১। নিয়োগ ব্যবসাঃ আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে নিয়োগ ব্যবস্থা“ব্যবসায় পরিণত হয়েছে” ফলে একজন বেশি টাকার মালিক খারাপ ছাত্র হওয়ার সত্বেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিতে পারছে। তবে এই ক্ষেত্রটা সব জায়গায় সবার বেলায় সমান নাও হতে পারে। খারাপের মধ্যেও কিছু ভালো ছাত্র নিয়োগ পায়। তবে ভালোর মধ্যে যদি কিছু খারাপ নিয়োগ পেত তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থার এমন হাল হতো না।
২। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতিঃ আমাদের দেশের ৯০ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজনীতির কবলে বন্দি! রাজনীতিকে যেমন শিক্ষকরা হাতিয়ার বানিয়েছে তেমনি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে শিক্ষকরা মিছিল-মিটিং এ গিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বারোটা বাজিয়ে ছাড়ছে। একজন শিক্ষক মাসের পর মাস কিংবা সপ্তাহের পর সপ্তাহ ক্লাসরুমে না গিয়েও বেতন ভাতা খাচ্ছে ! আবার দলীয় শিক্ষকদের বলার মত কেউ নেই। বলতে গেলেই তো দলের ক্ষমতায় “ক্ষমতায়ন” দেখাবে !
৩। ছাত্র রাজনীতিঃ অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন,ছাত্ররা রাজনীতি না করলে দেশ পরিচালনা করবে কারা ? আবার বর্তমান বা অতীতে যারাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল তারা সবাই ছাত্র রাজনীতি করেই এসেছেন। হ্যা,আপনাদের সাথে আমিও একমত । ছাত্র রাজনীতি করেই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে হবে। কিন্তু যারা ছাত্র রাজনীতি করে আজকে বড় হয়েছেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল গুটি কয়েক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক ! মানে সব প্রতিষ্ঠানের রাজনীতি করা ব্যক্তিরা কিন্তু ভালো জায়গায় যেতে পারেনি। আবার অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও রাজনীতিবিদ হয়ে উঠে এসেছেন,তাদের উঠে আসার পিছনেও ছিল একটা বিরাট কল্পকাহিনী। যা বর্তমানের প্রেক্ষাপট কিংবা সমকালীন সময়ে সম্ভব নয়!
তাই দেশে এমন ব্যবস্থা চালু করা যায়,যেখানে দুই ধরণের প্রতিষ্ঠান থাকবে যেমন, দেশের কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি করতে পারবে ছাত্ররা আবার বাকি প্রতিষ্ঠান গুলোতে ছাত্ররা রাজনীতি করতে পারবে না। তখন যাদের রাজনীতি ভালো লাগবে তারা ঐসকল প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে এবং ছাত্রাবস্থায় রাজনীতি করতে পারবে। আবার যাদের রাজনীতি ভালো লাগবে না তারা রাজনীতিবিহীন প্রতিষ্ঠানে পড়া লেখা করবে।
৪। গণতন্ত্রের রাজনীতিঃ অনেকেই অবশ্য এগুলোর সাথে দ্বিমত পোষণ করবেন কারণ এগুলো বর্তমানে ঘটে যাওয়া আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র। অনেকেই আবার বলতে পারেন,তাহলে রাজনীতি কারা করবে ? আসলে আমাদের দেশীয় রাজনীতি কিংবা আমরা যাকে গণতন্ত্র বলি,এই গণতন্ত্রে সবাই রাজনীতির সাথে জড়িত। আপনি যদি সক্রিয় রাজনীতি করেন তাহলে সেটা হবে প্রত্যক্ষ বা মানুষ দেখানো। আবার আপনি যদি নিষ্কৃয় বা পরোক্ষভাবে রাজনীতি করেন তাহলে সেটা হবে পরোক্ষ রাজনীতি। মোট কথা সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষই রাজনীতির সাথে না চাইলেও যুক্ত হতে বাধ্য !
