somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করিম খন্দকার এর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৩:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৯৪ সালের শেষের দিকে মৃত্যু বরণ করেন অবসর প্রাপ্ত পোস্ট মাস্টার করিম খন্দকার।
ওনার বাড়ি ছিল কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানার উত্তর বাড়েরা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামে।অন্য আর সব পোস্ট মাস্টারের মতই কেটেছে তাঁর জীবন।
কিন্তু ১৯৯৪ সালে মারা যাওয়া অবসর প্রাপ্ত পোস্ট মাস্টার করিম খন্দকার তাঁর নিজেস্ব স্বকীয়তায় আজ আমাদের আলোচনার বিষয়।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমি বিদ্রোহী কবি না,না হলে ওনাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখলে আমার পাপ হত না।হযরত ওমর ফারুক(রাঃ) কে নিয়ে কি অসাধারন কবিতাই না লিখে গেছেন শ্রদ্ধেয় কবি....."আমিরুল মমিনিন,তোমার স্মৃতি যে আযানের ধ্বনি....জানে না মুয়াজ্জিন" বা ঐ লাইনাটা কি আপনাদের মনে আছে......"আবু শাহামার গোরে...কাঁদিতে গিয়া..ফিরিয়া আসি গো তোমারে সালাম করে".... কি অসামান্য এক ব্যক্তিত্ব হযরত ওমর(রাঃ).... মদ্য পানের দায়ে নিজের ছেলের শাস্তি একটুও কমাননি...যার দরুণ প্রাণ প্রিয় পুত্র মৃত্যুর কোলে।
কয়েকদিন আগে আমার মামার বাক এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধি ছেলে হারিয়ে গিয়ে ছিল...আল্লাহর অশেষ রহমত শেষ পর্যন্ত নিলয়কে পাওয়া যায়।
যদি বলা হয় পিতা শ্রেষ্ঠ না মাতা..... সবাই এক বাক্যে বলবো মা....।
কিন্তু একটা কথা খুবই বিতর্কের যদিও আমার বলা সাজে না,তবুও আমি করিম খন্দকার এর জন্য এই বিতর্কের অবতারনা না করে পারছি না।
মা স্বাভাবিক ভাবেই সন্তানের জন্য এক পরম পাওয়া আল্লাহর দান।সন্তানের জন্য মায়ের ত্যাগ এক কথায় ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য,সন্তান গর্ভে ধারন থেকে তাকে জন্মদান,লালন এক কথায় সন্তানের জন্য অফেরত যোগ্য এক প্রাপ্তি।মা পশু সব সময় সচেষ্ট তার শিশু পশুটাকে রক্ষার্থে...যত না বাইরের বিপদ তারচেয়ে তার ক্ষুধার্ত বাবা পশুটার থেকে,মা তেলাপিয়া মাছ কত যত্নে তার সন্তানসম ডিমগুলাকে আগলে রাখে নিজে কিছু না খেয়ে মুখে করে তা এক কথায় অসামান্য।
তাই নিজে পুরুষ হিসেবে বলতে বাধ্য হচ্ছি.... মা হওয়া যতটা না সহজ পিতা বা সন্তানের বাবা হওয়া ততটাই কঠিন এক দায়িত্ব।তাই আমার কাছে পিতা বা বাবা শব্দটা বিশেষ গুরুত্ববহ।২৩টা ক্রোমোজম দিলেই বাবা হওয়া যায় না। অন্য আরও অনেক বাবার মত আমি শ্রদ্ধা করি বাবা করিম খন্দকারকে...... যে কিনা তার আদরের পুত্রকে শেষ পর্যন্ত মৃত্যু শয্যায় না আসার জন্য সবাইকে অছিয়ত করে গেছিলেন। ওনার অছিয়ত রাখা হয়েছিল।
ওনার পুত্রের নাম রেন্টু... যে কিনা দীর্ঘ দিন যাবত পরবাসে।সুদূর লিবিয়াতে রেন্টুর বাস।রেন্টু নামটা খুবই অপরিচিত আর সাদাসিধে... তাই হয়তো আমরা চিনতে পারছি না.... রেন্টুর পুরো নাম খন্দকার আবদুর রশিদ।আরও পরিস্কার ভাবে বললে বলতে হয় ১৫ আগস্টের অন্যতম ঘাতক.... জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম পশু।
সশ্রদ্ধ সালাম করিম খন্দকারকে যে কিনা জাতির জনকের হত্যা কারীকে নিজের ছেলে ভাবতে ঘৃনা করতেন...
২৯শে জানুয়ারী দৈনিক প্রথম আলো'র খোলা কলামে সোহরাব হাসান স্মৃতি ও শোকগাথা নামে একটা কলাম লিখেছেন তাতে তিনি আহমেদ খালেদ এর একটা সংবাদের রেফারেন্স টেনেছেন.... যা হুবুহু তুলে দেয়া হল....
আমাদের কোনো কোনো রাজনীতিক বুদ্ধিজীবী ঘাতকদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন, এখনো গাইছেন। কিন্তু ১৫ আগস্টের অন্যতম ঘাতক খন্দকার আবদুর রশিদের বাবা করিম খন্দকার ছেলেকে ক্ষমা করেননি। বহু বছর আগে দৈনিক সংবাদ-এ আহমেদ খালেদ ‘পিতা তাঁকে ক্ষমা করেননি’ শিরোনামে একটি লেখা লিখেছিলেন। সেই লেখার একটি অংশ এখানে তুলে ধরছি—‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আত্মস্বীকৃত ঘাতক কর্নেল আবদুর রশিদকে তাঁর জন্মদাতা করিম খন্দকার বঙ্গবন্ধুর হত্যার দায়ে ক্ষমা করে যাননি। এই চরম সত্য কথাটি দেশবাসীর জেনে রাখা দরকার। বঙ্গবন্ধুর অন্যতম হত্যাকারী রশিদের বাড়ি কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানার উত্তর বাড়েরা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামে। অবসরপ্রাপ্ত পোস্টমাস্টার করিম খন্দকার ব্যক্তিগতভাবে ভালো লোক ছিলেন। ১৯৯৪ সালের শেষদিকে তিনি মারা যান... বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমৃত্যু করিম খন্দকার ছেলে রশিদের সঙ্গে কথা বলেননি, তাঁর কোনো টাকা-পয়সা গ্রহণ করেননি। জাতির পিতাকে হত্যার পর করিম খন্দকার আত্মীয়স্বজনের কাছে অছিয়ত করে গেছেন, তাঁর মৃত্যুর পর যেন রশিদ তাঁর শেষকৃত্যে না থাকে, মৃতদেহ যেন স্পর্শ না করে। তিনি আরও বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো মহান নেতাকে যে হত্যা করেছে, সে আমার পুত্র নয়, আমি তাকে ক্ষমা করব না। আল্লাহ তাকে শাস্তি দিক।’
করিম খন্দকারের জীবনের শেষ দিকে রশিদ লিবিয়া থেকে ছুটে এসেছিল ছয়ঘরিয়ায় বাবার কাছে। করিম খন্দকার তখন হাঁটাচলা করতে পারেন। বাবার বিছানার ডান পাশে দাঁড়িয়ে আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতিতে সে বলল, ‘বাবা, আমি রেন্টু (রশিদের ডাক নাম) এসেছি আপনার কাছে মাফ চাইতে।’ বাবা মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।
শেষ দিন পর্যন্ত করিম খন্দকার ছেলেকে ক্ষমা করতে পারেননি, তাঁর সঙ্গে কথা বলেননি, জানাজায় শরিক হতে নিষেধ করেছেন। আত্মীয়স্বজন বাবার অন্তিম ইচ্ছে পূরণের জন্যই হয়তো রশিদকে জানাজায় অংশ নিতে দেননি। পিতৃস্নেহকে অনায়াসে জয় করেছে করিম খন্দকারের ন্যায় ও মানবধর্ম। আমাদের অনেকের ভীরুতা, কাপুরুষতা, গ্লানি ও লজ্জা ঢেকে দিয়েছেন কুলাঙ্গার ছেলের এক মহান বাবা।

