ব্যস্তময় জীবনে শৃঙ্খলে আবদ্ধ মানুষগুলো যখন কাজের ফাঁকে একটু আধটু ফুরসত পায় তখন তারা প্রকৃতির কাছাকাছি আসতে চেষ্টা করে। যেন প্রকৃতির এক একটা সৌন্দর্য দেখে জীবনের এক একটা ব্যথা -বেদনা, পাওয়া-না পাওয়ার বেদনা, মানসিক কষ্ট থেকে কিছুটা সময় হলেও নিজেকে আনন্দের মাঝে ডুবিয়ে রাখা যায় আর নতুন উদ্দ্যমে আগামী দিনটি শুরু হয়। পড়ন্ত বিকালে আকাশের নানা রঙের মেঘগুলো যখন তেজহীন সূর্যের চারদিকে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে আর সময়ের ব্যবধানে বিলীন হতে থাকে তখন সবকিছু যেন কোন এক নিপুন শিল্পীর আঁকা ছবি বলে মনে হয়। আর এমন একটি মুহূর্তে যখন রঙ-বেরঙের পাখীরা ঝাঁকে ঝাঁকে ডানা মেলে নিজ বাসা পানে ফিরে যেতে থাকে, তখন সত্যিই প্রকৃতির এই অপরূপ দৃশ্য যে কোন মানুষকে বিমোহিত করে যা নিজ চোখে না দেখলে কেবল বর্ণনায় বোঝানো কারও পক্ষে সম্ভব নয়। এমনই একটি অপরূপ সৌন্দর্যের লীলা ক্ষেত্র বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাট গ্রামের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ”বিসারকান্দি” নদীর দু’পাশের পাখীদের আবাসস্থল। এ যেন নানা প্রজাতির হাজার হাজার পাখীর অভয়াশ্রম। নদীটির উপর আছে একটা লম্বা ব্রীজ যার উপর দাঁড়িয়ে অনেক কাছ থেকে এসব পাখীদের বিচরণ খুব সহজেই উপভোগ করা যায়। জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষ যেমন সকালে যার যার কর্মস্থলে রওনা হয় তেমনি পাখীগুলোও ভোরের স্নিগ্ধ আবহাওয়ায় খাবারের সন্ধানে ঝাঁক বেধে উড়াল দেয় পাশের অথবা দূরের কোন হাওড়-বাওড়ে। সারাদিন খাবারের সন্ধান করে যখন পাখীগুলো আবার পয়সারহাটের ”বিসারকান্দি” নদী তীরবর্তী তাদের আশ্রমে ফিরে আসতে শুরু করে তখন পড়ন্ত বিকালের আকাশে হাজার হাজার পাখীরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পুরা এলাকাটিতে এক মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করে। ঝাঁক ঝাঁক পাখীর দল নদীর বুকে জমে থাকা শেওলাতে আর তীরের গাছ-গাছালিতে খানিকটা বিশ্রাম নেয় আবার কিছু পরে ঝাঁক বেঁধে আকাশে বিচরণ করে। আর এমন মুহূর্তে আকাশ পানে চেয়ে থাকলে সত্যিই যেন জীবনের সমস্ত ব্যথা-বেদনা, দুঃখ-কষ্ট, পাওয়া না পাওয়ার বেদনা ভুলে মানুষ ওই সব পাখীদের একজন হয়ে অসীম আকাশে স্বাধীনভাবে বিচরণ করে।
ব্রীজের দু’পাশে নদীর ধারে হোগলা গাছের মাঝে অসংখ্য শালিক পাখী তাদের অবিরাম কলকাকুলীতে মুখরিত করে তোলে সমস্ত পরিবেশ। যা দর্শনার্থীদের ক্ষণিকের জন্য হলেও স্মরণ করিয়ে দেয় ছোট বেলার সেই বাড়ীর পাশের বাঁশ বাগানের শালিকের কলকাকুলিতে মুখরিত সন্ধ্যা আর তারপর এক গভীর নিস্তব্ধতা। নদীর তীরবর্তী গাছগুলোতে যখন শতশত সাদা বকেরা ঝাঁকে ঝাঁকে বসে, তখন গাছগুলোকে যেন ট্রাফিক সার্জেন্ট এর সাদা ছাতা বলে মনে হয়। আর শেওলার উপর বসা বকগুলো যেন সাদা কার্পেট এর মত দেখায়।
প্রতিদিন বিকালে পয়সারহাটের এ ব্রীজের উপর সব শ্রেণী ও বয়সের বহু দর্শনার্থীরা আসেন পাথীদের অভয়াশ্রমে তাদের বিচরণ উপভোগ করতে। আর এ সব দর্শনার্থীদেরকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু অস্থায়ী খাবারের দোকান। এখানে পাওয়া যায় হালিম,ফুসকা,চালভাজা,মুড়িভাজা ইত্যাদি মুখরোচক খাবার। ফলে অত্র এলাকার কিছু লোকের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে।
আসলে বর্তমান যান্ত্রিক যুগের এই ধরা-বাঁধা জীবনে মানুষ যখন হাঁপিয়ে ওঠে তখন ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রকৃতির এ সব মন ভালো করা স্থানে বেড়াতে আসে নিজেকে নিজের মত করে উপভোগ করতে। যেখানে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গিয়ে মানুষ তার ভিতরের মানুষটিকে খুঁজে পেতে চেষ্টা করে।
মেহেদী হাছান
সিনিয়র অফিসার
সোনালী ব্যাংক লি: