জশনে ঈদ এ মীলাদুন্নবী দঃ, আসুন জানি সেই মহিমান্বিত সময়ের কথা
১২ ই রবিউল আউয়াল,সোমবার। ২২ এপ্রিল ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দ ভোর চারটা ২০ মিনিট। ভোরের আলো ফুটতে আরো কিছুটা সময় বাকী। শুক্লা দ্বাদশীর অপূর্ন চাঁদ অস্ত গেলো কিছু আগে। সুবহে সাদিকের সুখ নূরে পুবের আকাশ রাঙ্গা হচ্ছে। আলো আঁধারের দোল খেয়ে সমস্ত প্রকৃতি জেগে উঠছে নতুন দিনের প্রত্যাশায়। ঠিক সে মূহুর্তে দুনিয়ার বুকে ঘটে গেলো এক অসাধারন ঘটনা। আরবের মরু প্রান্তরের মক্কা নগরের এক নিবৃত কুটিরে এক মহান শিশুর আগমনের প্রতিক্ষা করছেন এক নারী। মক্কার কুরাইশ নেতা আবদুল মুত্তালিব এর পুত্র আব্দুল্লাহর ঘরে এ শিশুর আগমনের সুসংবাদ শোনা যাচ্ছিলো আজ বহুদিন যাবত। শিশুর মা আমেনা রাঃ দেখছেন এক অপূর্ব নূরে আসমান জমিন উজালা হচ্ছে। সেই আলোতে চন্দ্র তারা ঝলমল করছে। কার যেনো আজ আগমন। যেনো যুগান্তরের প্রতীক্ষিত সেই না আসা অতিথির আগমন মূহূর্ত আজ যেন আসন্ন হয়ে গেছে।কুল মাখলুক সে আনন্দে আত্মহারা।। সব কিছু আজ বিষ্মিত শিহরিত, আসমানে ফেরেশতাগন ছুটোছুটি করছে, পারস্যের রাজপ্রাসাদের ইট গুলো খসে খসে পড়ছে, কাবা মন্দিরের মূর্তিগুলো ভেঙ্গে খান খান, সিরিয়ার মরুপ্রান্তরে বইছে শীতল নহর।
মা আমেনা গত কয়েক মাস যাবত রাব্বুল আলামিনের মহান ফেরেশতা জিব্রাইলে আমিনের পক্ষ থেকে নানা সুসংবাদ শুনে আসছেন।আজ সে ফেরেশতা আবারো হাজির হয়েছেন রাতের এই শেষ সময়ে।
ধাত্রী শেফা বিনতে আসওয়াদ প্রতিক্ষা করছেন,সাথে দাঁড়িয়ে আছেন জিব্রাইলে আমিন নিজেও। যদিও দুনিয়াবাসী তা দেখতে পারছিলো না। শেফা শিশুটিকে এখনি দুনিয়াতে আনবেন কিন্তু হঠাত কোথা থেকে যেনো নাভির নিজ বরাবর কে যেনো একটা লম্বা ছুরি চালিয়ে দিলো শিশুটি ধরনীতে আসছে, শব্দ ভেসে আসছে জিব্রাইলে আমিনের মুখ থেকে ইজহার ইয়া রাসুল আল্লাহ দঃ ওগো আল্লাহর রাসুল আপনি আসুন , এ ধরনীর সব মাখলুকাত আপনার আগমনের প্রতিক্ষায় ব্যকুল।
নাভী কাটা অবস্থায়, বেহেশতি পোষাক পরা,চোখে সুরমা লাগানো, চুল গুলো সুন্দর করে কাটা অবস্থায় ধরার বুকে আগমন করলেন দোজাহানের বাদশা, নাবিউল আম্বিয়া নবী মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ দঃ ।
সঙ্গে সঙ্গে সারা সৃষ্টির অন্তর ভেদ করে ঝংকিত হলো,খোশ আমদেদ ইয়া রাসুল আল্লাহ,মারহাবা ইয়া হাবিবাল্লাহ।হুরপরীরা বেহেশতে পুষ্প বৃষ্টি ঝরাতে লাগলো,বিশ্ববানীতারে আগমনী গান বেজে উঠলো। আকাশ দুনিয়া সর্বত্রই বইতে লাগলো আলোড়ন,মরি মরি আজ যে বড় গৌরবের দিন। এলো সে মহান অতিথি যার জন্য হাজারো বছরের এতো প্রতীক্ষা।
এই সেই পয়গম্বর যার গুনগান বাইবেলে,বেদে,গীতায়,পার্সী ধর্মশাস্ত্রে,পুরানে,তাওরাতে।
আর সব শিশুরা জন্মের পর কাদতে শুরু করে কিন্তু এ শিশু শাহাদাত আঙ্গুল উপরে উঠিয়ে ঘোষনা দিতে লাগলো আশশাদু লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহু ওয়া আন্নী রাসুলাল্লাহ, এর কিছু পরেই বলে উঠলেন ঠিক যেনো মাইকের মতো করে শব্দ করে রাব্বী হাবলী উম্মাতি ( হে আল্লাহ আমার উম্মতকে আমার কাছে দিয়ে দাও)