সালাম করিম খন্দকারকে নিজে আর অন্য দশজনের মত না।
একদিকে করিম খন্দকারকে দেখে শ্রদ্ধা জাগে পাশাপাশি সভ্য মানুষের অসভ্য চিন্তায় ঘৃনা আসে।যারা কিনা আশা করে স্বপ্ন দেখে আরো আরো মৃত্যু।
আমার জানা ছিল না,মানুষ কতটা নিচু হলে সেদিনের সেই ঘটানাকে সমর্থন করে .... আফসোস সামু ব্লগেও যদি সেদিনের সেই শিশু হত্যা(রাসেল হত্যা)কে সমর্থন করে...শিশু রাসেলকে সাপের বাচ্চার সাথে তুলনা করে তাঁর মৃত্যু বা হত্যা যথার্থ হয়েছে বলে যে বা সে সব ব্লগার পোস্ট দেয় মন্তব্য করে তাতে ঘৃনা জমে ঠিকই কিন্তু এর ফাঁকে করিম খন্দকারের মত মানুষদের এই সব ঘটনা আমাদের অনূপ্রাণিত করে।

আফসোস সেদিন স্ক্রিন শর্ট নিয়ে রাখিনি কিন্তু পুরানো ব্লগারেরা ঠিকই মনে রেখেছেন আশা করি ---- চয়নকান্তির সেই পোস্ট যাতে ব্লগার অলস ছেলের মন্তব্য---আফসোস পরে আমার একটা মন্তব্যে অবশ্য সে স্বীকার করেছে...

ঘৃনা ছাড়া এদের প্রতি আর কিছু দেয়ার নাই, Machinist সিনেমাটা পারলে দেখবেন...একজন ঘাতকের অনুশোচনা...আশা করি সেই অনুভূতি আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠা ব্লগারদের ছুঁয়ে যাবে না। জাতির জনক হত্যার দন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসি হবার পর যে সব ব্লগার ব্লগ স্যাঁতস্যাঁতে করে ফেলছে.. তাদের জন্য দৃষ্টান্ত করিম খন্দকার।

ঘাতক পুত্রের প্রতি করিম খন্দকার আপনার যে অবস্থান...তাতে আমরা আপনাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৩:৩৬
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×