somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অামিও ছিলাম

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুঁজতে খুঁজতে রাইনা কেন্টিনে গিয়ে পেয়ে গেল রাইয়ানকে। দুই হাত প্রার্থনার ভঙ্গিতে করে মুখটা ধরে টেবিলে কনুই ঠেকিয়ে বসে আছে। সামনে একটা পিরিচের মধ্যে দু’টা সিঙ্গারা রাখা।

‘আমার জন্য সিঙ্গারা নিয়ে বসে আছিস?’

‘হুম, খা।’

‘মন খারাপ নাকি, এমন চুপচাপ বসে আছিস? আচ্ছা অহনা কোথায় রে?’

অহনা কোথায় আমি জানব কীকরে! তোর বান্ধবী তুই ভাল বলতে পারবি। আরমন খারাপ কিনা সেটাও তো বুঝতে পারছি না! হয়ত খারাপ, হয়ত খারাপ না। আসলে সিঙ্গারা সামনে নিয়ে বসতেই পরশুর একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। পরশু হয়েছে কি, প্রথম ক্লাসের পর অহনাকে খুঁজছিলাম। ক্লাসরুম, ল্যাব, ক্যান্টিন কোথাও না পেয়ে বাইরে গেলাম। অহনাকে দেখি মামার চায়ের দোকানে তার গ্যাংসহ চা খাচ্ছে আর বিড়ি ফুঁকছে। গ্যাং মানে রবিন, রাইসা আর আরমান। চার জন একটা ট্যাবের দিকে ঝুঁকে আছে। গভীর মনোযোগ দিয়ে কী যেন দেখছে। ঠোঁটে সিগারেট, হাতে চায়ের কাপ। আমি যে আশেপাশে আছি আমার কোনো বেইলই নাই।’

‘বেইল আবার কী’?

‘কথা শেষ করতে দিবি তো! কথার মধ্যে বাম হাত দিস ক্যান?’

‘আমি আবার হাত দিলাম কোথায়?’

ফাইজলামি করিস না তো! তারপর কী হল শোন, তখন আমি কী করি? এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি আমাদের মাঞ্জা মাসুমা গেট দিয়ে বের হচ্ছে। সে তো অলটাইম মাঞ্জা মারা থাকে। বড় হলে সে মনে হয় বেগম খালেদা জিয়া হবে। তো তাকেই বললাম, চলতো মামা কিছু খেয়ে আসি! অনেক ক্ষিধা পেয়েছে, একা একা খেতে যেতে ভাল লাগছে না। ও বলল চল, আমারও ক্ষিধে পেয়েছে।

তারপর দু’জনে গেলাম ক্যান্ডিফ্লসে-মানে বনানী সুপার মার্কেটের সিঁড়ির সামনের ফাস্ট ফুডের দোকানটায়। জিজ্ঞেস করলাম ভেজিটেবল রোল খাবে কিনা। বলল খাবে। আমি দুইটা ভেজিটেবল রোলের অর্ডার করলাম। ওখানে তো বসার জায়গা নেই। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেতে হয়। ওরা একটি প্লেটে দুইটা রোল কেটে চার টুকরা করে আমার হাতে ধরিয়ে দিল। প্লেটটা ওর সামনে ধরতেই দুই হাতে প্লেটটা আমার হাত থেকে নিয়েআমাকে জিজ্ঞেস করে, তুই কী খাবি?

বাদ দে তো রাইয়ান! মানুষের নামে বাজে কথা বলা ঠিক না! এটা চূড়ান্ত রকমের অভদ্রতা জানিস না! আমি এসব শুনতে পারব না। আর অমন একটা ফুটফুটে মেয়ের নামে এরকম বাজে কথা ছড়াচ্ছিস খামাখা!

