এম এ জলিল
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকাল দশটায় খুলনার দৌলতপুরের থুকড়া স্কুলে কতকগুলো মুক্তিযোদ্ধার সাথে দাঁড়িয়ে ছিলেন মেজর এম এ জলিল৷ সহ-অধিনায়ক ক্যাপ্টেন হুদার জিপ এসে থামতে না থামতেই তিনি একটা দুষ্টু ছেলের মতো লাফ দিয়ে জড়িয়ে ধরেন জলিলকে৷ তাঁর কন্ঠে ভাসে সুখবর 'স্যার, পাক সেনারা আত্মসমর্পণ করেছে৷' এ সংবাদটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে এম এ জলিল চিত্কার করে মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার উদ্দেশ্যে বললেন, 'আমরা বিজয়ী হয়েছি৷ 'আমরা বিজয়ী হয়েছি৷' এ সময় জলিলের পাশে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে চিত্কার করতে থাকে৷ ওদের কেউ কেউ আনন্দে ডিগবাজি খেয়ে ঘাসের ওপর গড়াগড়ি শুরু করে৷ আমাদের এ সবুজ শ্যামল বাংলাদেশের মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে এভাবে ডিগবাজি খাওয়ার স্বাধীনতা যাঁরা উপহার দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে মেজর এম এ জলিল ছিলেন অন্যতম

দেশের একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই তাঁর রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি৷ এর বাইরেও তিনি ছিলেন একজন রাজনীতিক ও সামরিক কর্মকর্তা৷ বরিশাল জেলার উজিরপুরে ১৯৪২ সালের ৯ ফেব্রম্নয়ারি নানার বাড়িতে মুহাম্মদ আব্দুল জলিলের জন্ম ( তিনি পরবর্তীতে মেজর এম এ জলিল নামেই সবার কাছে পরিচিতি লাভ করেন)৷ তাঁর পিতা জোনাব আলী চৌধুরী ও মা রাবেয়া খাতুন৷ জন্মের ৩ মাস আগে বাবা জোনাব আলি মারা যান৷ উজিরপুরেই তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটে যায়৷ উজিরপুর ডবি্লউবি ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৫৯ সালে মেজর এম এ জলিল কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক পাশ করেন৷ এরপর ফিশারিজ ডিপার্টমেন্টে কিছুদিন চাকরি করেন৷ কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে পড়াশুনা করতে পশ্চিম পাকিস্তানে যান তিনি৷ ১৯৬১ সালে সেখানকার মারী ইয়ং ক্যাডেট ইনস্টিটিউশন থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন৷ পাশাপাশি গ্রহণ করেন সামরিক শিক্ষা৷ এরপরই আব্দুল জলিল ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে ট্রেনী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন৷ সামরিকবাহিনীতে চাকুরিরত অবস্থায় তিনি বি.এ পাশ করেন৷ ১৯৬৫ সালে তিনি কমিশন প্রাপ্ত হন এবং ১২ নং ট্যাঙ্ক ক্যাভারলি রেজিমেন্টের অফিসার হিসেবে তত্কালীন পাক-ভারত যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন৷ ১৯৬৬ সালে যুদ্ধবিরতির পর পাকিস্তান একাডেমি থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন৷ পরে মুলতানে কর্মরত থাকাকালে তিনি ইতিহাসে এম. এ ডিগ্রি লাভ করেন৷ ১৯৭০ সালে তিনি মেজর পদে উন্নীত হন৷ তিনি ১৯৭১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী মায়ের অসুস্থতার জন্য এক মাসের ছুটি নিয়ে বরিশালে আসেন এবং মার্চে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন৷ মুক্তিযুদ্ধে তিনি নবম সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব লাভ করেন৷
যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ১৯৭১ সালের মার্চে গঠন করা হয় বরিশাল সংগ্রাম কমিটি৷ এ কমিটি যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সদর গার্লস স্কুলকে প্রশাসনিক সচিবালয় হিসেবে ব্যবহার করে৷ কিন্তু দেখা দেয় একজন যোগ্য নেতৃত্বের অভাব৷ বরিশাল সংগ্রাম কমিটি সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে ও ঠিকানায় মুক্তিযুদ্ধের সেনাপতি খোঁজা শুরু করে৷ আওয়ামী লীগ নেতা ও তখন সদ্য নির্বাচিত এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) এডভোকেট নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ক্লার্ক আব্দুল মান্নান সংগ্রাম কমিটির কাছে বিশেষ বার্তা নিয়ে আসে৷ মান্নান জানান, পাকিস্তান আর্মির ট্যাঙ্ক রেজিমেন্টের মেজর জলিল নামে এক আর্মি অফিসার ছুটিতে তাঁর গ্রামের বাড়ি উজিরপুরে বেড়াতে এসেছেন৷ সংগ্রাম কমিটির সিদ্ধান্তে ঠিক তখনি জরুরি ভিত্তিতে সেনাপতি হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মেজর জলিলের কাছে মান্নানের মাধ্যমে সরাসরি আহ্বান জানানো হয়৷ ৩০ বছরের টগবগে ঝাকড়া চুলের পাক বাহিনীর ট্যাঙ্ক রেজিমেন্টের মেজর জলিল এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন৷ ওই দিনই মান্নানের মোটর সাইকেলের পেছনে করে বরিশাল শহরের সদর গার্লস স্কুলের কন্ট্রোল রুমে আসেন মেজর জলিল৷ পাকিস্তান থেকে এ নির্ভীক সেনার আগমনের খবর পেয়ে বৃহত্তর বরিশালের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসে বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, পুলিশ, আনসার এবং কলেজের ইউওটিসির বহু সদস্য৷ ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় রাইফেল ট্রেনিংপ্রাপ্ত শত শত যুবক মেজর জলিলকে সমর্থন দেন৷ নূরুল ইসলাম মঞ্জু, আমির হোসেন আমু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রধান প্রয়াত আব্দুল বারেক, এডভোকেট প্রয়াত জালাল সরদার নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনেচ্ছু হাজার হাজার মুক্তিকামী লোকদের উদ্দেশ্যে যুদ্ধের দামামা বাজানোর মতো ভাষণ দিলেন জলিল৷ এর মধ্য দিয়েই বরিশাল সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দের অনুরোধে মুক্তিযুদ্ধের সেনাপতি হিসেবে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷
ইতিপূর্বেই কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের ভবেরপাড়ার আম্রকাননে মুজিব নগর সরকার গঠিত হয়৷ মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন কর্নেল ওসমানী ৷ মুক্তিযুদ্ধের হাইকমান্ড থেকে সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে বৃহত্তর বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুরের একাংশ, পটুয়াখালী-বরগুনাসহ ৯ নং সেক্টরের অন্তভূক্ত করে মেজর জলিলকে ওই সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷ এই সেক্টরের হেডকোয়ার্টার স্থাপিত হয় টাকিতে৷ হিঙ্গলগঞ্জে ক্যাপ্টেন হুদার নেতৃত্বে সেক্টর অপারেশন ক্যাম্প এবং শমসের নগরে একটা নজরদারি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়৷ এরপরই শুরু হয় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ৷ ১৮ এপ্রিলের পর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে মেজর জলিল একটি বড় বাহিনী গড়ে তোলেন৷ কিন্তু সামান্য কিছু রাইফেল ছাড়া তাঁর ভারী কোনো অস্ত্রপাতি ছিল না৷ প্রাথমিকভাবে বরিশালের পুলিশ অস্ত্রাগার ভেঙ্গে কিছু রাইফেল যোগাড় করা হয়৷ ২২ এপ্রিলের পর মেজর জলিল ভারত থেকে কিছু অস্ত্র আনার পরিকল্পনা করেন৷ হানাদারের চোখ ফাঁকি দিয়ে মেজর জলিল কয়েকজনকে সঙ্গী করে নিজেই ভারত থেকে কিছু অস্ত্র নিয়ে আসেন৷
