বান্ধবী বলেছিল, "তুই এত শিক্ষিত একটা মেয়ে। ঘর সামলানো আর সন্তান লালন পালন করেই কাটিয়ে দিবি? নিজের চাহিদা, ভরন পোষনের জন্য আরেকজনের উপর নির্ভরশীল থাকবি? এটা কি মেনে নেওয়া যায়?
ধর তোর স্বামীর অন্য কাউকে ভাল লাগল
বা ধর তোর প্রতি তোর স্বামীর ভালোবাসা কমে গেল বা অন্য একটা বিয়ে করল। তখন তোর কি হবে?"
রাহিকা (ছদ্মনাম) চিন্তায় পড়ে গেল। আসলেইতো যদি স্বামী আমাকে আর গুরুত্ব না দেয়। যদি আগের মত আর ভালো না বাসে? আমিতো মাস্টার্স কমপ্লিট করা উচ্চ শিক্ষিত মডার্ন মেয়ে। আমি কেন আরেকজনের দয়ার উপর নির্ভরশীল হবো?
শুরু হোল রাহিকার নতুন পথ চলা। যেহেতু শিক্ষিতা এবং আধুনিক চিন্তাধারার মেয়ে একটা কর্পোরেট সেক্টরে কাজ পেতে খুব একটা অসুবিধা হোলনা। সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ডিউটি। মাঝে মাঝে রাতে আসতে দেরীও হতে পারে। একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির উচ্চ পদস্থ অফিসারের পিএ বলে কথা। মাঝে মাঝে এখানে ওখানে দাওয়াত থাকে তাই সাথে যেতেই হয়। বেতনও ভালই। এখন আর স্বামীর উপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছেনা। নিজের খরচ নিজেই চালাচ্ছি। অবশ্য ছোট ছেলেটার জন্য একটু খারাপ লাগে। মাকে খুব মিস করে সারাদিন। তবে সমস্যা নেই। দশ হাজার টাকার একটা আয়া রেখে দিয়েছি বাসায়, ওই সামলায় ছেলেকে।
ইদানিং লক্ষ্য করছি সাদিক (স্বামী) আর আমাকে আগের মত ভালবাসেনা। আমার জন্য আগে হাতে করে টুকটাক অনেক কিছু কিনে নিয়ে আসত এখন আর আসেনা। অবশ্য আমাকে বাসায় এসে ক্লান্ত পায় বা পায়না তেমন একটা। সারাদিন অফিস করে জ্যাম ঠেলে বাসায় এসে শরীরটা আর চলেনা। আগে বেতন পেলে নতুন কড়কড়া নোটগুলো বেছে বেছে আমাকে দিত গিফট পেপারে মুড়িয়ে। বেতনের দিন আমার প্রিয় রজনীগন্ধার খোপা কিনে এনে আমাকে পরিয়ে দিত। আমি প্রতি মাসের এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করতাম। এখন আমি এরকম কয়েক হাজার খোপা একসাথে কিনার সামর্থ্য রাখি কিন্তু কেমন যেন সব হারিয়ে ফেলেছি। যে ভালবাসা হারানোর ভয়ে আমি সংসার ছাড়লাম, সন্তান ছাড়লাম এখন সেই ভালবাসায়ই হারিয়ে ফেলেছি। আমি আগে ছিলাম আমার স্বামীর হৃদয়ের রানী। আমাকে বুকে আগলে রাখত সব সময়। এখন হয়তো আমার অনেক টাকা আছে, আমার আর তাকে দরকার নেই ভেবে সে ভালবাসার সুতাটা আঁকড়ে ধরার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।