গত দুইমাস অনেকগুলো ঘন্টা কেটেছে অসহ্য মন খারাপে। অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন, মনে কষ্ট লাগা বিষয় ঘটেছে। সব কিছুর শেষে কিছু ঘটনায় ইমানটা আরেকটু ঝালাই করতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর অপার মহিমা আল্লাহ আবারও আমাকে দেখিয়েছেন। তখন বাড়িতে ছিলাম করোনাকালীন ছুটিতে। মা, বোন আর ওর সাথে কাটানো সময়গুলো অসাধারন ছিল। এক গ্লাস পানি পর্যন্ত মা নিজ হাতে ঢেলে খেতে দেননি। খাবারতো আমার সামনে রেডী করে রাখতেনই সেই সাথে বোনদেরকে হাঁকডাক পারতেন পানি এনে দেওয়ার জন্য। রাজার হালে থাকতে চাইলে রাজপ্রাসাদ জরুরী নয় জরুরী রাজকীয় ভালোবাসার। যে ভালোবাসা একটা পরিবারে থাকে। যে ভালোবাসা জান্নাতের একটা টুকরার মত। সে যাইহোক রোযার মাস শুরু হল । কোন একটা ঘটনায় প্রচন্ড মন খারাপ। আমি তখন শ্বশুর বাড়িতে, একদিনের জন্য গিয়েছি। রাত এগারটার সময় আমার ইমিডিয়েট ছোট বোন আমাকে ম্যাসেঞ্জারে নক দিয়ে বলল, “ভাইয়া দেখতো তামান্না(আমার পিচ্চি বোন) বৃত্তি পায়ছে , আন্টি ফোন দিয়ে বলল।“ সাথে সাথে আমি গুগল ক্রোমে গিয়ে রাজশাহী বোর্ডের ৮ম শ্রেনীর বৃত্তি তালিকার পিডিএফটা নামালাম। পিডিএফ নামিয়ে তামান্নার স্কুলের নাম খুঁজতে লাগলাম । প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো নিচের দিকে পাব কারন জেনারেলে বৃত্তির তালিকা নিচের দিকে থাকে। কিন্তু নিচে না পাওয়াতে পুনঃরায় উপরের দিক থেকে খুঁজতে লাগলাম। আলহামদুলিল্লাহ আমার পিচ্চি বোন ট্যালেন্টপুলেই বৃত্তি পেয়েছে। খবরটা অনেক পুরাতন কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য এগুলোই আমার সম্পদ। আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আদরের আমার পিচ্চি বোনটা। বাবার হাতে বাকী তিন ভাইবোন আমরা প্রচুর মার খেয়েছি। কিন্তু আমি কখনও আমার পিচ্চি বোনকে মার খেতে দেখিনি। যদিও সেই দিনগুলোর কথা আজও মনে পরে। মিসও করি অনেক।
পিচ্চি বোনকে নিয়ে আমার সাথে সচারচর একটা ঘটনা প্রায়ই ঘটে। কেউ যখন জিজ্ঞাস করে তোমরা কয় ভাইবোন? আমি বলি, “ আমি একা ভাই আমার আর তিনটা বোন আছে।“ এর পরের প্রশ্ন আসে বোনগুলো কি বড় সব? আমার উত্তর হয়,” বড় বোন আর ইমিডিয়েট ছোট বোন বিবাহিত আর পিচ্চিটা এবার নাইনে উঠেছে।“ তখন আমি প্রশ্নকর্তার হা করা মুখ দেখতে পাই। হয়তো ভাবে নাইনে পড়া একটা মেয়ে আবার পিচ্চি হয় কি করে? তাকে বুঝাতে পারিনা পিচ্চিটা আজীবন আমার কাছে পিচ্চিই থাকবে। পিচ্চির মা হয়ে গেলেও পিচ্চিই থাকবে।
যাইহোক বাড়ীতে অনেকগুলো দিন কাটানোর পরে অফিস জয়েন করলাম । খুব মন খারাপ লাগতে লাগল বাড়ীর জন্য। কারন প্রতি মাসে বাড়ী যাওয়া অভ্যাস আমার। কিন্তু আল্লাহ প্রদত্ত কঠিন পরীক্ষায় জীবনে প্রথমবারের মত ইদ এখানেই করতে হল একাকী। যাইহোক সম্ভবত তখন ২৮ রোযা। সকাল থেকে ভীষন জ্বর। শুয়েই আছি বিছানায়। করোনা নাকি সেটাও বুঝতে পারছিনা। যদিও আমার এরকমজ্বর মাঝেমাঝে হয়। ঠান্ডার সমস্যা আছে আমার। আবহাওয়া পরিবর্তন হলেই সর্দি লেগে জ্বর হয়ে যায়। ভীষন জ্বরে কাবু তখন আমি। কোনমতে সলাত সেরে ইফতার করে আসলাম। ঔষধও নিয়ে এসেছি নাপা এক্সট্রা কিন্তু হঠাৎ তখন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাকের একটা লেকচার মনে পড়ল। তিনি লেকচারে বলেছিলেন, “ আপনার যখনই কোন বিপদ আসবে তখনই সলাতে দাঁড়িয়ে যান। দুই রাকা’আত সলাত আদায় করুন আর সিজদাহতে গিয়ে সব খুলে বলুন। একেবারে সব খুলে বলুন।“ মনে আসতেই আমিও মাগরিবের সলাত আদায় করেই আবারও দুই রাকা’আত নফল সলাতের নিয়্যতে দাঁড়িয়ে গেলাম। সিজদাহতে বসে অনেকক্ষন কাঁদলাম আল্লাহর দরবারে। সলাত শেষে পরম এক প্রশান্তি পেলাম। আহ! সুবহানআল্লাহ এশার সলাতের পরপরই দেখলাম মাথা অনেকটা হালকা হয়ে গেছে। পরেরদিন মুখে স্বাদ না থাকলেও জ্বর একেবারেই নাই হয়ে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ।
বেঁচে থাকার জন্য একটা জিনিসইতো যথেষ্ট। আপনি জানেন একজন আপনার সাথে আছেন সবসময়। আপনি পানিতে ডুবে মরেন বা বাঘের পেটে যাওয়ার উপক্রম হন এটা আপনার আল্লাহর নির্দেশেই হচ্ছে। তিঁনি এত এত এত এত মায়া দিয়ে আপনাকে তৈরী করেছেন ,এত এত এত এত ভালোবেসেছেন এবং বাসেন তিঁনিইতো আপনার রব। আহ! আরে দুনিয়া জাহান্নাম হয়ে যাক, দুনিয়ার সবাই আপনার শ্ত্রু হয়ে যাক, দুনিয়ার সবাই আপনার সাথে খারাপ আচরন করুক দিনশেষে আপনি এটা বলে বুক টান করে নিজেকে বুঝান আরে ধুর আল্লাহ আমার সাথে আছেন । আল্লাহ তাঁর বান্দাহকে ছেড়ে যাবেন না কখনও।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:৩৬