মিতাকে তার ৫ বছর বয়সী ছেলে রাহানকে নিয়ে কম সমস্যা পোহাতে হচ্ছে না। হোমওয়ার্ক দিয়ে গেলে কিছুক্ষণ পর দেখা যায় একই জিনিস নিয়ে বসে আছে আবার কখনও দেখা যায় এক জায়গায় অনেকক্ষণ বসে থাকতে পারছে না।হয়ত হটাত করে লাফ দিলো,কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে তা শোনার আগেই উত্তর দিয়ে দিলো, অনবরত নড়াচড়া করছে-নানাবিধ সমস্যা। ক্লাসটিচারের কাছ থেকেও শুনতে হচ্ছে সময়মত হোমওয়ার্ক না করার অভিযোগ। এ সমস্যাকে বলা হয় এডিএইচডি অথবা অ্যাটেনশান ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার।শিশুর এ ধরণের সমস্যায় বাবা-মাকে কম ভোগান্তি পোহাতে হয় না। ছোটবেলা থেকে চিকিৎসা না করালে বড় হয়ে এই সমস্যাগুলো অনেক বড় আকার ধারণ করবে। এডিএইচডি শিশুদেরকে নিয়ন্ত্রন করতে প্রাথমিকভাবে বাবা-মা রা নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন--
কাজগুলোকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিয়ে ক্যালেন্ডারে লিখে রাখুন, সেই ক্যালেন্ডার কিভাবে অনুসরণ করতে হবে তাকে শিখিয়ে দিন। রুটিন তৈরি করে কাজ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।স্কুলের পরে ও যাওয়ার আগে এবং ছুটির দিনগুলোতে রুটিন ফলো করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।বাচ্চাদেরকে ছোটবেলা থেকে যে অভ্যাসে গড়ে তোলা হয় পরবর্তিতে সেটিই অনুসরন করে।যেমন রাত ৮ টায় ঘুমাতে যাওয়ার সময় ঠিক করা থাকলে তখনি বিছানায় পাঠাতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পর আপনার শিশুটিকে কিছু বলা লাগবে না, সে এমনিতেই ৮টার মধ্যে ঘুমিয়ে পরবে।আর যদি তাকে সময় না বেঁধে দেয়া হয়, যখন খুশি সে ঘুমাবে যা পরে তার বদঅভ্যাসে পরিণত করবে।
আপনার অস্থির ও দুরন্ত শিশুকে কোন কিছু বোঝানোর সময় জটিল ভাষা পরিহার করে সরল ভাষা ব্যবহার করুন।তা না হলে তারা আপনার কথায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলবে।
খাবার গ্রহণের কারনেও অস্থিরতা বাড়তে পারে তাই যেসব দিনে অস্থিরতা বেশী দেখাচ্ছে সেই দিনগুলোতে কি কি খাবার খেয়েছে সেগুলো বের করুন এবং সেইগুলো খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিন।
শিশুর প্রত্যাশিত আচরণের জন্য তাকে পুরস্কৃত করতে হবে। মারধর বা বকাঝকা করে কোন কিছুর সমাধান পাওয়া যায় না।
রাতে টিভি দেখতে দেয়া যাবে না।টিভি থেকে আসা উচ্চমাত্রায় শব্দ এডিএইচডি শিশুদের অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দেয়। দিনে একটা বা দুটো প্রোগ্রাম ঠিক করে দিন কোনটি সে টিভিতে দেখবে।
যেহুতু তারা বসে থাকার চেয়ে বেশী করে হাত পা নাড়াচাড়া করতে পছন্দ করে তাই তাদের বেশী উদ্দীপনার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শিশুকে দৌড়ানো বা সাঁতার কাটার মতো শারীরিক শ্রমযুক্ত খেলাধুলার ব্যবস্থা করা যায়।
অবসর সময়ে পার্ক থেকে ঘুরে আসতে পারেন। একসাথে মজা করে যেকোন একটি বই পড়ুন।এই সব মুহূর্তগুলো আপনার হাইপার একটিভ শিশুর সাথে বন্ধন সুদৃঢ় করবে।
এডিএইচডি সমস্যায় ভুগছে অর্থাৎ হাইপার একটিভ শিশুরা পড়ার সময় মনোযোগ একেবারেই বসাতে চায় না। তাই তাদের পড়ার সময় আশেপাশের জিনিসগুলো সরিয়ে রাখতে হবে ও পড়তে বসার আগে কোনরকম শব্দ যেন কোনোমতেই সেখানে গিয়ে না পোঁছায় সেইদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
স্কুলের শিক্ষককে শিশুর সমস্যার কথা জানাতে হবে যেন ক্লাসে তার সাথে জটিল আদেশ না করে সরলভাবে কথা বলে।
______মাকসুদুল কবীর সোহেল
০১৭১৯-৫২৩১২৪
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৪ রাত ১:২০