somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা কেন স্বপ্ন দেখি? স্বপ্নের যৌক্তিক ব্যাখ্যা- সিগমুন্ড ফ্রয়েড

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নিদ্রায় কখনো স্বপ্ন দেখেনি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। কখনো কখনো স্বপ্নে মানুষের মনের আকাঙ্খা পূরণ হয়, কাঙ্খিত বস্তুর সান্নিধ্য পায়, প্রিয়তমার সংস্পর্শে যায় সর্বপরি নিজের মনের কামনা-বাসনা পূরণ হয়। এমন স্বপ্ন যা মানুষকে আনন্দ দেয় তা মানুষ 'ভালো স্বপ্ন'-রূপে গ্রহণ করে। আবার মাঝে মাঝে মানুষ স্বপ্নে এমন সব কাহিনী দেখতে পায় যা তার চাওয়া-পাওয়া পরিপন্থি। যা তাকে বেদনা দেয়, যার প্রতিফলন মানুষ তার জীবনে ঘটাতে চায় না। এমন স্বপ্ন তার কাছে 'খারাপ স্বপ্ন'-রূপে প্রতিয়মান হয়।


স্বপ্ন দেখে অনেকে হঠাৎ ভয়ে লাফিয়ে উঠে, এসি রুমের মধ্যে ঘামতে থাকে। আবার অনেকে স্বপ্ন দেখে মুখ থেকে হাসি পড়ে না সরারদিন। স্বপ্নের মধ্যে কথা বলা লোকের সংখ্যাও কমনা। আবর স্বপ্ন দেখে পেন্ট ভিজে যাওয়া-এমন ঘটনাও কিন্তু বিরল নয়। স্বপ্ন জিনিসটা কি? কেনই বা মানুষ নিদ্রায় স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নের সাথে মানুষের সম্পর্ক কি? স্বপ্ন নিয়ে গবেষনা চলে আসছে হাজার বছর আগে থেকে। ধর্মগুলোতেও স্বপ্নের তাৎপর্য গুরুত্ব সহকারে দেখানো হয়েছে। কোন কোন ধর্মে স্বপ্নকে বিধাতার অসীম নেয়ামতের ক্ষুদ্রাংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। কোথাও স্বপ্নকে দেখানো হয়েছে সতর্কবার্তা হিসেবে। অনেক ধর্মীয় গ্রন্ধ অনুযায়ী ঈশ্বর তার প্রিয় বান্দাদের স্বপ্নের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছে দেন। আবার খারাপ স্বপ্নগুলোকে শয়তানের কারসাজি হিসেবেও দেখানো হয়েছে। স্বপ্নে কোন কোন জিনিস দেখলে কি হয়, স্বপ্নের বাস্তব প্রতিফলন কি--এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় হাজারো বই আছে। যদিও এই বইগুলোর ব্যাখ্যার সাথে স্বপ্নের বাস্তব প্রতিফলন খুজে পাওয়া দুষ্কর।

ঊনিশ শতাব্দির শুরুর দিকে জার্মান স্নায়ুবিশারদ (neurologist) সিগমুন্ড ফ্রয়েড সর্বপ্রথম স্বপ্নের যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দাঁড় করেন যা এখন পর্যন্ত সর্বজন স্বীকৃত স্বপের ব্যাখ্যা। তিনি ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে The Interpretation of Dreams নামে একটি বই রচনা করেন। কেউ যদি এটাকে বাংলা 'খোয়াবনামা' টাইপের বই মনে করেন তাহলে ভুল হবে। এখানে স্বপ্নের কোন কল্পনাপ্রশ্রুত ব্যাখ্যা নেই। সিগমুন্ড ফ্রয়েড উক্ত বইয়ে অসংখ্য উদাহরন দিয়ে স্বপ্নের যৌক্তিক ব্যাখ্যা দাঁড় করেছেন। বইটির প্রথম সংস্করণের শুরুতে তিনি লিখেছেন-

In the following pages, I shall demonstrate that there exists a psychological technique by which dreams may be interpreted and that upon the application of this method every dream will show itself to be a senseful psychological structure which may be introduced into an assignable place in the psychic activity of the waking state. I shall furthermore endeavor to explain the processes which give rise to the strangeness and obscurity of the dream, and to discover through them the psychic forces, which operate whether in combination or opposition, to produce the dream. This accomplished my investigation will terminate as it will reach the point where the problem of the dream meets broader problems, the solution of which must be attempted through other material.

