somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মিজানুর রহমান মিলন
আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও তুরস্কের নগ্ন হস্তক্ষেপ

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ গুল জামাত নেতাদের যুদ্ধপরাধের বিচার তথা ফাসি হতে রক্ষার জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও রাস্ট্রপতি বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন কিন্তু প্রশ্ন হল বাংলাদেশে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ । একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীন বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন কোন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা কতটুকু আন্তর্জাতিক রীতিনীতিতে যুক্তিযুক্ত বা শোভনীয় ?

শুধু এটুকু নয়, তুরস্কের একটি বেসরকারী প্রতিনিধিদলও ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে সফর করেছে যুদ্ধপরাধীদের বিচার ট্রাইবুন্যাল পর্যবেক্ষন ও এর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ব্যক্তির মতামত গ্রহন করার লক্ষ্যে। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল সেই প্রতিনিধী দলটিও বাংলাদেশে সরকারের কোন অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেনি । সরকারের পক্ষ থেকে তুরস্কের রাস্ট্রদুতকে ডেকে এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়েছে যে ভবিষ্যতে যেন এরকম ঘটনা না ঘটে আর বন্ধুপ্রতীম দেশহিসাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন নীতিতে তুরস্ক যেন হস্তক্ষেপ না করে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন নীতিতে হস্তক্ষেপ করে তুরস্কের লাভটা কি বা কেন তুরস্ক বাংলাদেশের মত স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীন নীতিতে হস্তক্ষেপ করতেছে তা ভাল করে জানা দরকার।

এটা সর্বজনবিদীত যে আধুনিক তুরস্ক হল পশ্চিমাদের মিত্র। আজকের তুরস্কের ক্ষমাতসীন ইসলামিক দল জাস্টিস অ্যন্ড ডেভলপমেন্ট পার্টি নিজেদের ইসলামিক দাবী করলেও তারা নিজ দেশে কতটুকু ইসলাম কায়েম কেরেছেন সেটা জানা যাবে একটা উদাহরন দিয়েই । তুরস্কের বর্তমান ইসলামী সরকারের নেত্রীত্বাধীন হলেও তুরস্কে এখন পর্যন্ত হিজাব রাস্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ !!!

তুরস্কে ন্যাটোর অন্যতম সদস্য আর সারা বিশ্বে ন্যাটোর ভূমিকা কারো অজানা থাকা নয়। এই ন্যাটোই লিবিয়াতে হামলা করে লিবিয়াকে ধ্বংসস্তুপে পরিনত করে আর এখন তুরস্ক সিরিয়ায় পালন করতেছে পশ্চিমাদের মোসাহেবের ভূমিকায় । সিরিয়া হল আরব রাস্ট্রগুলির মধ্যে একটি অগ্রগামী দেশে । সেখানে সরকার বিরোধী আন্দোলনকেই সুযোগ হিসাবে গ্রহন করছে তুরস্ক।সরকার বিরোধী আন্দোলন রাতারাতি পরিণত হয় স্বশস্ত্র বিদ্রোহে। তুরস্ক আফগানিস্থান ও মুসলিম বিশ্ব থেকে তালেবান, আল কায়েদা, ওহাবী, সালাফি সন্ত্রাসীর বিমানে করে নিয়ে এসে নিজ ভূ-খন্ডে প্রশিক্ষন দিয়ে পাঠাচ্ছে সিরিয়ায় বাশার সরকারের পতন ঘটাতে। এরফলে সিরিয়া জড়িয়ে পড়েছে গ্রহযুদ্ধে আর সিরিয়া এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

তুরস্কের সঙ্গে আছে পশ্চিমা বিশ্ব, সৌদি ও শেখ আমীর শাসিত আরব রাস্ট্রগুলি যাদের পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে কথা বলার মত কোন মেরুদন্ডই নেই আর এইসব প্রত্যেকটি দেশে আছে যুক্তরাস্ট্রের সেনাঘাটি। আসলে তুরুস্ক বর্তমানে চাচ্ছে পশ্চিমাদের ছত্রছায়ায় থেকে মুসলিম বিশ্বে র্যডিক্যালদের সহায়তা করে মুসলিম বিশ্বের নেতা হতে !

গত শতকে বিশ্বের প্রথম গণহত্যা ঘটিয়েছিল তুরস্ক। ১৯১৯ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত তুরস্ক প্রায় ১৫ লাখ আর্মেনীয়কে হত্যা করেছিল—এখন পর্যন্ত যার বিচার হয়নি।
আর্মেনীয় গণহত্যার সঙ্গে বাংলাদেশের গণহত্যার অনেক মিল। পাকিস্তানিরা যেমন স্বীকার করে না, তেমনি তুরস্কও স্বীকার করে না। আজও আর্মেনীয়রা লড়ছে সেসময় যে গণহত্যা হয়েছিল তার স্বীকৃতি পেতে।
আর্মেনীয় গণহত্যা শুরু হয়েছিল প্রায় ২৫০ জন বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও হত্যাকে কেন্দ্র করে। এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল তখনকার অটোমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তালাত পাশা।