কারণ গনতন্ত্রে যেহেতু জণগনের ভোটে সরকার নির্বাচিত হয় সেক্ষেত্রে যেই সরকার একটা ভোট বেশি পাবে সেই ক্ষমতা গ্রহণ করবে। এখন কথা হলো,আপনি যদি আপনার নির্বাচনী অধিকার অর্থাৎ ভোটারাধিকার প্রয়োগ করেন তাহলে নির্বাচনে পছন্দের মানুষকে ভোট দিতে পারলেন এবং আপনি ভোট না দিলেও একজন প্রার্থী নির্বাচন হবে অন্তত নিজের ভোটে বা পরিবারের ভোটে । সেই ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতির গুরুত্বটা আমার কাছে নগন্য !
৫। ছাত্রদের ইন্টারনেট আসক্তিঃ বর্তমানে প্রতিটি ছাত্রের কাছে বিশেষ করে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করার পর ৯৭% ছেলে মেয়ের হাতে একটা করে ইন্টারনেট সক্ষমতার মোবাইল ফোন চলে আসে। সেটা পরিবার থেকেই হোক বা ছাত্রদের জমানো টাকায় হোক। আবার জেএসসি পাস করেও আমাদের দেশে প্রায় ৭০/৮০ ভাগ ছেলে মেয়ে ইন্টারনেটের সাথে আংশিক যুক্ত হচ্ছে। ফলে ইন্টারনেটে বেশি সময় দেওয়ার জন্য পড়া লেখা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে আমাদের ছেলে মেয়েরা। সেই সাথে বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনাও ঘটছে।
৬। চাপিয়ে দেওয়া পড়া লেখাঃ আমরা তো বর্তমানে বিয়ের আগে থেকেই প্রেমিকার সাথে কমিটমেন্ট করে রাখি,আমাদের বাচ্চা হলে আমরা তাকে ইঞ্জিনিয়ার বানাবো,ডাক্তার বানাবো,বিসিএস ক্যাডার বানাবো ! কিন্তু সেই ইঞ্চিনিয়ার হওয়া বাচ্চাটা সাইন্সে পড়তে পাড়েনি কিংবা ডাক্তার করার ইচ্ছেয় যে বাবা মা সন্তান জন্ম দিয়েছে সে বড় হয়ে ব্যবসায়ী হতে চায়। এভাবে আমাদের সন্তানের উপর চাপিয়ে দেওয়া পড়া লেখাও একটা সময় ছেলে মেয়েদের হতাশায় ভুগায়। ফলে রেজাল্ট খারাপ হয়ে যায়!!
৭। গরবী এবং অসহায়াত্বঃ আমাদের দেশের অনেক গরীব ছেলে মেয়ে অনেক বেশি মেধাবী। কিন্তু তারা অযত্ম,অবহেলা কিংবা সুযোগের অভাবে একটা সময় ঝড়ে পড়ে। হয়ত বা কোনো রকম জেএসসি অথবা এসএসসি নয়ত এইচএসসি পর্যন্ত যেতে পারে। তারপর সংসারের হাল ধরে বাকি জীবনটা চলে যায়। ফলে হেলায় ফেলায় কোনো মত পরীক্ষায় পাস করার চিন্তা ভাবনা মাথায় থাকে। বেশির ভাগ করে ফেল!!
পরিশেষে, আমাদের কারিগরি শিক্ষার দিকে নজর দেওয়া এখন সময়ের দাবী সেই সাথে দেশকে এগিয়ে নিতেও কারিগরি শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং আপনাদের বাচ্চাকে শুধুমাত্র গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থার ধারা থেকে বের করে সৃষ্টিশীল কোনো শিক্ষা ব্যবস্থায় উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিয়ে চলতে হবে ।
লেখকঃ এম এ মোমেন (সমাজবিজ্ঞান বিভাগ,দিনাজপুর সরকারি কলেজ)