somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশুর উপর পড়াশোনার চাপ কতটুকু দেওয়া উচিৎ

১০ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র
নানান ভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবারাত্র।

একজন মানব শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় তার শিক্ষা জীবন। এবং সেটি আমৃত্যু চলতে থাকে। এই শিক্ষা লাভের বিষয়টির একটি অংশ প্রকৃতিগত, যা সে নিজে নিজেই শিখে, আর একটি প্রথাগত যা তাকে শিখাইতে হয়। এই প্রথাগত শিক্ষার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যার শুরুর ধাপটি হলো স্কুল। এখন প্রশ্ন হলো, একটি শিশুর স্কুলের প্রথম বছর গুলো থেকে তার উপর কি কি বিষয় চাপানো উচিৎ বা কতটুকু চাপানো উচিৎ?
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একটা বড় অংশ হলো মুখস্থ নির্ভর। যদিও বিগত কয়েকবছর ধরে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হয়েছে, তথাপি সার্বিকভাবে এর প্রভাব তেমন একটা পড়েনি। তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুর অভিভাবকদের মধ্যে শুরু হয় একধরণের অসুস্থ প্রতিযোগিতার, কার শিশু কত বেশি জানে। অবশ্য এখানে জানে বলার চেয়েও বোধহয় বললে ভালো হয়, বেশি মুখস্থ করেছে।
আর শুধু অভিভাবকই নয়, ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা কিন্ডার গার্ডেন স্কুল গুলো, পাশাপাশি অনেক নামীদামী স্কুলের মধ্যেও দেখা যায় একরকম অসুস্থ প্রতিযোগিতার। ব্যাপারটা অনেকটা এমন যেন, যত ছোটবেলায় বেশি কঠিন জিনিস গুলো বাচ্চাকে শেখানো বা মুখস্থ করানো যাবে, তত স্কুলের সুনাম বৃদ্ধি পাবে।
ঘরে এবং স্কুলের এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে শিশুর জীবনের সবচেয়ে মধুর সময় শৈশব হয়ে যাচ্ছে পানসে। তাই শিশু কালে তাকে জোড় করে বারোমাসের নাম মুখস্থ করালেও বলতে পারবেনা এখন কোন মাস চলে। তার জন্য আবার বই খুলতে হয়। বইয়ে মুখস্থ না করিয়ে যদি শৈশবে বাচ্চাকে নিয়ে একটু গাছপালা বা প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে দেখানো যেত এখন গাছে আমের মুকুল, তাই এটা ফাগুন মাস, গাছে তাল পেকেছে তাই এই মাসটার নাম হবে ভাদ্র, তা হলে শিশুটি যেমন মজাও পেত, তেমন তার উপর কোন মানসিক চাপও পড়ত না।
অনেকে ভাবছেন, এসব বাংলাদেশী ব্যাপার, আমার ছেলেমেয়ে তো ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে, ভবিষ্যতে দেশের বাইরে থাকবে, ওদের এইসব জেনে কি হবে? এর চেয়ে যত তাড়াতাড়ি হামটি ডামটি থেকে আরও উঁচু লেভেলের কবিতা মুখস্থ করতে পারবে তত ভালো। তাহলে আপনি অনেক বেশি ভুল বুঝেছেন। গাছপালার কাছে নিয়ে গিয়ে বাংলা মাসের নাম শিখানোর অর্থ তা নয়। এর অর্থ তোমার চারপাশের পরিবেশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জানবার অনেক কিছু। একটু চোখ কান ছোটো থেকেই খোলা রেখে শিখতে চেষ্টা কর। জান ও মজা পাও।
আমার খুব পরিচিত একটা শিশুর স্কুলের কথা শুনে রীতিমতো আঁতকে উঠেছি। তার বয়স সাত বছরের মতো, অথচ তাকে স্কুল থেকে মুখস্থ কতে দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভৌগলিক অবস্থান। আমি বাজি ধরে বলতে পারি, বারাক ওবামাকে যদি এই প্রশ্ন করা হয়, তিনি না দেখে মুখস্থ বলতে পারবেন না।
তাই, এসকল অসুস্থ প্রতিযোগিতায় না গিয়ে শিশুর শৈশবকে করে তুলুন আনন্দময়। সে স্কুল থেকে ফিরলে, কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামির মতো তার পড়াশোনা নিয়ে জিজ্ঞাসা না করে শুরুতে প্রশ্ন করুন, নতুন কোন কোন বন্ধু হয়েছে ক্লাসে। এরপর দেখবেন সে নিজ থেকেই তার পড়াশোনার কথা বলা শুরু করেছে। হাজারটা উদাহরণ আছে যে ছোটবেলায় রেজাল্ট অনেক ভালো অথচ জীবনে বেশিদূর আগাতে পারেনি। তাই শিশু যতটুকু চাপ সহ্য করতে পারে ততটুকু দিন। জীবনে বড় হতে হবে, এই বোধের বীজ রোপণ করুন, কিন্তু ভুলেও তাড়াতাড়ি ফল পাওয়ার জন্য কলম করতে যাবেন না। তাহলে ফল ধরলেও একটু বৈরী পরিবেশে গাছের অবস্থা কেরোসিন হয়ে পড়তে পাড়ে। আপনার শিশুর মধ্যে একবার বোধ চলে আসলে আপনার আর কিছুই করতে হবে না। দেখবেন সে নিজ থেকেই দৌড়াচ্ছে।

পরিশেষে, প্রতিটি শিশু আদর্শ মানুষ হয়ে গড়ে উঠুক, এই কামনা___
মাকসুদুল কবীর সোহেল
০১৭১৯-৫২৩১২৪
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৪ রাত ৮:১৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×