জুন থেকে আগস্টের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ছিল একটা থমথমে ভাব৷ এই সময়ে রাজাকারদের ঘৃণ্য সহযোগিতায় পাক-বর্বররা নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে৷ তখন মেজর জলিল ও তাঁর বাহিনী যুদ্ধাংদেহীরূপে ঝাঁপিয়ে পড়েন৷ তাঁদের প্রতিজ্ঞা- শত্রুদের বিষদাঁত ভেঙ্গে ফেলে তাদেরকে বাংলার মাটিতে যুদ্ধ করার সাধ চিরতরে মিটিয়ে দিতে হবে৷ মেজর জলিল এক পর্যায়ে গেরিলাবাহিনী প্রবর্তনের ওপর বেশ জোর দেন৷ তাঁর সক্রিয় হস্তক্ষেপে বিভিন্ন গেরিলা কেন্দ্রে শুরু হয় গেরিলা প্রশিক্ষণ৷ মেজর জলিল চারটি কেন্দ্রের খবর রাখতেন৷ এগুলো হচ্ছে চাকুলিয়া ও বিহার রাজ্য, একটি মেঘালয় ও অপরটি বীরভূম জেলা৷ ওই সময় বাংলাদেশ সরকার ও ভারত সরকারের সহযোগিতায় সর্বমোট ৫০ হাজার লোককে গেরিলা ও ২০ হাজার লোককে নিয়মিত সামরিক ট্রেনিং দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ মেজর জলিল সেক্টরের বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ও গেরিলা যোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে উদ্দীপনামূলক ভাষণ দিতেন এবং যুদ্ধের সার্বিক বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিতেন৷
জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত 'হিট এ- রান' অর্থাত্ আঘাত করো ও পালিয়ে যাও নীতিতে অংশ নেন মেজর জলিল ও তাঁর বাহিনী৷ এ আক্রমণ পরিচালনার জন্য জলিল তিনটি জায়গা বাছাই করেন৷ পশ্চিমবঙ্গের উত্তরদিকের বনগাঁর নিকট বাগদাতে একটা, হাসনাবাদের দক্ষিণে শমসের নগরে একটা এবং আর একটা টাকিতে৷ এই তিনটি ঘাঁটির মধ্যে বাগদাই সবচেয়ে ব্যস্ততম৷ ৫ মাসে প্রায় ৮ হাজার গেরিলাকে হালকা অস্ত্রপাতি ও বিস্ফোরক দ্রব্যসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাঠান মেজর জলিল৷ এক পর্যায়ে তাঁর সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ালো ২০ হাজারে৷ শুরু হলো মুক্তিযোদ্ধা ও সশস্ত্র গেরিলাদের বিজয় অভিযান৷
নিজের চেষ্টা ও দক্ষতায় মেজর জলিল প্রত্যেকটা সাব সেক্টরকে গড়ে তুলেছেন দৰ ও চৌকসবাহিনীরূপে৷ পাক বাহিনী ও রাজাকার ক্যাম্প দখল, রেইড, অ্যাম্বুস, এটাক এই ছিল তাঁর প্রত্যেকটা সাব সেক্টরের যুদ্ধকথা৷ ক্যাপ্টেন বেগ এর নেতৃত্বে বরিশাল সাব সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে চড়াও হয় সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে৷ ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর তাঁদের কাছে বরিশালের পাকবাহিনী পরাস্ত হয়৷ তাঁরা আত্মসমর্পণ করেন আনুষ্ঠানিকভাবে৷ সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয় বরিশাল৷
