ঐ দেখা যায় তালগাছ,
দেখতে পাচ্ছো?
তার ঠিক নিচেই ছিল,
এক অবুঝ বালকের ছোট্ট এক সবুজ গ্রাম,
যেখানে বাস করতো কানাবগির দল,
রুপালি পুঁটির ঝাঁক,
জল কৌড়ি আর মাছরাঙারা।
.
অথচ আজ সেখানে
কেবলই তার ধ্বংসাবশেষ,
মাছরাঙা আর জল কৌড়ির দল
সেই কবেই উড়ে গেছে
অচিন গন্তব্যে,বলে গেছে-
ফিরবে না তারা কখনো,
কানাবগিগুলো সব মরে সাফ,
একেকটা বুলেট প্রতিবার এফোঁড় ওফোড়
করেছে তাদের ধবলে-নীল পালক।
.
কানাবগির যে সন্তানগুলো ছিল,
তারা আজ সন্ধ্যা হলেই বুদ হয়ে থাকে
গাজা আর নিকোটিনের সমুদ্রে,
হিংস্রতার ভয়াল ছুড়ি চকচক
করে উঠে ওদের পালক তলে।
.
আজ এখানে হায়না-শেয়ালের রাজত্য,
পুটি থেকে বোয়াল, ওরা
আজ সব গোগ্রাসে গিলে খায়,
অথচ ছোট্ট অবুঝ শিশুটি,
এখানে দ্বারে দ্বারে ছুটে বেড়ায়,
একমুঠো বাসি পান্তা পাবার আশায়।
.
খড়ের ছাউনি ভেঙে উঠেছে
সু-উচ্চ দালান,
ফুলের বাগান পিষেছে,
মর্টার, ট্যাংক আর সুসজ্জিত কামান।
তাদের গর্জন আর তর্জনে
ভীত সন্ত্রস্ত ভোরের মিস্টি পাখির দল।
ওরা এখন আর গান গায় না,
যে গান জাগিয়ে তুলতো সব গ্রামবাসীকে,
অন্যায়কে রুখে দাঁড়াবার
প্রেরণা দিত, মৃত্যু জেনেও হাসি
মুখে লড়ে যাওয়ার শক্তি দিত,
যে গান ফুসলে দিতো মনের
গহিনের চাপা দেয়া আগুনকে,
আবেগের চরম শেখড়ে চড়ে
শত্রুর চোয়ালে মরণ আঘাত হানতে,
তার সুর আজ ভুলে গেছে তারা।
সিল করে দেয়া হয়েছে
তাদের সুরে ভরা গলাগুলোকে।
.
.
আজ বাতাসে উড়ে বিষাক্ত কীট ,
পানিতে লাশের গন্ধ,
গলিতে গলিতে শোনা যায়
শোকার্তের চাপা আর্তনাদ,
যারা হারিয়েছে তাদের প্রিয়জনকে।
গর্ভস্থ অবচেতন শিশুটিও
আজ কুঁকড়ে যায়, পাপাচারীর
ভয়াল থাবার আঘাতে।
.
এ স্থান আজ পাপে পাপে পূর্ণ,
এ পূন্যপুরী, এ স্বর্গ,
যেন এক অগ্নিপূর্ণ নরকের খন্ড।
বিভীষিকার আরেকটি আঘাত পরে
ধুকতে থাকা সেই
সবুজ মাতৃভূমির ভগ্ন অঙ্গের উপর।
যার দেখার কেও নেই,
শোনার কেও নেই,
মায়ের মান রক্ষার জন্য
অত্যাচারীর পাপপূর্ণ বুকে
মৃত্যু থাবা বসাবার মতোন কেও নেই।
.
.
.
.
------- মাহফুজ ইসলাম মেঘ