somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেভাবে শেখালে অঙ্ক ভালো লাগবে শিশুদের

২৫ শে মে, ২০১৪ রাত ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভোলানাথ লিখেছিল, তিন-চারে নব্বই।
গণিতের মার্কে, কাঁটা গেল সর্বই।
তিন-চারে বার হয়,
মাস্টার তারে কয়।
"লিখেছিনু ঢের বেশী" এই তার গর্বই।
আমরা হয়তো কেউই চাইব না আমার বা আপনার শিশু সন্তানটি ভোলানাথ এর মত গর্ব করুক। অতি প্রাচীন কাল থেকে নামতা শিক্ষাটি আমাদের গণিতের সাথে এমন করে লেগে আছে যে খুব ছোট বেলায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অনেকের কাছেই তা জ্বরের তিতা ওষুধ এর চেয়ে বেশী অস্বস্তিকর লাগে। যার ফলস্বরূপ গণিত হয়ে ওঠে ভীতিকর এক দুঃস্বপ্ন। এই দুঃস্বপ্ন আবার অনেকের কাছে ছন্দ-রূপে ফিরে আসে এভাবে--
আমি যদি বাবা হতাম! বাবা হতো খোকা,
না হলে তার নামতা পড়া মারতাম মাথায় টোকা।
তাই আপনার সন্তান যেন আপনার মাথায় টোকা মারার পরিবর্তে আপনার কপালে চুমু খায় সে দিকেই বোধ করি আমাদের নজর দেওয়া উচিৎ।
সত্যি কথা বলতে গণিত অত্যন্ত মজার একটা বিষয়, আর ছোটবেলা থেকে যদি আপনার শিশুর মাঝে গণিতের মজা পাওয়াটা একবার চলে আসে, তবে তাকে উৎসাহ দিতে থাকুন,কারণ বলা যায় না সেও হতে পারে ভবিষ্যতের রামানুজেন, নিউটন বা আইনস্টাইন। এখন কথা হল, কি ভাবে এই মজা তৈরি করবেন? আর সত্যি কথা বলতে এর কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। কারণ এক একটা মানুষ এক এক ভাবে শিখে মজা পায়। তবে একথা সত্যি, ভয় পাওয়ার ব্যাপারে শিশুরা সব একই রকম। তাই ছোটবেলা থেকে আপনার শিশু যখন গণিত শেখা শুরু করবে অন্তত এতটুকু চেষ্টা করুন, সে যেন গণিত নিয়ে ভয় না পায়। গণিত যেন তার কাছে না হয়ে ওঠে জীবন্ত বিভীষিকা, শুধু পরীক্ষা পাশের বিষয়।
দেখি নিচের পদ্ধতি গুলো আমাদের বাচ্চাদের কাজে লাগে কি না--
খুব ছোটবেলা থেকেই দেখবেন কিছু খেলনা আছে যেগুলো বাচ্চাদের খেলার ছলে গণিত শেখায়। এমন খেলনা দিয়ে দেখতে পারেন আপনার শিশুকে।
বাচ্চাকে চকোলেট বা টফি দেওয়ার সময় হয়তো বা তার সাথে খেলে ফেলতে পারেন গণনার খেলা। খেলার ছলে শিখিয়ে দিতে পারেন যোগ বিয়োগের মত প্রাথমিক বিষয় গুলো।
গণিতের মজা আসবে যত বেশী গণিত নিয়ে চর্চা করবে তত। তবে খেয়াল রাখবেন সে যেন পরীক্ষা পাস বা বেশী মার্কের জন্য তা অবুঝের মত মুখস্থ না করে। কারণ না বুঝে মুখস্থ তার প্রতিভাকে করে তুলতে পারে ধ্বংসের সম্মুখীন।
আপনার বাচ্চা কোন একটা অংকে আটকে গেলে তাকে বিষয়টা বুঝিয়ে দিন। আপনি না পারলে যিনি পারেন তাঁর সহযোগিতা নিন এবং সেটা হয়ে গেলে পরে, সে আসলে বুঝেছে কিনা সে জন্য তাকে সেরকমই আর একটা অংক করতে দিন। যদি সে সত্যি বুঝে থাকে তবে নিজে থেকেই পারবে। না পারলে সমস্যা নেই আবার বোঝান, কারণ কথাতেই আছে, "একবার না পারিলে দেখ শতবার।"
এ কথাটি শুধু আপনার বাচ্চার বেলায় নয় আপনার বেলাতেও প্রযোজ্য।
পাঠ্য পুস্তকের বাইরে এখন বাচ্চাদের বেশ কিছু মজার মজার গণিতের বই পাওয়া যায়, আপনার সন্তানের সে গুলো পড়ার অভ্যেস গড়ে তুলতে পারেন।
অসংখ্য শিশু কিশোরদের প্রিয় মানুষ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ সহ অনেক গণিত প্রেমি মানুষের কল্যাণে এখন গণিতের যে উৎসব চালূ হয়েছে আপনার সন্তান কে এ সকল উৎসব এ যোগ দেওয়ার ব্যপারে উৎসাহিত করতে পারেন।
গণিত অনেকে মনে করে রস বিহীন এক বিষয়, আসলে ব্যপারটা মোটেও তা নয়। আপনি যদি গণিতবিদদের জীবনী গুলো পড়েন তা হলে দেখতে পাবেন সেখানে রীতিমত উপন্যাস রয়েছে,রয়েছে চরম নাটকীয়তা। তাই আপনার সন্তানকে যখন গণিত শেখাবেন তখন যেন সে পাশাপাশি জানে আর্কিমিডিসের সোনার মুকুটের কাহিনী। গির্জার পাদ্রি ও সমাজপতি করতিক গ্যালিলিওর করুন কারাবরণ। তাকে পড়ে শোনান রামানুজনের কথা, যে কিনা আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের মত অনুন্নত দেশ থেকে হয়ে ছিলেন গণিতের এক বিস্ময় প্রতিভা। নিউটনের জীবনী হতে পারে আপনার সন্তানের মনোরঞ্জনের খোরাক। আইনস্টাইনের দর্শন হতে পারে আপনার শিশুর ভালোলাগার বিষয় বস্তু। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় যে গণিতের ছোঁয়া সেটা পড়ে আপনার সন্তান যে মজা পেতে পারে, তেমনটা মজা হয়তো বা সে কোন সাইন্সফিক্সন বই বা সিনেমাতে নাও পেতে পারে।
সবশেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের খেয়াল রাখতে হবে দুনিয়াতে সবাই আইনস্টাইন হতে আসিনি। তাই কেউ আইনস্টাইনের মত বিজ্ঞানী হবে, তেমনি করে রবীন্দ্রনাথ হয়ে কেউ কেউ রচনা করবে কবিতা, উপন্যাস, গল্প বা নাটক। তাই আপনার সন্তান যদি গণিতে ভাল না হয় তা নিয়ে হতাশ হবার কিছু নেই। তাকে বোঝাতে থাকুন। গণিতের মজার দিকটা তুলে ধরুন তার সামনে। এর পরেও যদি সে গণিত বিমুখ হয় তবে তাকে মানসিক বা শারীরিক চাপ প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন এবং সর্বোপরি সে যে বিষয়ে মজা পায় সে বিষয়ে পড়তে উৎসাহিত করুন।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×