যে তুরস্ক বিশ্বের মধ্যে এক নম্বর নিপীড়নমুলক দেশের তালিকায় আছে, যে তুরস্ক ১৯৯৯ সালে তাদের দেশের কুর্দি বিদ্রোহী নেতা আব্দল্লাহ ওকলানকে ফাসি দিয়েছে বাদ বাকি বিশ্বের অনুরোধ সত্তেও, কুর্দী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তুরস্কের যে অবস্থান সে কথা খেয়াল আছে কি ? মাঝে মাঝে তো বিমান হামলা করে অগণিত নারী ও শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করে তুরস্ক।যে তুরুস্কের সীমান্তে প্যাট্রিয়ট মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম স্থাপন করতেছে ন্যাটো কি জন্য ? তার প্রতিবেশীদের আক্রমন করার জন্য নাকি আত্মরক্ষার জন্য ? একটি স্বাধীন ও স্বার্বভৌম দেশ কি করে অন্যদেশের সৈন্য ও অস্ত্রকে নিজ ভূমিতে জায়গা করে দেয় প্রতিরক্ষার জন্য ? এর কোন উত্তর আছে কি ? সেই তুরস্ক কিভাবে বাংলাদেশের মত স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করে ?


শুধু বাংলাদেশ নয় এই তুর্কির এক মন্ত্রী ইরাকের স্বার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে ইরাকের কুর্দিস্থান সফর করেছিল আর এর ফলে পরবতীর্তে ইরাক সরকার তুর্কি মন্ত্রীর বিমানবহরকে নিজ ভূমিতে ল্যান্ড করতে দেয়নি ।

তুরস্ক ইসরায়েলকে স্বাগত জানাইছে ন্যাটোতে অংশীদারী হওয়ার জন্য । এটা তো মা্ত্র এই কয়েকদিন আগের খবর !!! অথচ সেই ইসরায়েলই তার নাগরিকদের ২০১০ সালে হায়েনারমত গুলি করে হত্যা করেছে !!

গাজায় ইসরায়েলে নির্বিচারে গণহত্যা চালালো । তুরস্কের কি ভূমিকা ছিল ? সাহস ছিল গাজাবাসীর জন্য একটা বুলেট পাঠাতে ? আর সিরিয়ায় তো দেধারছে পাঠাচ্ছে অস্ত্র !!!

বলবেন, তুরস্কের মাথা অত গরম নয় !! তা তো ঠিকই..তাহলে ইরানের মাথা গরম ? কারন ইরান হামাসকে ফজর ৫ ক্ষেপনাস্ত্র দিয়ে সহযোগীতা করে ইসরায়েলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে যার ফলে যুদ্ধবিরতি ত্বরান্বিত হয়েছে ।

ফ্লোটিলায় যে তুর্কি নাগরিকদের ইসরায়েল হত্যা করল এর বিনিমেয়ে তুরুস্ক কি করতে পেরেছে ? লোক দেখানো ইসরায়েলের রাস্ট্রদুতকে তেল আবিবে ফেরত পাঠানো ছাড়া আর কি করতে পেরেছে ? তুরস্কের সামনে সেসময় দুইটা পথ খোলা ছিল যা ঐ ধরনের ঘটনায় যেকোন আত্মসম্মানবোধ রাস্ট্রই করত। এক. ইসরায়েলেল বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষনা করা . দুই, ইসরায়েলের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা । আর আমার কাছে দুই নম্বরটাই বেটার হত। কিন্তু তুরস্ক তা করেছে কি ? কারন তার তো মেরুদন্ড নেই করবে কিভাবে ?

কথা এখানেই শেষ নয় । তুরস্কের খায়েশ জেগেছে ওসমানীয় সাম্রাজ্য ফিরে পেতে।তুরস্কের পররাস্ট্রমন্ত্রী দাভতোগলু একাধিকবার বলেছেনও সে কথা । বলেছেন তুরস্ক নিজেকে ওসমানীয় সাম্রজ্যের উত্তরাধিকারী মনে করে। কথাটা বলেছিলেন তিনি মালয়শিয়া সফরে। প্রতিবেশী দেশগুলি হবে তার অনুগত রাস্ট্র আর বাদ বাকী মুসলিম রাস্ট্রগুলি হবে তার সেবাদাস ! আর সেটা তুরস্ক করবে পশ্চিমাদের তোষন করেই । এতে মুসলিম বিশ্বের কি লাভ ?

আসলে বর্তমানে মুসলিম বিশ্ব হয়েছে দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে আছে তুরস্ক ও সৌদির নেতৃত্বাধীন যুক্তরাস্ট্র ও ইসরায়েলের সেবাদাস মুসলিম বিশ্ব আর অন্যদিকে হল নিপীড়িত মুসলিম বিশ্ব যারা পক্ষে আছে সবসময় ন্যায়বিচার, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৩৭
২২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×