somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মিজানুর রহমান মিলন
আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

কাতার-সৌদি দ্বন্দ্ব !

০৮ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৫ জুলাই ১৯৯০ । ইরাকে নিযুক্ত মার্কিন রাস্ট্রদুত এপ্রিল গ্লাসপাই প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সাথে সাক্ষাৎ করে সাদ্দামকে কুয়েত দখলের জন্য গ্রিন সিগন্যাল দিলেন! বললেন, “আমি জানি আপনার টাকার দরকার, কিন্তু কুয়েতের সাথে আপনার বিরোধে আমাদের কোনো মতামত নেই, এবং আমরা কোনো পক্ষও নেব না। এমনকি ( আপনি কুয়েত দখল করলে) প্রেসিডেন্ট সিনিয়র বুশ বল প্রয়োগও করবেন না ।”

এরপরপরই ২ আগষ্ট সাদ্দাম কুয়েত আক্রমন করেন ও আমেরিকা বহুজাতিক বাহিনী গঠন করে কুয়েত মুক্ত করার নামে ইরাকে অভিযান শুরু করে এবং তার পরের ঘটনা সাদ্দাম ও ইরাকের জন্য শুধুই করুণ ইতিহাস !

যতদূর ধারণা করা যায় সৌদি-কাতার বিরোধ ততদূর পর্যন্ত যাবে না তবে ঘটনার মৌলিকতায় অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ট্রাম্পের সৌদি সফর ও তার কিছুদিন পরই সৌদি কাতার বিরোধ তুঙ্গে এবং কাতারকে আরব বিশ্ব থেকে এক ঘরে করার পদক্ষেপ ও ট্রাম্পের টুইট-শেষের শুরু নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

কাতার ও সৌদি দুটোই রাজতান্ত্রিক হলেও কাতার অতি ক্ষুদ্র দেশ হওয়ার পরেও মধ্যপ্রাচ্যের নানান ইস্যুতে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে আছে। আরব দেশগুলির বেশিরভাগই সৌদি মার্কিন প্রভাব বলয়ে থাকলেও আঞ্চলিক রাজনীতিতে কাতার কিছুটা হলেও স্বাধীন পররাস্ট্রনীতির চর্চা করে। যেমন মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড ও ফিলিস্তিনের হামাসকে সমর্থন তেমনি সৌদির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের সাথেও সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলে।আবার অন্যদিকে কাতারে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সর্ববৃহৎ সামরিক ঘাটি ! অন্যদিকে আবার সিরিয়া ইস্যুতে কাতার-সৌদি একই অক্ষ রেখায়।সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কাতার কোনো অংশে কম দায়ী নয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সৌদি আরব সফরের প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল যতটুকু সম্ভব সৌদির কাছ থেকে দুধ দোহন করা।

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বলেছিলাম ট্রাম্প রাজনীতিক নন কিন্তু রাজনীতির মাফিয়া। রাজতন্ত্র রক্ষার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে সৌদি আরব তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানকে শায়েস্তা করে একমাত্র মোড়ল হতে চায়।এজন্য তার প্রয়োজন আমেরিকার সর্বাত্মক সমর্থন । সাম্প্রতিক রিয়াদে আরব, ইসলামিক-আমেরিকান সম্মেলন ইরানকে লক্ষ্যবস্তু করেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। ট্রাম্প ও সৌদি নেতৃত্ব তাদের বক্তব্যের প্রায় পুরোটা জুড়েই ইরানের বিষোদগার করেছে! ট্রাম্পের উদ্দেশ্য সৌদি নেতৃত্বকে খুশি করে যতটুকু সম্ভব দুধ দোহন করা।কিন্তু কাতারের আমির রিয়াদ সম্মেলন থেকে নিজ দেশে ফিরে যেয়ে সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে ইরানকে ইসলামিক শক্তি বলে প্রশংসা ও ইরানের সাথে শত্রুতার জন্য সমালোচনা করায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে সৌদি ! যদিও পরে কাতার ঐ বক্তব্য অস্বীকার করেছে ।

কাতারের সাথে সৌদির দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। এর আগেও আঞ্চলিক নানা ইস্যুতে সৌদি আরব ও তার কতিপয় মিত্র কাতারের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছিল।তবে এবার নতুন করে এই সম্পর্কচ্ছেদের মাধ্যমে সৌদির বার্তা কী ? সৌদি চায় আরব ও ইসলামিক কোনো দেশ যেন ইরানের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করে না চলে, সৌদির প্রভাব বলয়ে আরব ও ইসলামিক দেশগুলোকে থাকতে হবে। ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বে সামরিক জোটে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহন থাকতে হবে। সৌদিকে আরব ও মুসলমানদের মোড়ল হিসাবে বিনা বাক্যে মানতে হবে। অধিকন্তু কাতার মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সম্পদশালী দেশ হওয়ায় আমেরিকা ও সৌদির লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে। কাতারে সৌদি ও আমেরিকার খাস অনুগত সরকার বসলে কাতারের বিশাল ধন সম্পদ করায়ত্ত করা সহজ হবে যদিও কাতার নিজেই আমেরিকার মিত্র তবে আমেরিকা ও সৌদি এতে সন্তুষ্ট নয়, তাঁরা আরও বেশি চায়।বিশেষ করে ট্রাম্পের মত একজন মাফিয়া আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়াতে নিজের অশুভ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করতে সৌদির প্রয়োজন আরো বিশাল অংকের অর্থ! এই অর্থের মোটামুটি একটা পরিমান কাতারের ভাগে বসতে পারে।

যাইহোক রাজতান্ত্রিক কাতার- রাজতান্ত্রিক সৌদি আরব দ্বন্দ্ব নতুন কিছু না হলেও এই দ্বন্দ্ব কতদিন স্থায়ী হয় সেটা দেখার বিষয়। মধ্যপ্রাচ্যে সৌদির ব্যর্থ নীতি বরং কাতারকে আরও সাহস জোগাতে পারে। রাজতান্ত্রিক কাতারকেও বিশ্বাসের বড় কোনো কারণ নেই । তবে এতে সন্দেহ নেই ট্রাম্পের পররাস্ট্র নীতির ফলে কোনো সমস্যার সমাধান নয় বরং মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বের পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উত্তপ্ত হবে আর হোয়াইট হাউজে বসে মুচকি হাসি দিবেন ট্রাম্প আর বলবেন দিলাম একটা লাগায়া্ এখন টাকা দাও !
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×