somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামের পীর প্রথার বৈধতা আছে কি? [১]

০১ লা এপ্রিল, ২০১২ রাত ৯:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পীরগণ কি আল্লাহ পাকের নৈকট্য প্রাপ্ত প্রতিনিধি?

মানুষের কল্যানের জন্য ইসলামের আগমন। যেই ইসলাম মানুষের কল্যানের জন্য এসেছে,সেই ইসলামের কারনে মানুষের কোনরুপ অকল্যান করা,অত্যাচার-অবিচার বা জুলুম করা চলবে না।তাতেই ইসলামেরই মানহানি ঘটবে।কিন্তু তাওরপরও মানুষ জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে মানুষের অত্যাচার অবিচারে নিজের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলে;নিরাশার অন্ধকারে হাবুডুবু খায়।সে ভুলে যায় যে সে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টী আশরাফুল মাখলুকাত।আর তার শক্তি অসীম।কেননা আল্লাহ পাক তার সীফাতী শক্তি ও গুনের দ্বারা মাটির পৃথিবীতে মানুষকে তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধিরুপে সৃষ্টি করেছেন। যেমন কোরআনে পাকে সূরা বাকারার ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক ঘোষনা করছেন যে,
আয়াত- وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الأَرْضِ خَلِيفَةً
অনুবাদঃ হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইকা ওয়া সাল্লাম!আপনি স্মরণ করুন যখন আপনার প্রভু ফেরেস্তাগণকে বলেছিলেন যে,আমি পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি প্রেরণ করতে চাই।
আল্লাহ পাক তাঁর নিখিল সৃষ্টির বুকে তাঁর এই প্রতিনিধি দ্বারা সত্য সুন্দর শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার জন্য যুগে যুগে নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন ও সর্বশেষে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামাকে প্রেরণ করেছেন এবং তাঁর সঙ্গে ইসলাম ধর্মকে পাঠিয়েছেন।তাই সে যুগে অনেকেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর আদর্শে আদর্শবান হয়ে তাঁদের আত্ম সাধনার দ্বারা ফেরেশতার চাইতেও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে সাহাবী নামে খ্যাতি লাভ করেছেন।তারপর সাহাবীদের অনুসরণ ও অনুকরণ করে অনেকেই তাবেয়ী হয়েছেন এবং তাবেয়ীদের অনুসরন ও অনুকরন করে কেহ কেহ তাবে-তাবেয়ী নামে পরিচিতি লাভ করেছেন।এবং এ সকল মহা মনীষীদের সান্নিধ্যে থেকে মানুষ তার আত্মসাধনার দ্বারা মহান আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভে সমর্থ হয়ে আউলিয়া-দরবেশ বা পীর রুপে খ্যাতি লাভ করেছেন।এবং মহান আল্লাহ পাক সমগ্র সৃষ্টজীবের অন্তরে আউলিয়া-দরবেশ বা পীরগণের জন্য অশেষ ও অফুরন্ত ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ দান করেছেন।আউলিয়া দরবেশ বা পীরগণের জন্য এই শ্রদ্ধাবোধের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেই ইসলামী চেতনার বিশ্বনন্দিত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কাব্যে লিখেছেন,
বন্ধু বলিনি ঝুট, এইখানে এসে লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট।

