somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নাম মুবারকের পর দুরূদ শরীফ সংক্ষেপে লেখা প্রসঙ্গে.........

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রশ্নঃ- নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নাম মুবারকের পর অনেকে দুরূদ শরীফ সংক্ষেপে صلعم ইত্যাদি লিখে থাকে ।কিন্তু এর দ্বারা অনেক বিধর্মী এবং মুনাফিক ব্যক্তিরা ব্যঁঙ্গ করার অবকাশ পায় ।মূলত ইসলামী শরীয়তে নবীজীর(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নাম মুবারক উচ্চারন এর পর দুরূদ শরীফ টি কি সংক্ষেপে লেখা যাবে কিনা?আর সাহাবায়ে কিরাম ও আউলিয়া কিরামগনের বেলায়ও কি সংক্ষেপ করা যাবে? বিস্তারিত বললে উপকৃত হব ।





উত্তরঃ- صلی اللہ علیہ وسلّم এর জায়গায় صلعم লেখা মোটেই জায়েয না।এটা সাধারন মানুষতো দুরের কথা চৌদ্দশত বৎসরের বড় বড় বিজ্ঞ ও মহাপুরুষদের মাঝে প্রসারিত হয়েছে । কেউ صلعم কে صللم কেউ علیہ الصلوۃ والسلام এর বদলে عم লিখে থাকে । সামান্য কালি,এক আঙ্গুল কাগজ বা এক সেকেন্ড সময় বাচানোর জন্য কতই বঞ্ছিত ও হতভাগ্য হয়ে যায় ।


ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী(রহমাতুল্লাহি আলাইহি)বলেছেন-যে ব্যক্তি দরূদ শরীফকে প্রথম সংক্ষেপ করেছিল তার হাত কর্তন করা হয়েছে। [যা তার লিখিত কিতাব ‘তাদরীবুর রাওয়ী’তে উল্লেখ আছে]



আল্লামা সৈয়দ তাহত্বাভী(রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হাশিয়ায়ে দুররুল মুখতার –এ বলেছেন,ফাতোয়ায়ে তাতার খানীয়া থেকে বর্ণিত-



من کتب علیہ السلام بالھمزۃ والمیم یکفرہ لانہ تخفیف و تخفیف الانبیاء کفر



‘যে ব্যক্তি علیہ السلام কে ءم লিখে তাকে কাফির বলা হবে । কেননা তা হেয় করা আর নবীদেরকে হেয় করা 'কুফরী' ।

(নাউযুবিল্লাহ) যদি হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে হয় তাহলে অবশ্যই নির্ঘাত কুফরী ।অলসতা ও অজ্ঞতা বশতঃ এমন করলে উপরোক্ত বিধানের কাফের হবে না । তবে অবশ্যই তা যে বরকতহীন,বদকিসমত ও দূর্ভাগ্য এতে কোন সন্দেহ নাই ।



আমি বলছি এটা প্রকাশ্য যে,

القلم احدی اللسانین

“কলম এক রসনা” [অর্থাৎ,কলম ভাব প্রকাশের অন্যতম একটি মাধ্যম] ।



صلی اللہ علیہ وسلّم এর জায়গায় অর্থহীন صلعم লেখা তা যেন নবীজীর নাম মুবারক শুনে দুরূদ না পড়ে الم ‏غلم উচ্চারন করা ।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

فبدل الذین ظلموا قولا غیر الذی قیل لھم فانزلنا علی الذین ظلموا رجزا من السماء بما کانوا یفسقون

“যারা অন্যায় করেছিল তারা তাদেরকে যা বলা হয়েছিল তার পরিবর্তে অন্য কথা বলল । অনাচারীদের প্রতি আমি আসমান থেকে শাস্তি প্রেরন করলাম তাদের কুকর্মের কারনে”



বনী ঈসরাঈলদেরকে বলা হয়েছিল,

- قولوا حطۃ

অর্থাৎ‘তোমরা বল-আমাদের গুনাহ ক্ষমা করুন ।’



