বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র
নানান ভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবারাত্র।
একজন মানব শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় তার শিক্ষা জীবন। এবং সেটি আমৃত্যু চলতে থাকে। এই শিক্ষা লাভের বিষয়টির একটি অংশ প্রকৃতিগত, যা সে নিজে নিজেই শিখে, আর একটি প্রথাগত যা তাকে শিখাইতে হয়। এই প্রথাগত শিক্ষার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যার শুরুর ধাপটি হলো স্কুল। এখন প্রশ্ন হলো, একটি শিশুর স্কুলের প্রথম বছর গুলো থেকে তার উপর কি কি বিষয় চাপানো উচিৎ বা কতটুকু চাপানো উচিৎ?
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একটা বড় অংশ হলো মুখস্থ নির্ভর। যদিও বিগত কয়েকবছর ধরে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হয়েছে, তথাপি সার্বিকভাবে এর প্রভাব তেমন একটা পড়েনি। তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুর অভিভাবকদের মধ্যে শুরু হয় একধরণের অসুস্থ প্রতিযোগিতার, কার শিশু কত বেশি জানে। অবশ্য এখানে জানে বলার চেয়েও বোধহয় বললে ভালো হয়, বেশি মুখস্থ করেছে।
আর শুধু অভিভাবকই নয়, ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা কিন্ডার গার্ডেন স্কুল গুলো, পাশাপাশি অনেক নামীদামী স্কুলের মধ্যেও দেখা যায় একরকম অসুস্থ প্রতিযোগিতার। ব্যাপারটা অনেকটা এমন যেন, যত ছোটবেলায় বেশি কঠিন জিনিস গুলো বাচ্চাকে শেখানো বা মুখস্থ করানো যাবে, তত স্কুলের সুনাম বৃদ্ধি পাবে।
ঘরে এবং স্কুলের এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে শিশুর জীবনের সবচেয়ে মধুর সময় শৈশব হয়ে যাচ্ছে পানসে। তাই শিশু কালে তাকে জোড় করে বারোমাসের নাম মুখস্থ করালেও বলতে পারবেনা এখন কোন মাস চলে। তার জন্য আবার বই খুলতে হয়। বইয়ে মুখস্থ না করিয়ে যদি শৈশবে বাচ্চাকে নিয়ে একটু গাছপালা বা প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে দেখানো যেত এখন গাছে আমের মুকুল, তাই এটা ফাগুন মাস, গাছে তাল পেকেছে তাই এই মাসটার নাম হবে ভাদ্র, তা হলে শিশুটি যেমন মজাও পেত, তেমন তার উপর কোন মানসিক চাপও পড়ত না।
অনেকে ভাবছেন, এসব বাংলাদেশী ব্যাপার, আমার ছেলেমেয়ে তো ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে, ভবিষ্যতে দেশের বাইরে থাকবে, ওদের এইসব জেনে কি হবে? এর চেয়ে যত তাড়াতাড়ি হামটি ডামটি থেকে আরও উঁচু লেভেলের কবিতা মুখস্থ করতে পারবে তত ভালো। তাহলে আপনি অনেক বেশি ভুল বুঝেছেন। গাছপালার কাছে নিয়ে গিয়ে বাংলা মাসের নাম শিখানোর অর্থ তা নয়। এর অর্থ তোমার চারপাশের পরিবেশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জানবার অনেক কিছু। একটু চোখ কান ছোটো থেকেই খোলা রেখে শিখতে চেষ্টা কর। জান ও মজা পাও।
আমার খুব পরিচিত একটা শিশুর স্কুলের কথা শুনে রীতিমতো আঁতকে উঠেছি। তার বয়স সাত বছরের মতো, অথচ তাকে স্কুল থেকে মুখস্থ কতে দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভৌগলিক অবস্থান। আমি বাজি ধরে বলতে পারি, বারাক ওবামাকে যদি এই প্রশ্ন করা হয়, তিনি না দেখে মুখস্থ বলতে পারবেন না।
তাই, এসকল অসুস্থ প্রতিযোগিতায় না গিয়ে শিশুর শৈশবকে করে তুলুন আনন্দময়। সে স্কুল থেকে ফিরলে, কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামির মতো তার পড়াশোনা নিয়ে জিজ্ঞাসা না করে শুরুতে প্রশ্ন করুন, নতুন কোন কোন বন্ধু হয়েছে ক্লাসে। এরপর দেখবেন সে নিজ থেকেই তার পড়াশোনার কথা বলা শুরু করেছে। হাজারটা উদাহরণ আছে যে ছোটবেলায় রেজাল্ট অনেক ভালো অথচ জীবনে বেশিদূর আগাতে পারেনি। তাই শিশু যতটুকু চাপ সহ্য করতে পারে ততটুকু দিন। জীবনে বড় হতে হবে, এই বোধের বীজ রোপণ করুন, কিন্তু ভুলেও তাড়াতাড়ি ফল পাওয়ার জন্য কলম করতে যাবেন না। তাহলে ফল ধরলেও একটু বৈরী পরিবেশে গাছের অবস্থা কেরোসিন হয়ে পড়তে পাড়ে। আপনার শিশুর মধ্যে একবার বোধ চলে আসলে আপনার আর কিছুই করতে হবে না। দেখবেন সে নিজ থেকেই দৌড়াচ্ছে।
পরিশেষে, প্রতিটি শিশু আদর্শ মানুষ হয়ে গড়ে উঠুক, এই কামনা___
মাকসুদুল কবীর সোহেল
০১৭১৯-৫২৩১২৪
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৪ রাত ৮:১৬