এরপর মুক্তিবাহিনী একে একে খেপুপাড়া, বাউফল, গলাচিপা, বামনা, পাথরঘাটা ও মির্জাগঞ্জে আক্রমণ চালিয়ে পাকবাহিনীকে পাকড়াও করতে সক্ষম হয়৷ তাদের হাতে বহু রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্য নিহত হয়৷ নুরুল হুদার নেতৃত্বে ৭ ডিসেম্বর পটুয়াখালী শহর শত্রুমুক্ত হয়৷ ৯ নং সেক্টরের অত্যনত্ম গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ এলাকা ছিল খুলনা অঞ্চল৷ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাথে ছিল এর সীমান্ত এলাকা৷ মুক্তিপিপাসু যুব সমাজ এই সীমান্ত দিয়ে ভারতে যেত এবং ট্রেনিং নিয়ে অস্ত্রসহ আবার দেশে ঢুকে যুদ্ধে শরিক হতো৷ কিন্তু সীমান্ত পথের খানজিয়া, দেবহাটা, টাউন শ্রীপুর, বসনত্মপুর, উকসা, কৈখালীসহ সংলগ্ন বিওপিগুলো ১৯৭১ সালের এপ্রিলেই পাকবাহিনী দখল করে শক্ত ঘাঁটি তৈরি করে৷ ফলে যুবকদের পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ বা দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ বিপদসংকুল হয়ে পড়ে৷ কিন্তু সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল ও সহ অধিনায়ক ক্যাপ্টেন নুরম্নল হুদার সুনির্দিষ্ট যুদ্ধ পরিকল্পনা ও রণকৌশলের কাছে ওরা বেশিদিন টিকতে পারেনি৷ আক্রমণ দিনকে দিন বাড়তে থাকে৷ চলতে থাকে খন্ড-খন্ড যুদ্ধ৷ পাশাপাশি বাড়তে থাকে অস্ত্র ও গোলাবারূদের সংখ্যাও৷ গেরিলারাও হয়ে ওঠে মরিয়া৷ জুলাই থেকে নভেম্বরের মধ্যেই খুলনার গুরুত্বপূর্ণ অনেক এলাকাই শত্রুমুক্ত হয়ে যায়৷
গেরিলা বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও মেজর জলিলের আরেক সৈনিকের নাম 'বিপ্লবী বাংলাদেশ'৷ সাপ্তাহিক এ পত্রিকাটি ৯ নং সেক্টরের কলম সৈনিক হিসেবে ব্যবহৃত হতো৷ এর প্রথম প্রকাশ ৪ আগস্ট ১৯৭১৷ সম্পাদক নুরুল আলম ফরিদ৷ ৯ নং সেক্টর হেড কোয়ার্টারের আনুকূল্যে ও সহায়তায় বসিরহাটের হাসনাবাদ থেকে সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে এটি নিয়মিত প্রকাশিত হয়৷ সম্পাদক নুরুল আলম ফরিদের সাথে মিন্টু বসু, ইউসুফ হোসেন কালু এবং ফটোগ্রাফার তৌফিক ইসলাম লিপু ও মানসসহ একঝাঁক তরুণ সাংবাদিক জড়িত ছিল৷ পত্রিকাটি মুজিবনগর হেড কোয়ার্টার, ৯ নং সেক্টরের মুক্ত এলাকাসহ সেক্টরভূক্ত সকল ক্যাম্প ও স্থাপনায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিকামী মানুষগুলোর জন্য একটা প্রেরণার উত্স ছিল৷ মুক্তিযুদ্ধকালে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থানরত সকল এমএনএ ও এমসিএসহ সকল স্তরের জনগণ এ পত্রিকার পাঠক ছিলেন৷ শত আর্থিক অসুবিধার মধ্যেও ফরিদসহ সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকগণ বহু শ্রম ব্যয়ে মুক্তিযুদ্ধের কলমসৈনিক হিসেবে ৯নং সেক্টরের মুখপত্র 'বিপ্লবী বাংলাদেশ' নিয়মিত প্রকাশ করেছেন৷ ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখ থেকে 'বিপ্লবী বাংলাদেশ' বরিশাল থেকে প্রথমে সাপ্তাহিক হিসেবে এবং পরে ১৯৯৬ সালে এটি দৈনিক হিসেবে প্রকাশিত হয়৷ প্রায়ই এর কাগজের দাম ও ছাপার খরচসহ আনুষঙ্গিক খরচ যোগাড় হতো না৷ মেজর জলিল এর সহায়তায় ও অর্থানুকূল্যে এগুলির ব্যবস্থা হয়ে যেত৷ 'বিপ্লবী বাংলাদেশ' তখন একটি সাব সেক্টরের মতো ভূমিকা পালন করে৷
