবা গোলাপের কুঁড়ি। মাঝে মাঝে ই সেখানে খুনসুটি'র খেয়া বায় এক ঘুঘু দম্পতি। রোদের ঝাঁজ কমে এলে পায়ে পায়ে তারা দ্বৈত নাচের ছন্দে মাতে আমাকে উপক্ষা করেই। গেল বছর এ সময়ে বৃষ্টি ঝড়ে ঝরা ফুলের সাথে ঘুঘু পাখির ডিম পেয়েছিলাম নীম গাছের তলায়। আমার ভোরের স্নিগ্ধতা ম্লান করেছিল মা ঘুঘুর ভাঙা হৃদয়ের কান্না। আশায় ছিলাম পরের বার নিশ্চয়ই আঙিনায় খেলবে এক্কা দোক্কা নড়বড়ে পা।
অপেক্ষা র মধুর এ সমাপ্তি'র বিহবলিত প্রকাশ এ লেখা;
অবশেষে-
আজ বিকেলের নরম আলোয় দেখা মিলল, কত্থকের বোলের যুগল ফসল! ঘুঘু বুকের ধুকপুকানি নিয়েই দেখতে পেলাম মুক্ত রাখা পাখির বাসা। যদিও মাত্র একটাই ডিম!! কিন্তু আমার দেখার আর রাখার আনন্দ অসীম। এখন শুধু প্রতীক্ষা ছোট্ট ঘুঘুর ছটফটানি, টলমলে পায়ের ছাপের নকশা।
ছবি আমার নিজের!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৫৭