জীবন অনুভূতিময়, শাশ্বত ও অস্পৃশ্য অস্তিত্ব, যা ঘটনাবহুল গল্পের সমারোহে ভরা কিছু সময়ের সমষ্টি, কিছু স্থির স্মৃতি বিজড়িত একটি আত্নার ক্ষণিক অবস্থান এই মহা বিশ্বে।যাকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না; তবে জীবনের বিশেষ এক মুহূর্তে তার প্রকৃত অস্তিত্ব ধরা পড়ে।তখনই বোঝা যায় কত নির্মম সে। তাকে সর্বোচ্চ কঠোর নিরাপত্তায় রাখতে চায় সকলে, কিন্তু সব কিছুকে উপেক্ষা করে সে আপন গতিতে বিচরণ করে সর্বত্র, সকলের মাঝে। কারণ তার আসল ঠিকানা তো সেই মহাকাল, যা তাকে সর্বদায় আহ্বান করে যায় অসীমে মিশে আত্নগোপন করে থাকতে। তাই সুন্দর এই পৃথিবীকে সে অনায়াসে প্রত্যাখান করে সকল মায়া-মমতাকে বিসর্জন দিয়ে। জীবন যখন অনেকটা সুন্দর, নিরাপদে চলতে থাকে তখন সকলে তাকে চিরকালের জন্য আপন করে পাওয়ার প্রত্যাশা করে মনের অজান্তে। কিন্তু এক সময় সে কাউকে কিছু না বলে পাড়ি জমায় অনন্তের পথে সকলকে নির্বাক করে।মানুষ তাকে প্রকৃতই ভালবাসে কিন্তু সে কাউকে ভালবাসে না বিন্দু মাত্র। সে সব সময় দূরত্ব রেখে চলে।তাইতো সে ধরা ছোঁয়ার বাইরে, অনেক দূরে।সে তার সাথে কাউকে অংশীদার করতে চাই না।কারণ, তার মত নির্মম, পাষাণ হৃদয়ের কেউ বা কোন পদার্থ নেই এই চরাচরে। পাথর, সে তো কঠিন হৃদয়ের, তবুও তার বুক চিরে ঝর্ণা প্রবাহিত হয় আর সকলকে যেন তার অব্যক্ত কথাগুলোকে জানাতে চায় অবিরাম স্রোতধারার শব্দে।
কিন্তু মায়ের আকাশ-বাতাস কাঁপানো আর্তনাদে কোনরূপ সাড়া না দিয়ে জীবন পাড়ি জমায় অনন্ত-অসীমে সকলের আঁড়ালে।সন্তানের বিনাশে মায়ের আহাজারিতে, নিস্বার্থ আর্তনাদে কেবল কি মনে হয় জান? মনে হয় পৃথিবীর বিনিময়ে জীবনের আহ্বান জানায়। প্রেমিকের বিনাসে প্রেমিকার কেবল একটাই চাওয়া – তাকেও যেন সে সাথে নিয়ে যায়, একা ফেলে না যায় এই রংহীন অর্থহীন জীবনে। কিন্তু সে তো নির্দয়, তার কাছে ভারাক্রান্ত এই হৃদয়ের সব কিছুই মূল্যহীন।সে যেন পৃথিবী চায় না, পিতা-মাতার বুক ফাঁটা আর্তনাদ শুনতে চায় না, চায় না এক মুহূর্তের জন্য একটু অপেক্ষা করতে যখন অনন্তে মিশে যাওয়ার ডাক পড়ে। সকল কিছুকে উপেক্ষা করে সে রওনা দেয় মহা শূন্যে, গভীর নিস্তব্ধতার অনেক গভীরে। তার জীবনে ”ফেরা” শব্দটি যেন অর্থহীন একটি শব্দ, যা দ্বারা কেবল ব্যর্থ অনুরোধ জানানো হয়।তার অস্তিত্ব যেন মহাশূন্যে, অনন্তে, দিকহীন ও সীমাহীন কোন এক নিস্তব্ধ অরণ্যে, যেখানে যাওয়ার দরজা আছে কিন্তু সেখান থেকে ফেরার দরজা নেই।আর এখানে পড়ে আছে তার ছলনাময়ী ছায়া, যাকে আশ্রয় করে আমরা একে অপরকে চিনি, বুঝি।জীবন সে তো এক মরিচীকার গল্প, যেখানে সে তার ছলনার জালে জড়িয়ে সকলকে দৌড় প্রতিযোগিতায় পেছনে রেখে ছুটে চলেছে পৃথিবীর সেই প্রথম হতে আজও।কিন্তু আমি চাই না এই মরিচীকার ফাঁদে পড়ে তার পেছনে ক্লান্ত হয়ে ছুটে চলতে।বরং, সর্বদা তার থেকে দূরে দূরে থাকব। তার কথা কল্পনাতেও আনব না, তার আহ্বানও জানাব না।কেবল তাকে অভিশাপ দেব। কেন সে মায়ের বুক খালি করে।আমার প্রিয় অস্তিত্বকে নিজের ইচ্ছামত কোন রকম সাড়া না দিয়ে বিনাশ করে দেয়। সে কেন এতটা পাষাণ, এতটা নির্দয়।সে কেন আমাকে অসমাপ্ত কাজটি করার একটুখানি সময় দেয় না। তার কি কোনই দয়া-মায়া নেই?
কেন তুমি এতটা নির্দয়, পাষাণ, মমতাহীন? যখন মা তার সন্তানের মাথা বুকে রেখে ডুকরিয়ে ডুকরিয়ে কাঁদে তখন তো আকাশ কাঁদে, বাতাস কাঁদে, কাঁদে কঠিন হৃদয়ের পাথরও; যার কান্নায় সৃষ্টি হয় প্রবাহমান স্রোতস্বীনি, যার পানি অবশেষে একাকার হয় সাগরের সীমাহীন জলরাশিতে।আসলে তুমি এসব বুঝবে কি করে, কারণ তোমার তো মা নেই!
মেহেদী হাছান