ছোট বেলায় এরকম গরমে মা পাউডার দিয়ে দিতো গলায়,পিঠে! সেই সময় পাউডার রাখার জন্য এক ধরণের গোলাকার পাউডারদানী ছিল সাথে একটা পাউডার মুছনি।
সকাল বেলা গোসল করে কপালে একটা কালো টিপ এবং পাউডার দিয়ে সাদা একটা সেন্ডো গেঞ্জি গায়ে দিয়ে ছেড়ে দিতো খেলা করতে! সেই সময় হাফ প্যান্ট পড়ে পকেটে হাত দিয়ে বাবুগিরি দেখাইতাম আমরাও! মায়ের সেই পাউডারদানীর কথা আজও মনে আছে।
সরিষার তেল চুলে দিয়ে মাথায় চিরুনী করে দিতো থুতনি ধরে। এখনকার মায়েরা এসব করে না! সেই গোলাকার পাউডারদানী গুলোও হারিয়ে গেছে! এখন প্রচন্ড গরমে সন্তানরা বৈদ্যুতিক পাখার নিচে বসে থাকে আর বিদ্যুৎ না থাকলে বাইরে বসে থাকে।
দিন বদলের সাথে সাথে অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে আমাদের সংস্কৃতি থেকে। পরিবর্তনশীল সংস্কৃতির নিত্যনতুন আবির্ভাব আমাদের পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছে! আমরাও এসবের সাথে তাল মিলিয়ে আজকে নিজেদের আধুনিক বলে দাবী করছি!!
একটা সময় আমরা হাফ প্যান্ট পড়েছি আর বর্তমানে ছেলেরা থ্রি-কোয়ার্টার পড়ে! আমরা গাদন,কিতকিত,চিবুড়ি, কানামাছি এসব খেলা খেলেছি আর এখনকার আধুনিক যুগের ছেলে মেয়ে মোবাইলে সাপ খেলা, টেম্পলরান, লুডু,বাইক রেস ইত্যাদি খেলা খেলা! আমরা খেলার ছলেই এক প্রকার শারীরিক পরিশ্রমে অভ্যস্ত ছিলাম আর এখনকার ছেলে মেয়েরা খেলার ছলে মানসিক পরিশ্রমে অভ্যস্ত হচ্ছে!!
নিত্যনতুন আবিষ্কার যেমন আমাদের উচ্চাভিলাষী করেছে তেমনি তৈরি হয়েছে সমাজে পুঁজিবাদী এলিট শ্রেণি এবং নিম্মবিত্ত শ্রেণি!! যদিও সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ কয়েক শ্রেণিতে বিভক্ত হয়েছে! বিশেষ করে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের পর এর প্রকাপ সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়! মানে মানুষ এবং সমাজের শ্রেণিবদ্ধতা!
সংস্কৃতির আগ্রাসনে এবং আকাশ সংস্কৃতির ফলে আমরা হারিয়েছি আমাদের নিজস্ব স্বকীয়তা! পশ্চিমা আর পার্শ্ববর্তী সংস্কৃতির ব্যবহারে আমরা এখন অর্থও ব্যয় করছি এসব সংস্কৃতির পেছনে!! পাশাপাশি পশ্চিমা এবং পার্শ্ববর্তী সংস্কৃতি খুব নিখুতভাবে আমাদের মগজ ধোলাই করে তাদের দেশের নাম,ডাক ঢুকিয়ে দিচ্ছে আমাদের ছেলে মেয়েদের মাথায়!!
আমরা লাভবান হওয়ার থেকে ক্ষতির পরিমাণ তাড়াচ্ছে বেশি! শুধু কি সংস্কৃতিই পরিবর্তনশীল? আমরা জানি,সভ্যতা,সংস্কৃতি,মানুষ,সমাজ,পরিবেশ এসব কিছুই নিয়মিতই পরিবর্তনশীল! এই যে এখন যেমন প্রচন্ড গরম সহ্য করতে হচ্ছে আমাদেরকে। আগে কি এরকম লাগাতার গরম হয়েছে কখনো?
অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি এসবও পরিবর্তন হচ্ছে দিনকে দিন! আমাদের একটা শ্রেণি এই গরমে যদিও আমাদের আবিষ্কৃত আধুনিক রুমে বসে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেমালুম গরমকে ঠান্ডা এবং ঠান্ডাকে গরম বানিয়ে দিচ্ছে! কিন্তু আমি ভাবছি ঐসব শ্রেণির কথা,যাদের বাড়িতে একটা বৈদ্যুতিক পাখাও নাই! যাদের টিনের চালার গরমে ঘরসহ পুড়ে যাওয়ার মত অবস্থায় থাকে! এসব শ্রেণির পরিবর্তন হয়,পরিবর্তন হয় বলেই হয়ত আজকে এই পুঁজিবাদী সমাজে এলিট শ্রেণিরা এসি রুমে বসে ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগাতে পারে!!