সিগমুন্ড ফ্রয়েড একটি মনস্তাত্ত্বিক পন্থা আকিষ্কার করতে চেয়েছেন যার মাধ্যমে স্বপ্নের যৌক্তিক ব্যাখ্যা দাঁড় করানো সম্ভব। সিগমুন্ড ফ্রয়েড-এর মতে স্বপ্নের সৃষ্টি হয় মানুষের ইচ্ছা পূরনের আকাঙ্খা থেকে। যেই ইচ্ছের সৃষ্টি হয় সাম্প্রতিক, নিকট বা দূরবর্তী অতীতে। তিনি তার বিশেষ যুক্তিগুলো প্রমাণে অসংখ্য উদাহরণ ব্যবহার করছেন।


সিগমুন্ড ফ্রয়েড মানুষের মনকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন।
>> সচেতন (Conscious mind)
>> অবচেতন (Subconscious mind)
>> অচেতন (Unconscious mind)

আমরা স্বজ্ঞানে যা করি তা পরিচালিত হয় Conscious mind দ্বারা। ধরুন, কেউ সোফায় বসে আরাম করে টিভি দেখছেন। এটা তার Conscious mind। এখন টিভিতে শাকিরার whenever wherever গানটি শুরু হলো। সাথে সাকিরার মালাত করা স্লিম ফিগারে ঝাকানাকা কোমর দোলানো বেইলী ডেন্স। সে অপলকে টিভির দিকে তাকিয়ে উপভোগ করছে। এটিও তার Conscious mind। এখন কেউ যদি সাকিরার সাথে ডেন্স করা বা তার সান্নিধ্য কামনা করে সেটা অন্তত টিভি সেটের সামনে সম্ভব না। তখনই তৈরি হয় অবচেতন বা Subconscious mind যার পুরোটাই কল্পনাপ্রসূত। Subconscious চিন্তা তৈরি হয় Conscious mind থেকে। অর্থাৎ যে বিষয় নিয়ে আপনি চিন্তা বা কল্পনা করবেন তার অবশ্যই কিছু বাস্তব ধারনা থাকবে হবে। যেমন- আমরা মহাবিশ্বের বিভিন্ন গ্রহে জীবনের অস্তিত্ব কল্পনা করতে পারছি কারণ বিজ্ঞান আমাদের এলিয়েন নামক একটা ধারনার সাথে পরচিয় করিয়ে দিয়েছে বলে।

টিভিতে শাকিরার বেইলী ডেন্স দেখে তার সাথে নিজেকে কল্পনা করাও Subconscious mind এর কাজ। একটা ২-৩ বছরের পিচ্চি বাচ্চা যখন টিভিতে আকর্ষণীয় কিছু দেখে তখন সে টিভি স্কৃনে হাতিয়ে সেটি পেতে চায়। তার কাছে কল্পনা বা Subconscious mind মূখ্য না। সে Conscious mind এবং ডাইরেক্ট একশনে বিশ্বাসী। তাই সে টিভি হাতিয়ে পরীক্ষা করে সবকিছু। এখন আমার বা আপনার পক্ষে পরিবারের সামনে টিভি হাতিয়ে তো শাকিরাকে পরীক্ষা করা সম্ভব না। আর লাখ টাকা খরচ করে শাকিরার লাইভ কনর্সাটে গিয়ে তার ডেন্স উপভোগ করার খায়েশও আমাদের নেই। অবশ্য, যাদের সামর্থ এবং ইচ্ছা আছে তাদের জন্য অবশ্যই বলবো বেস্ট অফ লাক ব্রো...। তবে আমার মত গরিবদের আশ্রয় নিতে হবে সেই Subconscious mind এর।

নিদ্রায় মানুষ অজ্ঞান অবস্থায় থাকে। আর তখনই Subconscious mind সক্রিয় হয়ে ওঠে। আর এটিই হলো স্বপ্ন যা Unconscious mind এর কারসাজি। সিগমুন্ড ফ্রয়েড দাবি করেছেন- কোন স্বপ্নই আপনা আপনি তৈরি হয়না। "No dreams without link"...... অর্থাৎ পূর্ববর্তী কোন কল্পনা, ধারনা, না পাওয়ার বেদনা ইত্যাদি নিদ্রায় স্বপ্ন তৈরি করে। অনেকে হয়তো দাবি করতে পারেন যে - কাল আমি এমন এক অদ্ভূত স্বপ্ন দেখেছি যা আমি ইহ জিন্দিগিতেও কল্পনা করিনি। তবে সিগমুন্ড ফ্রয়েড-এর মতে ৪-৫ বছর বয়সের কল্পনা বুড়ো বয়সে এসেও নিদ্রায় স্বপ্নে আসতে পারে। অর্থাৎ কল্পনা করে ভুলে গেলেও সেটি স্বপ্নে দেখা সম্ভব। বাকিটা আল্লায় জানে।

মূলত Subconscious mind টাই সক্রিয় হয়ে উঠে স্বপ্নে। শাকিরার সাথে ডেন্স করার কল্পনা থেকেই Unconscious mind এ অনেকটা জীবন্ত অবস্থায় শাকিরার সাথে সক্রিয় হওয়া সম্ভব। পূর্বেই বলেছিলাম, স্বপ্নে অনেক সময় পেন্ট ভিজে যায়। স্বপ্নদোষ যাকে বলে আরকি। যদিও এখানে স্বপ্নের কোন দোষ নেই। দোষ যত সেই Subconscious mind এর।

যাই হোক, বইটি পড়ে দেখতে পারেন । ভালো লাগবে। অবাক করা অনেক উদারণ পাবেন। যদিও আমি নিজে বইটা শেষ করি নাই। দাতভাঙা ইংরেজী পড়তে কার ভালো লাগে বলেন? এক স্যারের লেকচার শুনে অনেকটা কৌতুহল বসত বইটি হালকা-পাতলা ঘাটাকাটি করলাম।
১৭টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×