৬ ডিসেম্বর বেলা ১১ টায় অল ইন্ডিয়া রেডিও মারফত ঘোষণা করা হলো- ভারত বাংলাদেশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ দীর্ঘ নয় মাস সমগ্র বাঙালি অধীর আগ্রহে এই দিনটির প্রতীক্ষায় ছিল৷ এ সংবাদ শুনে সবার মতো মেজর জলিলের মন থেকেও চিন্তা ও উত্তেজনা দূর হলো৷ এর পর মিত্রবাহিনী মুক্তিবাহিনীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রথম তিন দিনেই যশোর ক্যান্টনমেন্ট অধিকার করে নিল৷ পাক-হানাদাররা উর্ধ্বশ্বাসে পালাতে শুরু করল৷ ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় সূচিত হলে স্থানীয় লোকজন তখন বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা৷ লোকজন নানাভাবে আতিথ্য দেখিয়ে জলিল ও তাঁর বাহিনীকে মুগ্ধ করল৷ আনন্দিত জলিল বিজয়ের পরও মাঝে মাঝে থমকে যেতেন৷ যুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া সহকর্মীদের স্মরণ করতেন তিনি৷ বিজয়ের আনন্দের মাঝেও তাঁর মনে ভেসে উঠত নানা স্মৃতি৷ যেমন: বর্ষা মাথায় নিয়ে বাংলার সেই অতন্ত্র প্রহরী গেরিলাদের বাগদার সীমান্ত অতিক্রম করে ভেতরে প্রবেশ, অন্ধকারে অস্ত্র হাতে কাদা-পানির মধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হেঁটে চলা৷ নীরবে নি:শব্দে রাইফেলটা উপরে তুলে তাঁদের হেঁটে চলা যেন পানির স্পর্শ না লাগে৷ কি অভূতপূর্ব দেশ প্রেম৷ নিজেকে অভিশাপ দিয়ে মেজর জলিল তখন বলতেন- 'কেন ওদের সাথী না হয়ে অধিনায়ক হলাম৷ কেন ওদের পাশে থেকে যুদ্ধ করে ওদের মুখের হাসিকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলাম না৷ ওদের রক্তের সাগরে দাঁড়িয়ে মুক্তির আনন্দ আজ বড্ড বিষাদ লাগছে৷'
দেশ স্বাধীন হলো৷ কিন্তু ব্যক্তি জলিল ভোগ করতে পারেননি স্বাধীনতার স্বাদ৷ কারণ ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর মেজর জলিলকে গ্রেফতার করা হয়৷ ভারতীয় সেনাদের লুটপাট ও খুলনা সীমান্ত এলাকা দিয়ে দেশের সম্পদ পাচারের তীব্র প্রতিবাদ করাই ছিল তাঁর অপরাধ৷ তাঁকে ধরে নিয়ে প্রথমে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে অবস্থিত সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়৷ পরে তাঁকে কার্যত নজরবন্দি করে রাখা হয়৷ ১৯৭২ সালের ২ সেপ্টেম্বর তিনি মুক্ত হন এ বন্দিদশা থেকে৷ এর পর মেজর জলিল রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়েন৷ তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় দেখা গেছে, ১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসে তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন৷ তিনি ছিলেন এ দলেন যুগ্ম আহ্বায়ক৷ ২৬ ডিসেম্বর দলের কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন এবং তিনিই ছিলেন জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি৷ তাঁর নেতৃত্বে জাসদ দেশে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন৷ সরকার বিরোধী রাজনীতিতে তিনি ছিলেন সক্রিয়৷ মেজর জলিল ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন৷ সাতটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি৷ কিন্তু কোনো আসনেই তিনি জয়লাভ করতে পারেননি৷ সরকারবিরোধী রাজপথের নানা আন্দোলনে মেজর জলিল ছিলেন সম্মুখ সারির নেতা৷ সরকারি বাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতন ও জেল-জুলুমের পরও অন্যায় আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদী কন্ঠ ছিল সোচ্চার৷ অন্যায় আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন আপোসহীন নেতা৷
