‘কিছুদিন আগে এক মা এখানে মারা গেলেন। অফিস থেকে তাঁর ছেলের কাছে ফোন করা হলো। ছেলে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে চাকরি করেন। তাঁকে আসতে বলা হলে তিনি আসবেন বলে কথা দেন। তাঁর জন্য অপেক্ষা করতে করতে সময় পেরিয়ে যাচ্ছিল। এর মধ্যে আরও কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে জানাজা করে লাশ কবরস্থানে নিয়ে গিয়ে আমি ওই ছেলেকে ফোন করি। তিনি জানান, মায়ের লাশ দেখতে আসার সময় নেই তাঁর। আমরা যেন দাফন করে কবর দিই।’
উপরের কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাইভেট বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা খতিব আবদুল জাহিদ। যিনি মুকুল নামেই বেশি পরিচিত।
একজন মা কত কষ্টে একজন সন্তানকে দুনিয়ায় আলো দেখান তা যদি ছেলেটি জানতো হয়ত চন্দ্রে অভিজানে থাকলেও সে তার মাকে শেষবারের জন্য ছুটে আসতো দেখতে। ছেলেটি যদি জানতো প্রায় বছর সময় ধরে কত কষ্ট সে তার মাকে দিয়েছিল গর্ভে, তবে সে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি কাজ ফেলে ছুটে আসতো মায়ের শেষ যাত্রায়। যদি জানতো কত কষ্টে আর জ্বালাতন সহ্য করে তাকে তিলে তিলে মা দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তবে সে পাগলের মত ছুটে আসতো মাকে শেষ বিদায় জানানোর জন্য। না সে আসেনি। হয়ত বিধাতায় চাননি এমন হারামজাদা সন্তান দেখুক তার মাকে যে জীবদ্দশায় তার সেবা না করে রেখে এসেছিল বৃদ্ধাশ্রমে। বিধাতা হয়ত চাননি এই হারামজাদা মার কবরে মাটি দিয়ে তাকে অশ্রদ্ধা করুক। বিধাতা ঠিক কাজই করেছেন তাকে সেখানে না নিয়ে। শেষ করছি একটা ছোট কবিতা দিয়ে,
''বিধাতা তোমার কাছে মোর ফরিয়াদ
দিওনা কো কভু কোন মায়ের কোলে এমন সন্তান
মানব তো নয়, পশু সন্তানও হবার যোগ্য সে নয়
অবোধ লীলায় স্বর্গের চাবি দূরে ঠেলে দিতে যে পেরেশান''
মা' কে নিয়ে অখ্যাত এক শিল্পীর অবিশ্বাস্য আবেগের একটি গান-
আর নচিকেতার অমর সেই গান দিয়ে
‘ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার/
মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার-ওপার/
নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামি দামি/
সবচেয়ে কম দামি ছিলাম একমাত্র আমি/
ছেলের আমার, আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম/
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম।’
*লেখাটির ছবি এবং উপরের কোট করা অংশটি "ছুটির দিনের" ৮ অক্টোবর সংখ্যা থেকে নেয়া। প্র.আলোর আর্কাইভ সুবিধা বন্ধ থাকায় লিংক দেয়া গেলোনা।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১০:৪৪