তৎপরিবর্তে তারা বলেছিল

حنطۃ

‘গম দিন’ ।

এটিতো অর্থবোধক ছিল ।

এখানে তো আল্লাহ একটি নে’মতের উল্লেখ করতঃ নির্দেশ করেছেন

یا ایھا الذین امنوا صلوا علیہ و سلموا تسلیما

‘হে ঈমানদারগন ! তোমরা নবীর উপর দরূদ ও সালাম প্রেরন কর’

اللھم صلی و سلم وبارک علیہ و علی الہ و صحبہ ابدا



‘ওয়াজিব কিংবা মুবাহ যেভাবে হোক প্রত্যেক বার নবীর(সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামা)নাম মুবারক শুনলে,মুখে উচ্চারন করলে কিংবা কলম দ্বারা লিখতে এ বিধান প্রযোজ্য ।লেখাতে হুজুর(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নাম মুবারক আসলে صلی اللہ علیہ وسلّم লেখার বিধান রয়েছে ।এরই পরিবর্তে অর্থহীন صلعم, عم, صللمলিখলে আল্লাহর গযব নাজিল হওয়ার কি ভয় করে না? ‘আলইয়াযু বিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ ।

এটা দরূদের বিষয় হালকা মনে করলে কুফরী হবে । তার নিম্ন স্তরের সাহাবা ও আউলিয়া কেরামের নাম মুবারকে رضی اللہ تعالی عنہ

এর পরিবর্তে رض লিখলে ওলামা কেরাম মাকরূহ এবং বঞ্চিত ব্যক্তির লক্ষন বলেছেন ।



আল্লামা সৈ্য়দ তাহত্বাভী(রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন,

یکرہ الرمز بالترضی بالکتابۃ بل یکتب ذالک کلہ بکمالہ

লেখার সময়ে রাদিয়াল্লাহুকে ইশারায় লেখা মাকরূহ বরং তা পূর্ণাঙ্গভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে ।



ইমাম নববী শরহে মুসলিম শরীফে বলেছেন,

ومن اغفل ھذا حرم خیراعظیما وفوت فضلا جسیما

‘যে উহা হতে গাফেল হয় সে বড় কল্যান থেকে বঞ্চিত এবং মহা অনুগ্রহ হারিয়েছে’।(নাউযুবিল্লাহ)



অনুরূপভাবে قدس سرہ

বা رحمۃ اللہ علیہ এর পরিবর্তে ق কিংবা رح লেখা বোকামী ও বরকতহীন ।এসব বিষয় থেকে বিরত থাকা উচিৎ ।

আল্লাহ তায়ালা নেক কাজ করার সুযোগ দান করুক(আমিন)।



জ্ঞাতব্য বিষয়ঃ নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) নাম মুবারক এর পর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) এবং সাহাবায়ে কিরামের নাম মুবারকের পর ‘রাদিয়াল্লাহু আনহু’ এবং আওলিয়া কিরামের পবিত্র নাম এর পর রাহেমাহুল্লাহ /রহমাতুল্লাহি আলাইহি’ লেখার উপরোক্ত পদ্ধতি ও ফতোয়াটি শুধু আরবী নয় উর্দূ,বাংলা,ইংরেজী সহ ইত্যাদি আল্লাহর সৃষ্ট পৃথিবীর সকল ভাষার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য……কেননা সকল ভাষা-ই আল্লাহর সৃষ্টি এবং সকল ভাষাতেই আল্লাহ ও তার হাবীবের(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা)এর নাম মুবারক এবং সাথে সাথে সাহাবায়ে কিরাম ও আওলিয়ায়ে কিরামের পবিত্র নাম নেওয়া হয় ।সুতরাং, সকল ভাষায় লেখার ক্ষেত্রেই এগুলো পুরোপুরি ভাবে লিখতে হবে, কেননা এটাই হচ্ছে প্রকৃত আদব।



[আল্লাহ তায়ালাই অধিক ভাল জানেন]



সূত্রঃ “ফাতোয়ায়ে আফ্রিকা” কৃত-চতূর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দীদ,আলা হযরত,ইমামে আহলে সুন্নাত, শাহ্‌ আহমদ রেযা খান ফাযেলে বেরেলী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)
View this link

void(1);
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×