somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসরাইলি নিষ্ঠুরতা বেশি দিন চলতে পারে না: টাইমকে বললেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তায়েপ এরদোগান। মিসরসহ আরব বসন্ত প্রবাহিত হওয়া দেশগুলোর কাছে তিনি এখন একজন গুরুত্বপূর্ণ রকস্টার। চলতি সপ্তাহে ফিলিস্তিনের জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ পাওয়ার দাবির পক্ষেও সবচেয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিলেন এরদোগান। তার সময়েই তুরস্ক অর্থনৈতিক এবং বিশ্ব রাজনৈতিক অঙ্গণে উলেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। ঠিক এই সময়েই জাতিসংঘ, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বরাজনীতির নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের সাথে খোলামেলা কথা বলেছেন এরদোগান। আর এই আলোচনার মূল বিষয়ই ছিল তুরস্কের সাথে ইসরাইলের রাজনৈতিক সম্পর্ক, মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার ব্যর্থতা, আরব বসন্তের পেছনে এরদোগানের সমর্থন, জাতিসংঘ প্রশ্নে হতাশা এবং তুরস্কের ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিতে চাওয়া প্রসঙ্গ। টাইমকে দেওয়া তুর্কী প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের চুম্বক অংশটি আমাদের অর্থনীতির পাঠকদের জন্য নিচে তুলে ধরা হলো:

টাইম: আপনি ফিলিস্তিন ইস্যু এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে সমর্থন দিচ্ছেন। অনেকেই বলছে, শান্তি প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের ভূমিকা আসলে কোনো কার্যকরী ভূমিকা রাখছে না। আপনি কি নিজেও তাই মনে করেন?

এরদোগান: সর্বপ্রথম ও প্রধান কথা, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচিত ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবি মেনে নিয়ে ‘হ্যাঁ’ বলা। এরপরও যদি কিছু থাকে, তাহলে তা আলোচনা করা যেতে পারে। সেটা অবশ্যই দুটি রাষ্ট্রে মধ্যে। প্রথম দিকে মনে হয়েছিল, ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের সীমানা বণ্টণ মেনে নিয়েছে। কিন্তু যেভাবেই হোক তারা আদর্শিক জায়গা থেকে সরে গেছে। তাদের উচিত সেই জায়গায় ফিরে যাওয়া। ফিলিস্তিন এখন জটিল গোলক ধাঁধার মধ্যে আছে। তাঁদের (ফিলিস্তিনিদের) কি অস্তিত্ব আছে ? ইসরায়েলের নিষ্ঠুরতা আর বেশিদিন চলতে পারে না। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জনগণের ন্যায়সংগত দাবি অবশ্যই মেনে নিতে হবে। জাতিসংঘের উচিত এ বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া। যারা এই দাবিকে নেতিবাচকভাবে দেখার বা বলার চেষ্টা করছে, তারা তাদের ইতিহাস সম্পর্কে জানে না।

টাইম: চার-পাঁচ বছর আগে মনে করা হতো, তুরস্ক আর ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক খুবই ভালো এবং তারা এই অঞ্চলে একটা পরিবর্তন আনতে পারবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেই সম্পর্ক চূড়ান্ত অর্থেই ভেঙ্গে গেছে।

এরদোগান: ইসরায়েল ২০১০ সালে মাভি মারমারায় (ছোট রণতরী ফ্লোটিলা) হামলা চালানোর ফলে দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক তিক্ততার দিকে গেছে। ইসরায়েল যখন আক্রমণ করে, তখন মাভি মারামা ছিল আন্তর্জাতিক জলসীমায়। ওই রণতরীতে বিতর্কিত এমন কিছুই ছিল না। ছিল শুধু খেলনা, খাবার আর কিছু দাতব্য সামগ্রী। ফ্লোটিলাতে ৩২টি দেশের ৪৫০ জনের বেশি মানুষ ছিল। রণতরীটি অস্ত্রে ভরা ছিল বলে তারা (ইসরাইল) দাবি করছে, তাহলে রণতরী থেকে কেন কোনো গুলি ছোঁড়া হয়নি তাদের দিকে? ফ্লোটিলাতে তুরস্কের বংশোদ্ভুত যে নয়জন মানুষ নিহত হয়েছে, তাদের ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করতে পর্যন্ত অস্বীকার করেছে ইসরায়েল।

টাইম: জাতিসংঘের সাধারণ সভায় আপনি এবং (ফ্রান্সের) প্রেসিডেন্ট সারকোজি দু’জনেই বলেছেন, শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র যে পদক্ষেপ নিয়েছিল, তা পুরোপরি ব্যর্থ হয়েছে। কার্যকর শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য আপনি কি আলাদা কিছু ভাবছেন?