ওলী আল্লাহ গনই কি পীর?
এখন জানা ও দেখার বিষয়টি হল ইসলাম আওলীয়া-দরবেশ বা পীরগণ সম্পর্কে কি মন্তব্য করে এবং পীরী মুরীদীর মাধ্যমে ইসলাম প্রচারে পীর প্রথার বৈধতাই বা কতটুকু?
তাই এখন আওলীয়া-দরবেশ বা পীরগণ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন থেকে সঠিক তথ্য জানার চেষ্টা করব।সূরা ইউনূসের ৬২ নম্বর আয়াতে কুরআন উত্তর দিচ্ছে-
أَلاَ إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللّهِ لاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ
অনুবাদঃ “জেনে রেখো নিশ্চয় যাঁরা আল্লাহর ওলী তাঁদের কোন ভয় নাই।আল্লাহই তাঁদের জন্য যথেষ্ট।”
এ আয়াত শরীফের প্রথম অংশে বলা হয়েছে যে, “জেনে রেখো,নিশ্চয়ই যাঁরা আল্লাহর ওলী তাঁদের কোন ভয় নাই।”অর্থাৎ আল্লাহর প্রিয় বান্দাহদেরকে আউলিয়া আল্লাহ বলা হয়।আউলিয়া শব্দটি শব্দটি ওলী শব্দের বহুবচন।ওলী শব্দের শাব্দিক অর্থ বন্ধু বা প্রতিনিধি।আউলিয়া আল্লাহ শব্দের শাব্দিক অর্থ হল আল্লাহর বন্ধুগণ বা আল্লাহর প্রতিনিধিগণ।আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অনেকেই পবিত্রতা ও পরহেজগারীতা অবলম্বন করে সাধনার মাধ্যমে তাঁর প্রিয় হন,তাঁদেরকে আওলিয়ায়ে কাসবী(কাসবী অর্থ কষ্ট করে অর্জনকারী)।আবার কিছু সংখ্যক আওলীয়া-আল্লাহ মায়ের পেট থেকে ওলী হয়ে আসেন তাঁদেরকে আতায়ী আওলিয়া আল্লাহ বলা হয়। অর্থাৎ তারা বিনা পরিশ্রমে আল্লাহ পাকের দানের বিনিময়ে আওলিয়া আল্লাহ হয়েছেন।আবার কিছু সংখ্যক আওলিয়া আল্লাহ কোন আওলিয়া আল্লাহর নেক দৃষ্টির বিনিময়ে ওলী হয়ে যান তাঁদেরকে আওলীয়ায়ে ওয়াহ্‌বী বলা হয়।
আয়াতের দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে “আল্লাহ্‌ই তাদের জন্য যথেষ্ট”।অর্থাৎ ওলী আল্লাহগণকে তাঁদের কর্ম পদ্ধতির জন্য দুভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
১.ওলীয়ে তাশরিয়ি।
২.ওলীয়ে তাক্‌ভীনি।
১.ওলীয়ে তাশরিয়ি
প্রতিটি নেক মুসলমান যারা আল্লাহপাকের নৈকট্য লাভ করে থাকেন তাঁদেরকে আল্লাহ পাকের ওলীয়ে তাশরিয়ি বলা হয়।প্রত্যেক চল্লিশ জন মুসল্মানের মধ্যে একজন ওলীয়ে তাশরিয়ি হন।
২.ওলীয়ে তাকভীনি
আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভের পর যাঁদেরকে এ বিশ্ব জগতের মাঝে দৃষ্টি বিচরণ করার শক্তি প্রদান করা হয় তাঁদেরকে ওলীয়ে তাকভীনি বলা হয়।যাদের মাঝে হচ্ছেন গাউস্‌,কুতুব,আওতাদ ও আবদালগণ ওলীয়ে তাকভীনী শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত ।
সমস্ত ওলী আল্লাহগণই দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত দুঃখ কষ্ট ও চিন্তাসমূহ থেকে মুক্ত।
মনে রাখা উচিত যে,কেহ কেহ পরহেজগার হয়ে ওলী হন আবার কেহ কেহ ওলী হয়ে পরহেজগার হন।যেমন আল্লাহ পাক সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সূরাহ ইউনূসের ৬৩ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেছেন-
الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ
অনুবাদঃ “আউলিয়া আল্লাহ ঐ সব লোকজন যারা ঈমান এনেছেন এবং নেক আমল করেন।”
কোন লোক ওলী হওয়ার পর আল্লাহ তায়ালা তাঁর সৃষ্ট মানবজাতির মুখ দিয়ে অনায়াসেই এ বাক্য পাঠ করিয়ে থাকেন যে,তিনি আল্লাহর ওলী।তাঁদের মধ্যে যারা দুনিয়া থেকে পর্দা করেছেন(ইন্তিকাল করেছেন)তাঁদের উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন বড়পীর শায়খ আব্দুল ক্বাদের জিলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি,শায়খ শাহাবুদ্দিন উমর সোহরাওয়ার্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি,খাজা গরীব নাওয়াজ মঈনউদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি,হযরত শায়খ আহম্মদ ফারুকী সারহিন্দি মোজাদ্দেদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি,হযরত শাহ জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি,হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দেসে দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি,হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ্‌ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলাইহি,হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম আহমদ রেযা খান বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি,শাহ আব্দুল মতিন মোজাদ্দেদী মোহাদ্দিস শাহ আবাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখ।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×