যুক্তরাষ্ট্রের নামীদামী স্কুলগুলোতে দিন দিন আরও অধিক বাংলাদেশি ছাত্র ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। বিশেষ করে নিউইয়র্ক সিটির সেরা স্কুলগুলোতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বাংলাদেশি ছাত্রের সংখ্যা। বিশ্বের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে একথা উল্লেখ করা হয়েছে। রির্পোটে বলা হয়, নিউইয়র্কের সেরা হাই স্কুল স্টাইভ্যাসেন্টের মোট শিক্ষার্থীর ৭২ শতাংশ এশিয়ান। যাদের মধ্যে চীনা ও কোরিয়ানদের পরেই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অবস্থান। এখানে দিন দিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিউইয়র্কেরই আরেকটি নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্রঙ্কস সায়েন্স হাই স্কুল। স্কুলটিতে এখন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০০ জন।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশি ছাত্রদের এই সুযোগ পাওয়ার নেপথ্য কারণ হিসেবে একটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এটি জ্যাকসন হাইটসের খান’স টিউটোরিয়াল। টিউটোরিয়ালটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশি আমেরিকান ড. মনসুর খাঁন এবং তাঁর স্ত্রী নাঈমা খাঁন। আগামী ২৯ ও ৩০ অক্টোবর স্টাইভ্যাসেন্ট, ব্রঙ্কস সায়েন্স, ব্র“কলিন টেকনিক্যাল হাই স্কুলসহ সিটির সেরা ১০টি পাবলিক স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা। এসব স্কুলে ভর্তির স্বপ্নপূরণেই সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে খাঁন’স টিউটোরিয়ালে যাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিটে বাংলাদেশ প্লাজায় দুই ফ্লোর জুড়ে খাঁন’স টিউটোরিয়ালের প্রধান শাখা। ছাত্র-ছাত্রীদের প্রায় সবাই বাংলাদেশি। দলগতভাবে ক্লাস নেওয়া হয়। ছাত্র-ছাত্রীর সবাই অষ্টম গ্রেডের। সবারই লক্ষ্য সিটির সেরা পাবলিক স্কুলের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া।
সেরা স্কুলে ভর্তির জন্য আরও টিউটোরিয়াল রয়েছে। তবে সেগুলোর চেয়ে খাঁন’স টিউটোরিয়ালের টিউশন ফি তুলনামূলকভাবে খুবই কম। বিশেষ করে ‘ক্যাপল্যান’ এর চেয়ে অনেক কম ফিতে ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে পড়তে পারে। এর ফলে স্বল্প এবং নুি আয়ের লোকজনের সন্তানদের জন্য অনেক সুবিধা হচ্ছে। অনেকেরই মা-বাবা ট্যাক্সি ড্রাইভার অথবা রেস্টুরেন্ট শ্রমিক। আবার অনেকেই অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট। বাংলাদেশি মালিকানাধীন কয়েকটি টিউটোরিয়াল সেন্টার এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেলেও খাঁন’স টিউটোরিয়াল ক্রমেই এগিয়ে চলেছে। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মনসুর খাঁন (৫৮) এবং তাঁর স্ত্রী আরেক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা নাঈমা খানের নেতৃত্বেই এটা সম্ভব হচ্ছে।
নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশিদের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও এ সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এশিয়ানদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যাই ক্রমবর্ধমান। একটা সময় ছিলো যখন কম্যুনিটির লোকজনের বাড়িতে গিয়ে সন্তানকে ভালো স্কুলে ভর্তির ব্যাপারে পরামর্শ দিতেন খাঁন দম্পতি। এরপর শুরু করেন টিউটোরিং। টিউটোরিয়ালের প্রথম গ্রুপের ছাত্র ছিল মাত্র ৩ জন। এদের একজন ছিলেন তাদেরই সন্তান ইভান খাঁন। ব্রঙ্কস সায়েন্স হাই স্কুলে ভর্তির সুযোগপেয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকেই গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।
ইভান খাঁনের বয়স এখন ২৯। চিকিত্সা বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে তিনি এখন তার মা-বাবার প্রতিষ্ঠিত খাঁন’স টিউটোরিয়াল পরিচালনায় সহায়তা করছেন। বর্তমানে খাঁন’স টিউটেরিয়ালের ৭টি শাখা রয়েছে। এ বছর সর্বশেষ শাখা চালু হয়েছে এস্টোরিয়ায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খাঁন’স টিউটোরিয়াল থেকে বহুসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী স্পেশালাইজড হাই স্কুলগুলোতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। ইভান খাঁন যখন ব্রঙ্কস সায়েন্স হাই স্কুলে পড়াশুনা করতেন তখন বাংলাদেশি ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা ছিল মাত্র ডজন খানেক। আর এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০ জনে।
খাঁন’স টিউটোরিয়াল ছাত্র ছাত্রীদের খুব সহজে অংক শেখানোর নতুন একটি পাঠ্যক্রম (কারিকুলাম) তৈরি করেছে এবং তা সুফলও দিচ্ছে। শীঘ্রই এ কারিকুলামটি বার্নস এন্ড নবেল ও আমাজন ডট কমে বিক্রি করা হবে বলেও জানান ইভান খাঁন। এছাড়া ধীরে ধীরে অংক শেখানোর পদ্ধতিও অনলাইনে ছাড়া হবে।
২০১১ সালের ০৯ অক্টোবর দৈনিক আমাদের অর্থনীতিতে প্রকাশিত
https://www.facebook.com/MesbahPatwaryBd

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