এরদোগান: আজ পর্যন্ত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইসরায়েল বরাবর ৮৯টি প্রস্তাব রেখেছে। কিন্তু এর কোনোটিই বাস্তবায়ন করেনি ইসরায়েল। কেন ইসরায়েলের ওপর কোনো শাস্তি ধার্য করা হয়নি। যখন ইরানের ক্ষেত্রে কথা ওঠে, তখন আপনি শাস্তি দেন। একই ঘটনা সুদানের ক্ষেত্রেও। ইসরায়েলের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হয় কিভাবে ? যদি সঠিক সময়ে ইসরায়েলের ওপর প্রাপ্য শাস্তি ধার্য করা হতো, তাহলে অনেক আগেই ফিলিস্তিন-ইসরাইল দ্বন্দ নিরসন হতো। একই সঙ্গে জাতিসংঘের পুনর্গঠনও দরকার। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের অবশ্যই সরিয়ে দেওয়া উচিত। পুরো বিশ্ব এই পাঁচটি দেশের কাছে দাস হয়ে আছে।’

টাইম: আরব বিশ্বের যে সব দেশে আরব বসন্ত হয়েছে, সে সব দেশে আপনার বেশ সুনাম। তারা তাদের দেশের স্বৈরশাসকদের হটিয়ে দিয়ে তুরস্কের গণতান্ত্রিক রূপ অনুসরণ করতে চাচ্ছে। আপনার এই সাহায্য কি আপনাকে সমালোচনার মুখে ফেলবে না, যখন যুক্তরাষ্ট্রও বিশ্বব্যপী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের কথা বলে সমালোচিত হচ্ছে?

এরদোগান: অন্যদের মতো আমি সেসব জায়গায় শুধু রাস্তার কিছু মানুষ দেখতে যাই না। আমি সেখানকার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী, নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলি। আমরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের শাসনব্যবস্থা রপ্তানি করছি না। যদি কেউ আমাদের সাহায্য চায়, তাহলে আমরা তার প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা করবো।

টাইম: সিরিয়াকে তুরস্কের গণতান্ত্রিক রূপের প্রতি মাথা নত করতে দেখা যাচ্ছে না। ইসরায়েলের মতো আপনিও প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করছেন। এখন সে সম্পর্কও ভঙ্গুর অবস্থায়। সিরিয়ার শান্তির জন্য এমন কোনো পদক্ষেপ আছে কি, যাতে করে আসাদ ক্ষমতায় থাকতে পারে।

এরদোগান: আমি কিছু নীতির ওপর ভিত্তি করে সম্পর্ক নির্ধারণ করি। যারা অভিযুক্ত নেতা এবং যখন তারা নিজ জনগণের ওপর আক্রমণ করতে গুলি, ট্যাংক এবং অন্যান্য ভারি অস্ত্র ব্যবহার করে, তখন তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক রাখা অসম্ভব। আসাদ আমাকে বলেছিল, ‘কারাগারে আমাদের মাত্র ৮৩ জন রাজবন্দী আছে’। কিন্তু আসলে সেখানে রাজবন্দী আছে হাজার হাজার। এর মধ্যে অনেকেই আছেন যারা কখনও কোনো সহিংসতা বা অভুত্থানের সঙ্গে জড়িত নয়। আপনি জানেন, সিরিয়া থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা সাত হাজার শরণার্থীকে আমরা হাতাই প্রদেশে আশ্রয় দিয়েছি।

টাইম: কিন্তু আপনি আমাদের প্রশ্নের উত্তর দেননি। সিরিয়াতে কি আসাদের ভবিষ্যত্ আছে ?

এরদোগান: এ বিষয়ে আমি অতটা আশাবাদী নই।

টাইম: তাহলে ইসরায়েল সম্পর্কে কি বলবেন?

এরদোগান: বর্তমান ইস্যু নিয়ে আমরা ইসরায়েলের সাথে নেই। কিন্তু এই ভিন্নমত পোষণ করার কারণ সম্পর্কহীনতা নয়।

২০১১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দৈনিক আমাদের অর্থনীতিতে প্রকাশিত।

https://www.facebook.com/MesbahPatwaryBd
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×