somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

''হাতে লেখা চিঠি''

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তোমাকে বলছি,

জানি না প্রেম নামক এই অস্পৃশ্য কিন্তু সংবেদনশীল অবস্তুগত মনের জগতে জীবনের প্রথমে তোমার প্রিয়ের কাছ থেকে পাওয়া এই চিঠিখানি তোমার দেহের প্রতিটা ইঞ্চি শিহরিত করবে কি-না! জানি না, আমার চিঠির প্রতিটা লাইন তোমার হৃদয়ের স্পন্দনকে সাময়িক বন্ধ করে দেবে কিনা, এও জানি না, তোমার হৃদয়য়ের প্রতিটা স্পন্দন আমার লেখা প্রতিটা বাক্যের প্রতি সাড়া দেবে কিনা!
কারণ, তার বিহীন এই যুগে মোবাইল নামক মাধ্যমটি তাৎক্ষণিক মনের বার্তাবাহক রূপে আমার হৃদয়ের সকল কথাগুলো মুহূর্তে তোমাকে জানিয়ে দেয় যেখানে বহু কথা এমনও আছে যা অনেকটা রুটিন মাফিক বলে থাকি। তাই সংশয়; কাগজে লেখা আমার মনের কথাগুলোও হয়ত তোমার শ্রবণ অঙ্গ শুনেছে বহুবার!
কিন্তু আমি যখন মুখের কথাগুলোকে কলমের মুখ দিয়ে কাগজে আঁকছি তখন যেন ভাবছি এ যেন তোমার শরীরের প্রতিটা স্পর্শ আমার হৃদয়ের সকল প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত ভালবাসার অগোছালো ও অব্যক্ত কথাগুলোকে শৃঙ্খলায়িত করে তোমার কর্ণকুহুরে বলছে, “ভালোবাসি তোমারে”।
আচ্ছা, যদি বলি- মানুষ মানে কল্পনা-তুমি কি বল? আমি বলি- তুমি আমার কল্পনা আর আমি তোমার কল্পনা। কল্পনা ছাড়া তুমি অনেক দূরে আর কল্পনায় আছো অনেক কাছে! ঝর্না যেমন রিমঝিম শব্দে নতুন জলরাশি দিয়ে প্রতিনিয়ত নদীকে পরিপূর্ণ রেখে চলেছে সৃষ্টির প্রথম হতে আজও, তেমনি তুমিও পরিপূর্ণ করে চলেছ আমাকে।
যদিও শরৎ কিংবা রবীন্দ্র কেউই বেঁচে নেই তবু যেন মনে হয়, তুমি যেন তাদের কোন এক উপন্যাসের চিরযৌবনা নায়িকা আর তারা আমার মনের এলোমেলো ভাবনাগুলোকে তোমার কাছে সরল-সহজ ভাষায় উপস্থাপন করছে যেখানে আমি এক সত্তা যাকে তুমি প্রতিনিয়ত কল্পনার সব রঙ দিয়ে এঁকে চলেছ আপন মনে সেই প্রথম দেখার পর থেকে আজও। প্রতিদিন ধরাবাঁধা নিয়মে আমরা যে কথা বলে চলেছি তা ধরা যায় অনেকটা গতানুগতিক কিছু নির্দিষ্ট ভাবের প্রকাশ মাত্র। কিন্তু তারপরও প্রতিদিন যে অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে সেগুলো কখনই এক হতে পারে না। রবীন্দ্র কিংবা শরৎ এর নিজ নিজ লেখাগুলো একই ধাঁচের বটে; কিন্তু প্রতিটি গল্পের স্বাদ যেন ভিন্ন ভিন্ন ধরণের। এমনিভাবে আমাদের ভাব প্রকাশের মাধ্যম একি হলেও প্রতিটি দিন আমরা একে অপরকে পায় যেন এক নতুন অনুভূতি নিয়ে।
আচ্ছা, আজ তোমাকে একটা নতুন নামে ডাকি। কিন্তু কি নামে ডাকা যায় ভেবে পাচ্ছি না। কি নামে--- কি নামে----।
হ্যাঁ পেয়েছি- বৃষ্টি! যার ধর্ম হল, মৃতপ্রায় হৃদয়ে প্রাণের সঞ্চার ঘটানো!