১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ দলীয় কর্মীদের নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ঘেরাও অভিযানকালে তিনি গ্রেফতার হন৷ পরে ১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বর মুক্তি লাভ করেন৷ মেজর জলিল ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাজবন্দি৷ তত্কালীন সামরিক সরকার তাঁর বিরদ্ধে সরকার উত্খাতের ষড়যন্ত্র এবং অবৈধ পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল প্রচেষ্টার অভিযোগ আনে৷ তত্কালীন সামরিক সরকার কর্তৃক ২৫ নভেম্বর পুনরায় তিনি গ্রেফতার হন৷ বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিচার করা হয়৷ ১৯৭৬ সালের ১৮ জুলাই আদালতের দেয়া রায়ে তিনি যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হন৷ তবে ১৯৮০ সালের ২৪ মার্চ তিনি মুক্তি লাভ করেন৷ জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কৃষক শ্রমিক সমাজবাদী দলের সমন্বয়ে গঠিত ত্রিদলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেজর জলিল ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন৷ ১৯৮৪ সালে তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন৷ এরপর তিনি জাসদ ত্যাগ করে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন নামে একটি দল গঠন করেন এবং এই দলের মাধ্যমে ইসলামি আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করেন৷ লিবিয়া, ইরান, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে ইসলামিক সম্মেলনে তিনি যোগ দেন৷
১৯৮২ সালে ঘাটাইলের (টাঙ্গাইল) আখতারম্নজ্জামান খান ও মাহমুদা আখতারের তনয়া সায়মার সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন মেজর জলিল৷ মেজর জলিলের দুই মেয়ে সারাহ জলিল ও ফারাহ জলিল৷ সারাহ বর্তমানে আইন পেশায় নিয়োজিত৷ মেজর জলিলের মৃত্যুর সময় ফারাহ ছিল ৩ মাসের গর্ভে৷ ফারাহ জলিল বর্তমানে আইন বিষয়ে পড়াশুনা করছেন৷ মেজর জলিলের স্ত্রী সায়মা জলিল বর্তমানে বিকল্পধারার রাজনীতি করছেন৷ তিনি ওই দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য৷
লেখক হিসেবে মেজর জলিল উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন৷ ছাত্রজীবনেই তাঁর লেখালেখির অভ্যাস ছিল৷ স্কুল জীবনে তিনি 'পথের কাঙ্গাল' ও 'রীতি' নামে দুটি উপন্যাস লেখেন৷ কিন্তু পরে এ পান্ডুলিপি দুটি হারিয়ে যায়৷ একটু অবসর পেলেই তিনি বই পড়তেন৷ স্ত্রী ও সন্তানদের সর্বদা বই পড়ার উপদেশ দিতেন৷ পরবর্তীতে তিনি মূলত রাজনৈতিক বিষয়েই লেখালেখি করেন৷ মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা তাঁর বইগুলো ছিল প্রামাণ্য রচনা৷ তাঁর রচিত রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থ : সীমাহীন সমর (১৯৭৬), দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবনদর্শন, সূর্যোদয় (১৯৮২), অরৰিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা (১৯৮৯), Bangladesh Nationalist Movement for Unity: A Historical Necessity.এছাড়া তিনি বেশকিছু কবিতাও লিখেছেন৷
