somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এমজেডএফ
পেশা ব্যবসা ও চাকরি। জ্ঞানভিত্তিক জীবনদর্শনে বিশ্বাসী। নির্জনে ও নীরবে প্রকৃতির নৈসর্গিক রূপ উপভোগ করতে ভালোবাসি। বই পড়তে, ভ্রমণ করতে, একলা চলতে এবং জটিল চরিত্রের মানুষ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করি। –এম. জেড. ফারুক

দেশ-বিদেশের আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব ৫ - উইন্টারলুড

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিশ্বের যেসব দেশে দীর্ঘ শীতকাল সেখানে মানুষের পোষাক-পরিচ্ছদ, ক্রীড়া, সংস্কৃতি এবং উৎসবের একটি বিরাট অংশ গড়ে উঠেছে এই শীতকালকে ভিত্তি করে। এই শীত আবার যেমন তেমন শীত না, একেবারে শূন্য ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রায় তুষারাবৃত পরিবেশে হাঁড় কাঁপানো শীত! শীতকালকে উপভোগ করার জন্য এসব দেশে আয়োজন করে বিভিন্ন শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগীতা, প্রদর্শনী, মেলা ও উৎসব। শীত প্রধান আবহাওয়ার দেশ কানাডায় শীতকালের প্রকৃতি ও সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে রাজধানী অটোয়াতে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ আয়োজন করা হয় ওয়াটারলুড নামক জমজমাট এক শীতকালীন উৎসব।


পৃথিবীর অন্যতম শীতল আবহাওয়ার দেশ কানাডা। শীতকালে যেখানে আমাদের দেশের তাপমাত্রা থাকে সর্বনিম্ন ৮ থেকে ১২ ডিগ্রি সেখানে কানাডায় তা নেমে যায় শূন্যেরও নিচে, মাইনাসের ঘরে। শীতে আমাদের দেশে জীবনযাত্রা অনেকটা জড়োসড়ো হয়ে গেলেও এইসব শীতপ্রধান দেশে কিন্তু শীতকে মোকাবেলা করে জীবনযাপন, কাজকর্ম সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলে। শুধু তাই নয় বরং কানাডাবাসী শীতকালকে উপভোগ করতে তখন মেতে ওঠে নানান ধরনের ভিন্নধর্মী আর রঙিন সব উৎসবে। এইসব উৎসবে শীতকালের হিমাঙ্কের নীচে তাপমাত্রায়ও মানুষ শীতের সৌন্দর্য্যকে উপভোগ করতে মেতে উঠে।


তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে চলে গেলে রাইডু খালের পানি জমে বরফ হয়ে যায়। এই বরফের উপরিভাগে স্কেটওয়ের মাঠ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এই মাঠে ঘোড়ার দৌড়ের প্রতিযোগীতা দিয়ে ১৯৭৯ সালে উইন্টারলুড প্রথম শীতকালীন যাত্রা শুরু করেছিল। এখন এর সাথে যোগ হয়েছে আইস স্কেটিং, তুষার ভাস্কর্যের প্রতিযোগীতা, বরফ স্লাইড, পাইপ, কুকুর স্লাইডিং, কনসার্ট ইত্যাদি। প্রতি বছর নতুন নতুন খেলা ও প্রতিযোগীতা যুক্ত হয়ে এখন ইভেন্টের সংখ্যা একশ ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া ইনডোরে এবং বাইরের স্থানগুলোতে লাইভ সঙ্গীত এবং বিনোদনের ব্যবস্থা।


বেড রেইস এই উৎসবের একটি আকর্ষনীয় ইভেন্ট। এই প্রতিযোগিতায় বরফের উপর স্কেট বোর্ডের সাহায্যে বুকের উপর ভর দিয়ে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। পাশাপাশি এখানে ২০১৭ সাল থেকে আয়োজন করা হয় আইস ড্রাগন বোট ফেস্টিভাল যার মূল আকর্ষণ বিভিন্নরকম আউটডোর ড্যান্স পার্টিসমূহ। একজোড়া স্কেটিং বোর্ড নিয়ে যে কোনো কেউ নেমে যেতে পারে শুভ্র বরফের বুকে এই উৎসবটি উপভোগ করতে।


কনফেডারেশন পার্কে বরফ দিয়ে তৈরি ভাস্কর্যগুলো উৎসবের বড় একটি আকর্ষণ। এগুলোর শৈল্পিক রূপ দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে যায়। বরফের ভাস্কর্য তৈরির ওপর রীতিমত প্রতিযোগিতা হয়। অনেক প্রফেশনাল শিল্পীরা এখানে অংশগ্রহণ করে। দিনের আলোয় স্কাল্পচার গুলো দেখতে একরকম সুন্দর, আবার রাতের অন্ধকারে লাল নীল বাতির চমকের মধ্যে একেবারেই অন্যরকম সুন্দর। বড় বড় বরফের ওপর খোদাই করে অদ্ভুত সুন্দর সব স্কাল্পচার তৈরী করা হয়। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শিল্পীর বানানো আইস স্কাল্পচারের মেলায় এসে মানুষ মুগ্ধ হয়ে যায়।


এই উৎসবের প্রায় সব ইভেন্ট সবাই বিনামূল্যে উপভোগ করতে পারে। উৎসবে শিশুদের জন্য খেলাধুলো, বিভিন্ন ধরনের রাইড এবং বিনোদনের জন্য রয়েছে ব্যাপক আয়োজন। তাই দূর-দুরান্ত থেকে এখানে ছুটে আসে শিশুদের নিয়ে তাদের পরিবারগুলো।


প্রতিদিন গড়ে ৬ লক্ষ দর্শনার্থী উইন্টারলুড উৎসব পরিদর্শন করে। এ সময় রাজধানী অটোয়া দেশ-বিদেশের অগণিত পর্যটকের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে। এই উৎসবের যাবতীয় কর্মকান্ড সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করার জন্য রয়েছে প্রায় ৮০০ স্বেচ্ছাসেবক কর্মী। উৎসবের খরচ বহন করার জন্য স্পন্সার হিসাবে এগিয়ে আসে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এই উৎসবের সবগুলো ইভেন্ট প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শীতকালীন আবহাওয়ার সাথে জড়িত। সাধারণত স্কেটিং করার জন্য কমপক্ষে –১০° সিলসিয়াস তাপমাত্রা থাকতে হয়। তাপমাত্রা এর থেকে বেশি হলে বরফে ফাটল সৃষ্টি হয়, শুধু তাই নয় এমন কি বরফের ভাস্কর্যগুলোও গলতে শুরু করবে। বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে ইদানিং বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি উইন্টারলুড উৎসবের জন্যও হুমকি হয়ে উঠেছে।

প্রামাণ্যচিত্র: Winterlude, Ottawa



তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট ও ট্রাভেল ম্যাগাজিন

◄ আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব ৪ : রণ উৎসব    |   আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব ৬ - মাস্কাট উৎসব ►
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:০৫
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×