বৃষ্টির সাথে আমাদের একেক জনের সম্পর্ক একেক ধরণের। কেউবা তার মাঝে ভিজতে ভালবাসে কেউবা ভালবাসে তার রিমঝিম শব্দ শুনতে।আর কেউবা তার সমাপ্তি লগ্নের দিকে চেয়ে থাকে অধীর আগ্রহে। কিন্তু কবি সাহিত্যিকরা বৃষ্টিকে এঁকেছেন কল্পনার শত রঙ দিয়ে একেক জন একেক ভাবে। বিশেষ করে পল্লীকবি জসীম উদ্দীন বৃষ্টিকে পল্লীর জীবন-যাত্রায় এমন এক অবিচ্ছেদ্য অংশে রূপ দিয়েছেন সত্যিই যেন বাংলার নিসর্গিক চিত্র বৃষ্টি ছাড়া অসম্পূর্ণ রয়ে যায়।
যেমনটি দেখা যায় গ্রীষ্মের কাঠফাঁটা রোদে ধূ-ধূ বালূময়, শ্রীহীন এক অসবুজ মাঠ, যেখানে চৈত্রের প্রচন্ড রৌদ্রে মাটি চৌচির হয়ে যায় , ঘাসগুলো হয়ে যায় বিবর্ণ , যেখানে দৃষ্টি বেশী দূর এগোয় না আর প্রচন্ড তাপে রাখাল ছেলে তার গরুগুলো নিয়ে যেতে পারে না । কিন্তু বৃষ্টি এসে যখন এই উওপ্ত মাঠকে ছুঁয়ে যায় তখন শ্রীহীন মাঠের দৃশ্যপট কিছু দিনের মধ্যে পাল্টে যায় । সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির মস , শৈবাল , টেরিস , ছএাক ইত্যাদি জন্মে । আর তখন রাখাল ছেলের দল গরু-ছাগল নিয়ে আবার মাঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে চলে অবিশ্রান্ত । আর বিকালে বাড়ী ফিরে পরদিন আবার মাঠপানে রওনা দেয়।
অপর দিকে কবর কবিতার সেই বৃদ্ধ দাদুর মত বহু লোক বলদ-জোয়াল নিয়ে মাঠ পানে রওনা হয় সারা দিন জমিতে চাষ করে সোনার ফসল ফলাবে বলে। এমনি ভাবে কিছুদিন পর সারা মাঠ সবুজ, হলদে, সোনালি হরেক রঙে রঙ্গিন হয়। কোথাও কাঁচা কোথাও পাঁকা কোথাও বা কাঁচা-পাঁকা ধান আবার কোথাও হলুদ, সরিষার ক্ষেত। সবকিছু মিলে এ যেন জসীম উদ্দীনের “নকশী-কাঁথার মাঠ”!
কিন্তু আমি যেটা ভাবছি, “নকশী-কাঁথার মাঠ”-এর পিছনে যে বিষয়টি জড়িত তা হল বৃষ্টি! এই বৃষ্টি না হলে নকশী কাঁথার মাঠ না হয়ে তো আগুনের মাঠ হত! আসলে বৃষ্টিই পারে সবকিছুকে সজীব করতে, ধূ-ধূ বালুময় মাঠে নতুন প্রাণ দিতে; আবার তার অনুপস্থিতি পারে সবুজে-শ্যামলে ঘেরা পল্লী গ্রামকে এক শ্রীহীন জনপদে পরিণত করতে আর পারে সবুজ এক প্রান্তরকে ধূ-ধূ মরুভূমিতে পরিণত করতে। বৃষ্টির অনুপস্থিতিতে প্রকৃতি যেমন বিবর্ণ রূপ ধারণ করে তেমনি তার অভাবে মানুষের হৃদয়ে শূণ্যতার সৃষ্টি হয়। সত্যি, তার ভালোবাসা আছে বলেই প্রকৃতি এত সুন্দর আর সুন্দর তার বুকে বিচরণশীল সকল জীব। ভোরের ঘুম ভাঙ্গানো পাখীর কলরব আর মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানো রঙ-বেরঙের প্রজাপতি আর পাখী এসব কিছুই পল্লী গাঁয়ের আপরূপ লীলা। কিন্তু , আমি ভাবি কি জানো? যদি সে কোন দিন অন্যত্র চলে যায় কাউকে কিছু না বলে, চলে যায় কল্পনার সীমার বাইরে আমাদেরকে ভুলে দূরে, বহু দূরে! তাহলে সে দিন গ্রাম বাংলার চিত্র কেমন হবে? হবে হয়ত হিরশিমা অথবা নাগাসাকি ।
কিন্তু আমার প্রিয় কবির কাব্য গ্রন্থটা কি সেদিন অযত্নে অবহেলায় চির বিলীন হবে? নাকি আগের মতই সে তার আবেদন ধরে রাখবে এই বাংলায়?
ভাবি, পারবে না।
কারণ, বৃষ্টির অভাবে তো সকল হৃদয়ে এক শূন্যতা বিরাজ করবে । সেখানে তো কোন আশা নেই, আলো নেই, ভালোবাসা নেই। আছে কেবল অসীম অন্ধকার , যেখানে কোন দিন আর আলো জ্বলবে না ।
তবে সত্য যে, বৃষ্টি ভালো না বাসলেও, ভুলে গেলেও , অন্যত্র চলে গেলেও কেউ তাকে ভুলতে পারবে না। তার দুটি রূপের মধ্যে প্রথম (সবুজায়ন) রূপটা চিরকালে মানুষের মাঝে স্মৃতি হয়ে থাকবে। হয়ত বা তাকে দূর হতে দেখে মনের অজান্তে বলবে , অনাবৃষ্টি।

মেহেদী হাছান
সিনিয়র অফিসার
সোনালী ব্যাংক লি:

জা.বি.
ফার্মেসী বিভাগ (প্রাক্তন ছাত্র)

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৩১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×