মেজর এম এ জলিলের নামে ঢাকা মহানগরীর একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে৷ এ ছাড়াও বরিশালের উজিরপুরের শিকারপুর ব্রীজটি মেজর জলিলের নামে করা হয়েছে৷ ২০০১-২০০৬ সালে বি.এন.পি শাসনামলে এ ব্রীজটি তাঁর সম্মানে উত্সর্গ করা হয়৷ নগরীর কাঁটাবন মোড় থেকে ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত সড়কটি এখন থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জলিল সড়ক নামে পরিচিত হচ্ছে৷ ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ২০০৭ সালের ২৮ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে মেজর জলিল সড়কের নামফলক উন্মোচন করেন৷ এ ছাড়া বরিশাল শহরেও তাঁর নামে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে৷ বরিশালে তাঁর নামে একটি অডিটোরিয়াম ও একটি ভাস্কর্যও রয়েছে৷ মেজর জলিল তাঁর জীবদ্দশায় রাষ্ট্রীয় কোনো পুরস্কার বা সম্মাননা পাননি৷ এমনকি রাষ্ট্র কর্তৃক তাঁকে মুক্তিযোদ্ধার খেতাবটি পর্যন্ত দেয়া হয়নি৷ এরশাদ সরকার তাঁর পরিবারের জন্য বনানীতে একটি প্লট উপহার দেন৷ সেখানেই তাঁর স্ত্রী সায়মা জলিল এখন তাঁদের দুই কন্যাকে নিয়ে বসবাস করছেন৷
আমৃত্যু কেবল দেশের স্বার্থকে উর্ধ্বে রেখে কাজ করে গেছেন মেজর জলিল৷ তিনি ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অর্থাত্ পূর্ণ মেয়াদে সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন৷ ধনদৌলতের প্রতি তাঁর ছিল না কোনো মোহ৷ দেশ, দেশের মাটি ও দেশের জনগণই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় সম্পদ৷ সাধারণ জীবনযাপনেও তিনি ছিলেন অভ্যস্ত৷ সব সময় পাজামা-পাঞ্জাবি পড়তেন৷ ১৯৮৯ সালের ৫ নভেম্বর একটি ইসলামিক কনফারেন্সে যোগ দিতে মেজর জলিল পাকিস্তান যান৷ ১০, ১১ ও ১৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন৷ পাকিস্তানে অবস্থানকালেই ইসলামাবাদে ১৯ নভেম্বর হঠাত্ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাত ১০ টা ৩০ মিনিটে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন৷ পরে ২২ নভেম্বর তাঁর মৃতদেহ ঢাকায় আনা হয় এবং সামরিক মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন করা হয়৷ ঝাঁকড়া চুলের টকবগে সেই মুক্তিযুদ্ধের নেতা মিরপুরের বুদ্ধিজীবী/মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন৷
এক নজরে মেজর এম এ জলিল
নাম: মেজর মোহাম্মদ আব্দুল জলিল
পিতার নাম: জোনাব আলী চৌধুরী
মাতার নাম: রাবেয়া খাতুন
জন্মতারিখ: ১৯৪২ সালের ৯ ফেব্রম্নয়ারি
জন্মস্থান: বরিশালের উজিরপুরে নানার বাড়িতে
পরিবার-পরিজন:
১৯৮২ সালে টাঙ্গাইলের সায়মার সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন মেজর জলিল৷ মেজর জলিলের দুই মেয়ে ব্যারিস্টার সারাহ জলিল ও ফারাহ জলিল৷ স্ত্রী সায়মা জলিল বর্তমানে বিকল্পধারার রাজনীতি করছেন৷ তিনি ওই দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য৷ সারাহ আইন পেশায় নিয়োজিত৷ ফারাহ আইন বিষয়ে অধ্যয়নরত৷
পড়াশুনা:
উজিরপুর ডবিস্নউবি ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৫৯ সালে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিক পাশ৷ ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের মারী ইয়ং ক্যাডেট ইনস্টিটিউশন থেকে আই এ পাস করেন তিনি৷ পাশাপাশি গ্রহণ করেন সামরিক শিৰা৷ ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান একাডেমি থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন৷ পরে মুলতানে কর্মরত থাকাকালে তিনি ইতিহাসে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন৷
সামরিক কর্মকান্ড :
