_________মাকসুদুল কবীর সোহেল
অধিকতর একীভূত সমাজ গঠনে আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের ফলে প্রতিবন্ধী শিশু ও তাদের পরিবারগুলোর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকে তাদের এলাকার নাগরিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। একীভূতকরণের মাধ্যমে সমতার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে তা হলো:
১. জাতিসংঘ প্রতিবন্ধি ব্যক্তিবর্গের অধিকার সনদ ও শিশু অধিকার সনদ অনুমোদন ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে এবং সাধারন মানুষ, নীতিনির্ধারক ও শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সুরক্ষার মতো জরুরি সেবা যারা দিয়ে থাকেন তাদের মধ্যে প্রতিবন্ধীত্ব বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
৩. একীভূতকরণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে হবে যেন পরিবেশ শিশুবান্ধব হয় যেমন: বিদ্যালয়, স্বাস্থ্যসেবা, জনপরিবহণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রবেশগম্যতা সহজ হয় এবং প্রতিবন্ধী শিশুরা যেন সহপাঠি বা সমবয়সীদের মতো অংশগ্রহণে উŤসাহিত হয়।
৪. প্রতিবন্ধি শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ বন্ধ করতে হবে। শুরু করতে হবে নতুন কোন শিশুকে প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বন্ধ করার মাধ্যমে। এর জন্য পরিবারভিত্তিক সেবা ও কমিউনিটিভিত্তিক পুনর্বাসনের বিস্তার ঘটাতে হবে এবং এসব ক্ষেত্রে সহায়তা তরান্বিত করতে হবে।
৫. পরিবারগুলোকে সহায়তা করতে হবে যেন তারা প্রতিবন্ধী শিশুদের জীবনযাপনের জন্য বাড়তি খরচ মেটাতে পারে এবং আয়ের হারানো সুযোগ ফিরে পেতে পারে।
৬. প্রতিবন্ধী শিশু ও তাদের পরিবারের চাহিদা পূরণের জন্য যেসব সহায়তা এবং সেবার পরিকল্পনা করা হয় সেগুলো মূল্যায়নে প্রতিবন্ধী শিশু ও কিশোর-কিশোরীসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে এর নূন্যতম মানকে ছাড়িয়ে যেতে হবে।
৭. সব খাতের সেবাসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে যেন প্রতিবন্ধী শিশু, কিশোর-কিশোরী ও তাদের পরিবার যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় সেগুলোকে পূর্ণমাত্রায় মোকাবেলা করা সম্ভব হয়।
৮. প্রতিবন্ধী শিশু, কিশোর-কিশোরীদের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধী শিশু, কিশোর-কিশোরীকেও শুধু সুবিধাভোগী হিসেবে নয়, বরং পরিবর্তনের প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৯. প্রতিবন্ধীত্ব বিষয়ে একটি বৈশি^ক সামঞ্জস্যপূর্ণ গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে। এর মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য ও তুলনাযোগ্য উপাত্ত পাওয়া যাবে যা পরিকল্পনা এবং সম্পদ বন্টন সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিবে এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী শিশুদের বিষয় আরো সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করবে।
সকল বৈশি^ক ও জাতিয় প্রচেষ্টার চুড়ান্ত প্রমাণ হবে স্থানীয় পর্যায়ে যেখানে মূল বিষয় হবে প্রতসটি প্রতিবন্ধী শিশু অন্যান্য শিশুর মতো স্বাস্থ্য সেবা, সহায়তা ও সুযোগ প্রাপ্তিসহ তাদের সকল অধিকার উপভোগ করতে পারছে কিনা। এমনকি সবচেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ও সবচেয়ে বঞ্চনাময় পরিবেশেও এই উদ্যোগ থেকে বাদ পড়বে না।
(সূত্র: বিশ^ শিশু পরিস্থিতি ২০১৩, ইউনিসেফ)
মাকসুদুল কবীর সোহেল
উন্নয়ন কর্মী, ঢাকা, বাংলাদেশ
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:২৩