ফুটফুটে ঠিক আছে। তবে একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিস? স্বাভাবিক কিংবা মুচকি হাসিতে তাকে যতটা সুন্দও লাগে একটু জোরে হাসলে তাকেততটা সুন্দর লাগে না। হাসিটা যখন একটু প্রশস্ত হয় তখন তাকে আর মোটেও ভাল লাগে না। কেমন বুড়ি বুড়ি লাগে। প্রাণখোলা প্রশস্ত হাসিতে ওকে মোটেও সুন্দর লাগে না। 

মানে কি! তুই মেয়েদের এতোকিছু খেয়াল করিস কেন? আচ্ছা বলতো আমাকে হাসলে কেমন লাগে।

‘তোকে হাসলে পেতœীর মতো লাগে।’

‘হুম, এটা অবশ্য ঠিক বলেছিস’।

‘না, ঠিক বলি নি। ঠিক কথা হল তোর হাসি অনেক সুন্দর। আর সেই হাসি যত প্রশস্ত হয় তোকে ততই সুন্দর লাগে। একদম শিশুদের মতো লাগে।’

আচ্ছা দোস্ত বাদ দে। যে কথা বলতে এসেছি সে কথা বলি। ইন্টামিডিয়েট পাশ করে বনানীর এই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ভর্তি হলাম তখন আমরা নিতান্তই ছেলে মানুষ। এর মধ্যে কতগুলো বছর পার হয়ে গেল। আমরা কিছু ছেলেমেয়ে একসাথে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে মাস্টার্স শেষ করেছি। আর মাত্র কয়টা দিন পরেই এখান থেকে বিদায় নিব আমরা। এখন আমরা অনেক পরিণত। এর মধ্যে তুইও বুঝে গেছিস অহনাকে ছাড়া তোর চলবে না আর অহনাও বুঝে গেছে তোকে ছাড়া তার চলবে না।

অবজেকশন ইয়োর অনার! অহনার তো এখন আর আমাকে দরকার নেই! তার তো এখন সেই বিরাট গ্যাং আছেই! ইদানীং মামার চায়ের দোকানে তার ঐ গ্যাং এর সাথে আড্ডা দিতে দিতে তার সেই সিগারেট খাওয়ার দৃশ্যটা একেবারে অসহ্য। সেই দৃশ্য হজম করার শক্তি আমার নেই দোস্ত।

‘আমাদের ভার্সিটির অনেক মেয়েই তো সিগারেট খায়।’

অনেকে খেলে খেতে পারে। বাট আই হেট সিইং হার স্মোকিং। কেউ সিগারেট খেয়ে আমার সামনে এলে আমার মাথা ধরে। তামাকের গন্ধে আমার ওয়াক আসতে চায়! ওয়াক বুঝিস তো? মানে বমি আসতে চায়।

তাহলে শোন রাইয়ান, তুই যে গ্যাং এর কথা বলছিস তারা আসলে একটা মহৎ কাজের সাথে জড়িত। ভাষা আন্দোলন নিয়ে আমরা কত কথা বলি।কিন্তু তুই কি জানিস ভাষা আন্দোলনের সৈনিকদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনও আমাদের হাতে নেই? তোর কি মনে হয় না একটা তালিকা আসলেই দরকার?

সরকার বলছে সারা দেশে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে অসংখ্য মানুষ সম্পৃক্ত ছিল।তাদের সবার তালিকা তৈরী করা কঠিন। শেষে হাইকোর্টের নির্দেশে একটি তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। বাংলা ভাষা আন্দোলনে জড়িতদের তালিকা তৈরির আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে করা এক রিটের প্রেক্ষিতেই হাইকোর্ট তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল। সরকার সেসময় প্রাথমিকভাবে ৬৮ জনের একটি তালিকা আদালতে দাখিলও করেছিল। কিন্তু সরকারও স্বীকার করছে আদালতে দাখিল করা তালিকাটি পূর্ণাঙ্গ নয় এবং সেটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সরকার মনে হয় নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ দিতে চাইছে না তাই আর এগোচ্ছে না বিষয়টি নিয়ে।