১৯৬২ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে ট্রেনী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন৷ সামরিক বাহিনীতে চাকুরিরত অবস্থায় তিনি বি.এ পাশ করেন৷ ১৯৬৫ সালে তিনি কমিশনপ্রাপ্ত হন এবং ১২ নং ট্যাঙ্ক ক্যাভারলি রেজিমেন্ট অফিসার হিসেবে তত্কালীন পাক-ভারত যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন৷ ১৯৭০ সালে তিনি মেজর পদে উন্নীত হন৷ তিনি ১৯৭১ সালের ১০ ফেব্রম্নয়ারি ছুটি নিয়ে বরিশালে আসেন এবং মার্চে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন৷ মুক্তিযুদ্ধে তিনি নবম সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব লাভ করেন৷
রাজনৈতিক কর্মকান্ড :
১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসে তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন৷ তিনি ছিলেন এ দলেন যুগ্ম আহ্বায়ক৷ তার নেতৃত্বে জাসদ দেশে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মকা- পরিচালনা করেন৷ সরকার বিরোধী রাজনীতিতে তিনি ছিলেন সক্রিয়৷ মেজর জলিল ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন৷ ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ দলীয় কর্মীদের নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ঘেরাও অভিযানকালে তিনি গ্রেফতার হন৷ পরে ১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বর মুক্তি লাভ করেন৷ সামরিক সরকার কর্তৃক ২৫ নভেম্বর পুনরায় তিনি গ্রেফতার হন৷ ১৯৭৬ সালের ১৮ জুলাই আদালতের দেয়া রায়ে তিনি যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হন৷ ১৯৮০ সালের ২৪ মার্চ তিনি মুক্তি লাভ করেন৷ মেজর জলিল ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন৷ ১৯৮৪ সালে তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন৷ এরপর তিনি জাসদ ত্যাগ করে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন নামে একটি দল গঠন করেন৷
গ্রন্থ:
সীমাহীন সমর (১৯৭৬), দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবনদর্শন, সূর্যোদয় (১৯৮২), অরৰিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা (১৯৮৯), Bangladesh Nationalist Movement for Unity: A Historical Necessity৷
মৃত্যু:
১৯৮৯ সালের ১৯ নভেম্বর রাত ১০ টা ৩০ মিনিটে তিনি পাকিস্তানের ইসলামাবাদে মৃত্যুবরণ করেন৷ পরে ২২ নভেম্বর তার মৃতদেহ ঢাকায় আনা হয় এবং সামরিক মর্যাদায় তার দাফন সম্পন্ন করা হয়৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৭ বছর৷
(সূত্র: বাংলাপিডিয়া, স্বাধীনতাযুদ্বের দলিলপত্র-১০ম খন্ড, সীমাহীন সমর)
বি:দ্র: এই লেখাটির জন্য ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করেছেন মেজর জলিলের স্ত্রী সায়মা জলিল এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ৯ নং সেক্টরের স্টাফ অফিসার ও মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুর রহমান মোস্তফা (বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী)৷ তাঁর লেখা 'মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টর ও আমার যুদ্ধকথা' গ্রন্থটি এ ৰেত্রে বিশেষ সহায়ক হয়েছে৷
গবেষক: তমাল হুমায়ুন
[সংগৃহীত; তথ্য সূত্র: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৫:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



