মাছ ধরা=
সেদিন এক ছোটখাট বিপদ হতে রক্ষা পেলাম।
পাশের মহল্লার দিলদার ভাই ফোনে বললেন, 'চলুন, লেকে মাছ ধরতে যাই।'
কানাডার লেকগুলোতে বেশ মাছ পাওয়া যায়। দেশে থাকতে ছোটবেলায় পুকুরে ছিপ ফেলে মাছ ধরতে খুব পছন্দ করতাম। বর্ষা মৌসুমে ছোট ছোট ব্যাঙের বাচ্চা কলাগাছের আশপাশে লাফালাফি করতো। ওসব ধরে বড়শিতে গেঁথে পুকুরে ছিপ ফেলতেই টাকি, শোল, কৈ বা পুঠি বড়শিতে লেগে যেত দ্রুতই। ভাবলাম যাই।
ফোন রেখে বাচ্চাদের মা'কে আকস্মিক পরিকল্পনা জানাতেই ও স্মরণ করিয়ে দিলো আগে থেকে স্থির হয়ে থাকা আমাদের আরেক এপয়েন্টমেন্টের কথা। ফলে, ইচ্ছে সত্ত্বেও মাছ ধরতে আর যাওয়া হলো না। - -
তিনদিন পর সেই দিলদার ভাই ফোন দিলেন। বললেন, 'সেদিন আমার সাথে না গিয়ে ভালোই করেছেন।'
- কেন?
- আরে ভাই, বলবেন না, আমার দু'শ পঞ্চাশ ডলার লস হয়ে গেলো।
- বলেন কি, কিভাবে?
- অনেকক্ষন অপেক্ষার পর বড়শিতে হঠাৎ মাছ লাগায় নিজের অজান্তেই জোরে একটা চিৎকার দিলাম। আশপাশের লোকজন বিষয়টা খেয়াল করেছিল।
- তারপর?
- তারপর মাছটা বড়শি হতে ছাড়িয়ে নিয়ে কলসিতে রেখে ভেজা কাপড়ে ঢেকে দিলাম।
- তারপর?
- মিনিট পাঁচেকের মধ্যে কোথা থেকে যেন এক পুলিশ এসে মাছটা দেখতে চাইলে দেখালাম।
- ওহ, তাই? তারপর?
- মুহূর্তেই পকেট হতে একটা মাপজোকের ফিতা (টেপ) বের করে মাছের দৈর্ঘ মেপে নিয়ে কম্পিউটারে রেকর্ড করে ফেলল সে পুলিশ।
- তাই নাকি, কেন?
- শুনুন বলছি। পুলিশের গাড়িতে আগে থেকে রাখা পানি ভর্তি বালতিতে মাছটি মিনিট বিশেক রেখে দেয়া হলো।
- তারপর?
- বেঁচে আছে দেখে লেকের পানিতে মাছটি ছেড়ে দিলো পুলিশ ।
- আপনার ধরা মাছ উনি ছাড়বেন কেন?
- কারণ, পুলিশ বললো এতো ছোট মাছ ধরে আমি নাকি অন্যায় করেছি। পঁয়ষট্টি সেন্টিমিটারের কম দৈর্ঘের মাছ নাকি ধরতে মানা।
- তাই নাকি?
- হ্যাঁ, তাই। এ কারণে আমাকে তাৎক্ষণিক আড়াইশ ডলারের জরিমানা করে টিকেট দেয়া হলো। মাছটা মারা গেলে জরিমানা নাকি আরো বেশি হতো।
- কত হতো?
- জানি না।
- ভাগ্যিস আমি যাইনি। নইলে হয়তো আমারও আপনার অবস্থা হতো।
- তাই তো বললাম, সেদিন না গিয়ে আপনি ভালোই করেছেন। কানাডায় যে কত্তো রকমের আইন!
ML Gani
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১:৫৫