এই তালিকা বের করা  আসলেই বেশ কঠিন কাজ একথা অস্বীকার করা যাবে না। কারণ তখন মিছিলগুলাতে মানুষ একটি আদর্শ নিয়ে আসতো। এখনকার মিছিলগুলোর মত না যে,  পঞ্চাশ এক  শ’ টাকা করে দিলেই মানুষ চলে আসবে। কাজেই মিছিলে অংশগ্রহণকারী সবাইই এক একজন ভাষা সৈনিক। তবে যারা আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন অথবা পরবর্তীতে তাদের কর্মের মাধ্যমে আলোচনায় এসেছিলেন তাদের একটি তালিকা তৈরী করতে উদ্যোগ নিয়েছে একটি সংগঠন। কাজটি যত কঠিনই হোক তারা একটু চেষ্টা করে  দেখতে চায়। প্রতিটি জেলা থেকে তারা তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। অহনারা সেই সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছে।

যাই হোক, অহনার যেমন উচিৎ ছিল তোর কাছে সবকিছু খুলে বলা তেমনি তোরও দরকার ছিল যা যা জানা দরকার অহনাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করে জেনে নেওয়া। তা না, দু’দিন ধরে তুই এমন একটা ভাব ধরে আছিস যেন চিনিসই না ওকে। জানিস তো কেমন অভিমানী মেয়ে ও। অযথা কেন কষ্ট দিচ্ছিস মেয়েটাকে? 

‘কষ্ট পাচ্ছে মানে! তোকে বলেছে নাকি?’

অবশ্যই বলেছে। আমি ছাড়া আর কাকে বলবে। ক’দিন পর পর তোদের এই মান অভিমান তো আমাকেই ভাঙ্গাতে হয়। আমি তো সেই চিন্তাই করি যে, আমি যখন কাছে থাকব না তখন তোদের কী হবে! ছেলেমানুষি অভিমান করিস না রাইয়ান! তুই নিজেও জানিস ও তোকে কতটা ভালবাসে। তুই এখনি চলে যা তার কাছে। ওকে সরি বলার সুযোগ তো দিবি? কতবার চেষ্টা করেছে ও তোর কাছে আসতে। কিন্তু তুই পাত্তাই দিচ্ছিস না। আবেগে কিছু একটা করে বসবে তখন বুঝবি!

অহনা যেমন কষ্ট পাচ্ছে তুইও কম কষ্ট পাচ্ছিস না। মামার চায়ের দোকানেই আছে। একলাই আছে। ঐ গ্যাং সাথে নেই যাদেরকে তুই দুই চোখে দেখতে পারিস না। এমন ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেন? যেতে বলছি যা। সিঙ্গারার বিল আমি দিচ্ছি, তুই যা!

রাইয়ান বের হয়ে যেতেই দ্রুত বেসিনের কাছে চলে গেল রাইনা। চোখের পানি কেউ দেখে ফেললে বিরাট লজ্জার ব্যাপার হবে। প্রথম প্রেম হারানোর কষ্ট তাকে কাঁদালেও তার অতি প্রিয় দুইজন মানুষের সুখই তার কাছে বেশি চাওয়ার। 

‘না, বিদেশ যাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না। তারপরও আমাকে চলে যেতে হচ্ছে জার্মানীতে। ছোট খালার কাছে। খালা সব ব্যবস্থা করাতে আর না করি নি। আপাতত পিএইচডি নিয়েই চিন্তা। তারপর ওখানেই থেকে যাব। কী করব বল রাইয়ান? আমি যে অনেক স্বার্থপর। তোর সামনে এলে তোকে পেতে  খুব ইচ্ছে করে। না পাওয়ার বেদনা হাহাকার তোলে বুকের ভেতরটায়। অথচ তুই এবং অহনা দু’জনই আমার অতি কাছের মানুষ। আমি তোদের সুখি দেখতে চাই। তাই বলতে পারিস নিজের কষ্ট আর না বাড়াতেই পালিয়ে যাচ্ছি। তোদের কাছ থেকে দূরে সরে থাকার জন্য যত অভিনয়ই করতে হোক না কেন আমি করব। তোরা সুখে থাকিস। জানি না মনে পড়বে কিনা, হাসিখেলার এবেলায় আমিও ছিলাম,তোদের কাছের একজনছিলাম, তোদের বন্ধু ছিলাম’-অনেক্ষণ ধরে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিতে দিতে কথাগুলো ভাবছিল রাইনা। (পরিমার্জিত রিপোস্ট)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৭
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×