somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Colorful - মুভি রিভিউ

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



Are you alive?

মাঝে মাঝে কি এমন সময় এসেছে যখন কোন একদিন মনে হয়েছে চিরজীবন বেঁচে থাকতে পারলে বোধহয় খুব ভাল হত? অথচ ঠিক তার পরদিনই হটাৎ করে সব কিছু অর্থহীন মনে হয়েছে? বেঁচে থাকার ইচ্ছের জায়গাগুলো কি হটাৎ করেই দখল করে নিয়েছে একরাশ হতাশা, নিজের উপর; চারপাশের মানুষগুলোর উপর? নিজের ভুলগুলোর জন্য নিজের উপর প্রবল আক্রোশ এসে ভর করেছে?
আমার ধারনা আমাদের সবার জীবনেই কখনো না কখনো এমন সময় এসেছে। এবং আমরা সেই অবস্থা কাটিয়েও উঠি, আবার ফিরে যাই যান্ত্রিক জীবন যাপনে; কখনো কারো সাহায্য নিয়ে; কখনো কখনো হয়ত নিজের মনের জোরেই।

আমরা অনেক সময়েই আসলে বেচে থাকাটাকে পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারি না। কারণ আমরা আসলে পুরোপুরি বেঁচে থাকি না কখনই। আমরা তিন বেলা খাই, সারারাত ঘুমাই আর সারা দিন ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ুতে থাকি; ক্যারিয়ার; পড়াশুনা; দায়িত্ব; কর্তব্য – এখান থেকে সেখানে। একটু স্থির হয়ে বসে গোটা দুনিয়াটাকে, আকাশটাকে; চারপাশে মানুষগুলোকে চোখ মেলে দেখার একটুও ফুরসত মেলে না আমাদের। আমরা পুরোপুরি বেঁচে থাকি না; বেঁচে থাকার অভিনয় করি যাই আসলে।

খুব প্রিয়জন যখন বড় কোন ভুল করে ফেলে; এমন কিছু করে বসে যা জন্ম দেয় একগাদা অবিশ্বাসের; সেই ঘটনা ভুলে গিয়ে তাকে পুরোপুরি ক্ষমা করে দিতে আসলে কত সময় লাগে? ১মাস? ৬ মাস? ১ বছর? পুরোপুরি কি ভুলে যাওয়া যায় আদৌ? যদি না যায় সেক্ষেত্রে করণীয় আসলে কি? আর সেই প্রিয়জনেরই বা কি করার থাকে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার জন্য?



কালারফুল মুভিটা দেখতে শুনতে আট দশটা স্বাভাবিক পরিবারের মতন অথচ নানারকম মানসিক টানাপোড়েনে থাকা এক পরিবারের গল্প, যে পরিবারের সবচেয়ে ছোট, বিষাদগ্রস্থ, জুনিয়র হাই স্কুলে পড়া ছেলেটি একের পর এক খারাপ ঘটনার পিঠে জীবনের চরমতম সিদ্ধান্তটি নিয়ে নেয়। সৃষ্টিকর্তা অপর একটা অপরাধী আত্মাকে পাঠান সেই শরীরে; আত্মার শুদ্ধির জন্য। আমরা সেই আত্মার চোখে পরিবারটাকে দেখতে পাই; ছেলেটার চারপাশের পরিবেশটা দেখতে পাই; প্রতিদিনের সংগ্রামগুলো দেখতে পাই; একে একে সবার বদলে যাওয়াটা দেখতে পাই এবং এই প্রক্রিয়ার মধ্যে একসময় আসলে জীবনের সৌন্দর্যগুলোরও খোজ পেতে আরম্ভ করি। প্রত্যেকটা মানুষের পিছনে যে আসলে অনেকগুলো মানুষের সহযোগিতা জড়িয়ে আছে; নীরবে হোক অথবা সরবে – কেউ না কেউ যে তার উপর ভরসা করে আছে, তাকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে আছে – এই সহজ সত্যগুলো আমরা ভুলে যাই মাঝে মাঝেই। এই মুভিটা সেই সত্যগুলোকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখতে শিখায়; সব কিছুকে মেনে নিয়ে কীভাবে বেঁচে থাকতে হয়; সবকিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কি করে জীবনটাকে উপভোগ করতে হয় তার একটা ছোট্ট উদাহরণ দেয় আমাদের।

জীবনের আসল উত্তরটা কি? তার সফলতা আর বিফলতাটাই বা কোথায়? একটা ভাল রেজাল্টে? ভাল চাকরিতে? একগাদা টাকা পয়সায়? নাকি পরিবারের সবাইকে নিয়ে; প্রিয় মানুষগুলোকে নিয়ে একটু ভাল থাকায়? তাদেরকে সময় দেওয়ায়? চারপাশের দুনিয়াটাকে দেখায়, মানুষজনের সাথে মেশায়, জীবনটাকে নিজের মতন করে উপলব্ধি করায়, উপভোগ করায়? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরগুলো আসলে কখনোই মেলে না। কিংবা আমরা হয়ত মেলাতে চাই-ও না। চারপাশের মানুষগুলোকে দেখে; তাদের চিন্তাভাবনা আর তাদের উত্তরগুলোকেই নিজের উপর চাপিয়ে নেই, অবলীলায়। অথচ নিজেকে একবারও প্রশ্ন করে দেখি না – আমি কি আসলেই এটাই চেয়েছিলাম? আমরা কখনোই বুঝতে চেষ্টা করি না যে অপরের সফলতা মানে কখনোই নিজের ব্যার্থতাও নয়; আর ৮-১০ জনের মতন হতে না পারাটা কোন বড় সমস্যাও নয়।

প্রত্যেকটা মানুষের ভিতরেই আরেকটা মানুষ বাস করে। যে মানুষটাকে আমরা কাউকে দেখাতে চাই না; তাকে লুকিয়ে রাখতে চাই নিরন্তর। কিন্তু খুব দুর্বল মুহূর্তগুলোতে সে কি করে কি করে যেন ঠিকই বেড়িয়ে আসে। এবং সে কারণে নিজের উপর খুব অভিমান হয় পরে। কিন্তু আমরা ভুলে যাই মানুষের রঙ আসলে একটা না; অনেকগুলো। সবার আলাদা আলাদা রঙ মিলেই পুরো পৃথিবীটা রঙিন। সবার জন্য একই ছাঁচ, একই ব্লুপ্রিন্ট খাটে না; খাটা উচিতও না। দিনশেষে শুধুমাত্র একগাদা রঙকে ধারণ করে, নিজের সবগুলো অপূর্ণতাকে মেনে নিয়ে নিজের মত করে বেঁচে থাকার মাধ্যমেই আমরা বুঝতে পারি –
Yes, I am alive.

............

মুভিঃ কালারফুল।
লিঙ্কঃ Click This Link
সময়ঃ ২ ঘন্টা ৭ মিনিট।
ম্যাল স্কোরঃ ৮.১৩।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×