somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে তেল/গ্যাস অনুসন্দ্ধানের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং গ্যাস সংকটের প্রেক্ষিত।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ ভোর ৪:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিনমজুরের 'গ্যাস ব্লক ইজারা: এবার সাগর লুটের লাগলো ধুম' শিরোনামের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পোস্টটি আমাদের ব্লগে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে এবং প্রচুর রেসপন্স আমরা পড়ছি। এই রেসপন্সুগুলো পড়ে আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশে তেল/গ্যাস অনুসন্দ্ধানের ও উৎপাদন ব্যাবস্থাপনার একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সবাইকে জানানো দরকার। এ ইতিহাস আমাদের বর্তমান গ্যাস সংকট এবং ঐ সংকট পুজি করে বিদেশী স্বার্থের কাছে নতজানু নীতির একটি চিত্র আমাদের সামনে উন্মোচিত করবে এবং এবং আমাদের অপসন্সগুলো পরিস্কার হবে। আমি প্রায় পনরো বৎসর দেশের বাইরে, তাই মূলত স্মৃতির উপর নির্ভর করতে হবে, তবে তথ্যের ব্যাপারে যতটা সম্ভব যত্ন নিতে চেস্টা কোরবো।

বাংলাদেশ ভুখন্ডে তেল/গ্যাস অনুসন্দ্ধানের ইতিহাসকে মোটামুটি তিনটি সময়কালে ভাগ করা যায়, (১) ১৯০৮-১৯৩০ সাল (২) পাকিস্থান আমল এবং (৩)বাংলাদেশ আমল।

(১) ১৯০৮-১৯৩০ সাল

প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় ১৯০৮-১৯১৪,এ সময়কালে 'Indian Petroleum Prospecting Company(IPPC)' সীতাকুন্ডে কয়েকটি অগভীর কুপ খনন করেছিল (কোন সাফল্যের কথা জানা যায় না)। 1920 এর দশকের শেষ ভাগে 'Burma Oil Company'(BOC) সিলেটের পাথারিয়ায় তিনটি কুপ খনন করে এবং একটিতে তেলের সন্দ্ধান পায়। কারিগরী কারনে কুপটি পরিত্যক্ত হয়, এখনও বিওসি টিলা নামক স্থানে ঐ কুপ থেকে তেল চুইয়ে পরছে(মাধবকুন্ড একই পাহাড় শ্রেণীতে অবস্থিত)। এ কুপে বানিজ্যিক সম্ভাব্যতা যাচাই সম্ভব হয়নি।

২) পাকিস্থান আমল

১৯৫০-৬০ এই দু দশকে বাংলাদেশ ভুখন্ডে ব্যাপক অনুসন্দ্ধান কর্যক্রম পরিচালিত হয় এবং উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসে। এ সময়ে Pakistan Petroleum Limited(PPL) বৃহত্তর সিলেট এলাকায় হরিপুর, কৈলাশটিলা, রশীদপুরের মত গ্যাসক্ষেত্রগুলি আবিস্কার করে। অন্যদিকে Pakistan Shell Oil Company(PSOC) তিতাস ও হবিগন্ঞ্জ গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কার করে। PSOC কক্সবাজারের সমুদ্র এলাকায় একটি কুপ খনন করা কালিন সময়ে মুক্তিযু্দ্ধ শুরু হলে খনন অসমাপ্ত রেখে চলে যায়। ষাটের দশকে 'Standard Vacuum Company(Stanvac)' উত্তরবংন্গে অনেকগুলো কুপ খনন করে, তেল/গ্যাসের অনুসন্দ্ধান না পাওয়া গেলেও মুল্যবান কয়লা এবং চুনাপাথরের সন্দ্ধান লাভ করে। জামালগন্ঞ্জ কয়লা ক্ষেত্র এ সময় আবিস্কৃত হয়েছিল।