হঠাত অদৃশ্য থেকে শব্দ আসতে লাগলোঃ এই শিশুটিকে আদম আঃ এর উন্নত চরিত্র, শীশ আঃ এর আধ্যাতিক শক্তি, ইব্রাহীম আঃ এর মতো খোদা প্রেমিক, ঈসমাঈল আঃ এর মতো খোদায়ী ভালোবাসায় কোরবান , লুত আঃ এর মতো জ্ঞানী, ইউসুফ আঃ এর মতো সুন্দর করে প্রেরন করা হয়েছে।
ইরান এর শহরে অগ্নিপূজকদের এক হাজার বছর ধরে জ্বলা অগ্নিকুন্ড হটাত ধপ করে নিভে গেলো, ইরানের সম্রাট নওশেরওয়ান এর মহল" কাসরে আবু ওয়াজ" ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশে গেলো, মক্কার এক ইয়াহুদী এসে শিশু মুহাম্মদকে দেখলো আর চিৎকার করে বলতে লাগলো ওয়াইলুল্লি বানী ইসরাঈল ( বনী ইসরাঈল ধ্বংস হয়ে গেলে, তোমাদের থেকে নবুয়্যাত আজ বনী হাশেম এর কাছে চলে আসলো) হে কুরাইশ তোমাদের মুবারকবাদ, ইরানের আরেক সম্রাট এর কাছে জানানো হলো কোন কারনে আগুন নিভে গেছে পূজার, সম্রাট খ্রিষ্টান পাদ্রী আব্দুল মাসীহকে ডাকলেন, আব্দুল মাসীহ তার গুরু ছাতীহ এর কাছে গেলেন , পাদ্রী সাতিহ তার ছাত্রকে দেখে বললেন তুমি কেন এসেছো আমি জানি, যাও ইরানের বাদশাকে বলে দাও শেষ নবী এসে পড়েছেন।
এতো মহাবিষ্ময়কর ঘটনায় অবতরনে আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত হিসাবে সারা দুনিয়ার রহমত নাবীয়ে কারীম সাঃ কে পেয়ে দুনিয়ার মানুষেরা আনন্দে আত্মহারা খুশিতে মাতোয়ারা। আর তাইতো গত ১৪ শ বছর যাবত নবীর উম্মতগন এই দিনকে খুশির দিন হিসাবে পালন করে আসছে।
এক বন্ধু Md Aziz কমেন্ট করলেন ঈদের চাঁদ টি কোথায় ওঠেছে : ঈদে মীলাদুন্নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রসঙ্গ
----------+-++++++++--------------
Md Aziz, নবীর ভালোবাসার চাঁদ দেখা যায়
না। তাই জাতীয় কবি বলেছিলেন ----- সবাই
খুশি ঈদের চাঁদে, আমার কেন পরান কাঁদে ;
কখন আমি দেখবো আমার, ঈদের চাঁদ
মুস্তফাকে।। কবি গোলাম মোস্তফার কথাও
কম সুন্দর নয়। তিনি বলেছিলেন ----" চাঁদ -
সুরুয আকাশে আসে, সে আলোয় হ্রদয় না
হাসে, এলে তাই হে নব রবি, মানবের মনের
আকাশে।। আহা আমাদের ঐতিহ্যের ধারক
এ কবিরা , আজ থেকে অন্তত ৭৫ বছর আগে
আপনার আজকের প্রশ্নগুলোর কী সুন্দর উত্তর
তৈরী করে রেখেছিলেন। আল্লাহ তাঁদের
জান্নাত নসীব করুন। কবি নজরুল ইসলাম
বলেছিলেন ---- আজকে খুশীর ঢল নেমেছে,
ধুসর সাহারায় " , ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ
এলরে দুনিয়ায়--- --। ইনশাল্লাহ্ কালও খুশীর
ঢল নামবে, জশনে জুলুছ নাম ধারন করে।
আল্লাহ সহীহ্ সমজ দান করুন।
কিন্তু সব কিছুর শেষ যে কথাটি বলতে চাই ধরার বুকে কদম রাখা মাত্র যিনি উম্মতি উম্মতি বলে আল্লাহ কাছে পানাহ চান সে আমরা কতটুকু মনে রেখেছি আমাদের মায়ার নবীকে। আমরা নবীকে দঃ কতটুকু ধারন করেছি আমাদের জীবনে চলার পথে। আমরা আমাদের পারিবারিক জীবন,ব্যবসা বানিজ্য, আত্মীয়তা বন্ধুত্ব সব কিছু থেকে নবীকে বের করে দিয়েছি বহু আগে।
আসুন এবারের মীলাদুন্নবী দঃ এ শপথ নেই দয়াল নবীর কদমে নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দেবার। আসসালাতু ওয়াসসালু আলাইকা ইয়া রাসুল আল্লাহ দঃ
সবাইকে ১৪৪৫ তম পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী দঃ এর শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।