আমার দৃষ্টিতে পাকিস্থান আমলে জাতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ন একটি প্রতিষ্ঠান জন্ম লাভ করে, ষাটের দশকের শুরুতে সোভিয়েত সহায়তায় OGDC (Oil and Gas Development Corporation) সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। OGDC কে একটি স্বয়ংসম্পুর্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাড় করানোর জন্য প্রয়োজনীয় এহেন কোনো দিক নেই যা সোভিয়েত সহযোগিতা পায়নি। ষাটের দশকেই ভুতাত্বিক/ভুপদার্থিক সার্ভে এবং উপাত্ত বিশ্লেষন এবং খনন কাজে পারদর্শি একটি উল্লখযোগ্য দেশীয় জনবল সৃস্টি হয়ে যায়। উল্লেখ্য, প্রায় একই সময়ে ভারতে সোভিয়েত সহায়তায় Oil and Natural Gas commission (ONGC) কার্যক্রম শুরু করে,যা পশ্চিমা তেল কোম্পানীগুলোকে বিশ্ব বাজারে টেক্কা দিয়ে চলেছে।
(৩)বাংলাদেশ আমল
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাবেক OGDC এর জনবল, রিগ ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি নিয়ে দেশে 'তৈল সন্দ্ধানী' নামে অনুসন্দ্ধাণ কোম্পানী সৃষ্টি করা হয় ।OGDC ও 'তৈল সন্দ্ধানী' সেমুতাং এবং বেগমগন্ঞ্জ আবিস্কারের কৃতিত্বের দাবী রাখে। সত্তর দশকের শুরুতেই তৎকালিন সরকার সাগরে গ্যাস অনূসন্দ্ধানের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং মূলত এ কার্যক্রমকে oversee করার জন্য Petrobangla সৃস্টি করা হয়। পশ্চিমা বহুজাতিক কয়েকটি কোম্পানী ছাড়াও একটি জপানি ও একটি যুগোস্লাভ কোম্পানী সিসমিক সার্ভে এবং কুপ খনন করে। তবে কেবল কুতুবদিয়া গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কারের মধ্যেই এ প্রচেষ্টার সাফল্য সীমিত থাকে।

সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে 'তৈল সন্দ্ধানী'কে petrobangla এর সাথে একিভূত করা হয়।এ সময় জার্মান সহায়তায় ব্যাপক আকারে সিসমিক সার্ভে করা হয় এবং সিলেটের আটগ্রামে একটি অনুসন্দ্ধান কুপ খনন করা হয়। আশির দশকের শুরুতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ এর সাথে সাথে অনুসন্দ্ধান কার্যক্রম জোরদার করা হয়।কামতা এবং ফেণী গ্যাসক্ষেত্র এ সময় আবিস্কৃত হয়।Petrobangla এর technical capability একটি সম্ভাবনাময় স্তরে উন্নিত হয়।

এরশাদের আমলে অনুসন্দ্ধান কার্যক্রমে ভাটা পড়ে, এরপরও হরিপুরে তেল আবিস্কার এবং ফেন্চুগন্জে গ্যাস আবিস্কারে Petrobangla সাফল্য দেখায়। আশির দশকের শুরুতে পেট্রোবাংলার যে technical capability ছিল তা পশ্চিমা স্বার্থকে ভাবিত করে তোলে এবং নানা ষড়যন্ত্রের টার্গেট হয়ে দাড়ায়।পশ্চিমা স্বার্থের শিখন্ডি এরশাদ একদিকে বাংলদেশের সবচাইতে সম্ভাবনাময় সুরমা বেসিনের 13 এবং 14 নং ব্লক (একমাত্র তেলক্ষেত্রসহ) Scimitar এর কাছে সোপর্দ করে, আর অন্যদিকে Petrobangla এর Exploration Directorate কে অবলুপ্ত করে Bapex সৃস্টি করে। আপাত দৃষ্টিতে এ ব্যাবস্থা অনুসন্দ্ধান কার্যক্রমকে জোরদার করার উদ্যোগ মনে হলেও মূল উদ্দেশ্য ছিল ঠিক উল্টো। কোন আয়ের উৎস বিহীন Bapex দ্রুত একটি উদ্যমহীন হতাশাগ্রস্থ Organisation এ পরিনত হয়। শুরু হয় ভূ-বিজ্ঞানী আর পেট্রোলিয়াম/খনন প্রকৌশলীদের Exodus।এ মুহুর্তে কেবল Canada এর Calgary তে কর্মরত বাপেক্সের প্রাক্তন ভূ-বিজ্ঞানী আর পেট্রোলিয়াম/খনন প্রকৌশলীদের দিয়ে একটি Oil Company চালান সম্ভব।

এরশাদের বিদায়ের পর খালেদা বা হাসিনা সরকার বাপেক্স এর উন্নয়নের প্রতি সমান অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছে।বাপেক্স এর কার্যক্রমে স্থবিরতা এবং বিজ্ঞানী/প্রকৌশলীদের দেশত্যাগ খোদ পেট্রোবাংলাকে মেধাশুন্য করেছে এবং এটিকে একটি Glorified Clerk দের organisation এ পরিনত করেছে।

আজ যে বিবিয়ানা, জালালাবাদ বা মৌলভীবাজার গ্যাসফিল্ডের গ্যাস পেট্রোবাংলা ক্রয় করছে সেই গ্যাসফিল্ডগুলোর অব্স্থান এবং সম্ভাবনা এ দেশের ভূতাত্ত্বিকদের কাছে অজানা ছিল না, শুধু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লুটেরাদের প্রতিহত করা যায়নি, এটাই দূঃখ।

আরেকটি পর্বে করণীয় নিয়ে লেখার ইচ্ছা রইলো। পনর বছরের চর্চার অভাবে ভাষাগত দূর্বলতার জন্য সবার কাছে ক্ষমা চাইছি।


সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ ভোর ৪:০৭
২৭টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×