somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা সঙ্গীত জগতের এক উজ্জল নক্ষত্রের প্রয়ান দিবস আজ

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা সঙ্গীত জগতের এক উজ্জল নক্ষত্রের প্রয়ান দিবস আজ
-মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা


কে বলে তুমি নেই, তুমি আছো, তুমি থাকবে, থাকবে যতদিন নদীর স্রোত ততদিন থাকবে তোমার গানের মুর্ছনা, সুর। তুমি প্রিয় অতি প্রিয়, শ্রদ্ধায় ভালোবাসায় তোমাকে স্মরি। তুমি মোদের প্রিয় সাধক-

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খা বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে এক উজ্জল নক্ষত্র। তিনিই এই উপমহাদেশের সংগীত পৃথিবীর দুয়ারে পরিবেশন ও পরিচিত করার গৌরব আর্জন করেন। ব্রাক্ষনবাড়ীয়া জেলার শিবপুর গ্রামে ১৮৮১ সালে জন্মগ্রহন করেন। সবদর হোসেন খার ( সদু খা ) ৫ পুত্রের মধ্যে তিনি তৃতীয় পুত্র। বড় ভাই ছমিরুদ্দিন খাঁ ও ফকির আফতাব উদ্দিন খাঁ এবং ছোট ভাই নায়েব আলী খাঁ ও আয়েত আলী খাঁ। পিতা আদর করে ডাকতেন আলম।

বাল্যকাল থেকে ই আলাউদ্দিন এর ছিল সংগীতের প্র্রতি অগাত অনুরাগ। বড়ভাই আফতাব উদ্দিন ( তাপস ) এর কাছে তার সংগীতের হাতেখড়ি। আলাউদ্দিন ছিলেন সুর পাগল। একদিন সকলের অগোচরে সুরের সন্ধানে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরেন। পাসের গ্রামে যাত্রা চলছিল ঢুকে পড়লেন সেই দলে। তার কিছুদিন পর পাড়িজমালেন কলকাতার পথে। তখন কলকাতায় সংগীত সাধক নুলো গোপালের খুব নাম ডাক ছিল। তার শিষ্যত্ব গ্রহন করলেন শর্ত ছিল ১২ বছর তাকে শুধু সরগম সাধতে হবে। তারপর রাগের তালিম নিতে পারবেন। আলাউদ্দিন রাজি হয়ে গেলেন, শিক্ষা শুরু হল। কিন্তু ৭ বছর পর গুরুজি মারা গেলেন। আলাউদ্দিন নিদারুন আঘাত পেলেন। কিন্তু ৭ বছরেই আলাউদ্দিন এক চৌকস সংগীত শিল্পি হয়ে উঠলেন। যেকোন গান শুনেই স্বরলিপি তৈরিতে জুড়ি ছিলনা।

আলাউদ্দিন গুরুর মৃত্যুর পর মনের কষ্টে গান ছেড়ে দেন। যন্ত্র সংগীত শিখতে শুরু করেন। গোয়ানিজ ব্যান্ড মাষ্টার লবো সাহেবের নিকট পাশ্চাত্য রীতিতে বেহালা বাজানো শিখেন, অমর দাসের কাছে শিখেন দেশীয় পদ্ধতিতে। প্রক্ষাত মৃদঙ্গ বাদক নন্দবাবুর কাছে পাখোয়াজ, হাবু দত্তের কাছে ক্ল্যারিওনেট, ওস্তাদ হাজারীর কাছে সানাই এভাবে সর্ব বাদ্যের বিশারদ হয়ে উঠলেন। আলাউদ্দিন এমন সময় মুক্তাগাছার রাজা জগত কিশোরের দরবারে সংগীত পরিবেশনের আমন্ত্রন পলেন। রাজ দরবারে তিনি সে যুগের যশস্বী সরোদ বাদক ওস্তাদ আহম্মদ আলীর সক্ষাত লাভ করেন। আহম্মদ আলীর বাজনা শুনে সরোদ শিখার জন্য বেকুল হয় আলাউদ্দিনের মন। মহারাজ তাকে ওস্তাদ আহম্মদ আলীর শিষ্য করে দিলেন। দীর্ঘ ৪ বছর তিনি তার কাছে সরোদ শিক্ষা লাভ করেন।

তারপর আলাউদ্দিন তানসেন বংশীয় বিখ্যাত সংগীত গুরু ওয়াজির খার নিকট তালিম নেয়ার মনো বাসনা করলেন। ওয়াজির খা তখন রামপুর নবাবের সভাবাদক। আলাউদ্দিন রামপুর পৌছে অনেক চেষ্টা করে ও ওয়াজির খার সাক্ষাত পেলেননা। বাড়ির ফটকে প্রহরীরা তাকে বহু চেষ্টার পর ও ঢুকতে দেয় নি। তার পর তিনি আত্বহত্যার সিদ্ধান্ত নেন। ২ ভরি আফিম ও কিনলেন। ইতিমধ্য সৌভাগ্য ক্রমে এক মৌলভী সাহেবর সাথে দেখা হয়ে যায়। মৌলভী নবাব কে সম্বোধন করে একখানা পত্র লিখে দেন। আলাউদ্দিন উপায় না পেয় একদিন নবাবের গাড়ীর সামনে ঝাঁপ দেন। গাড়ী থেমে যায়। চিঠি খানা নবাবের কাছে দেন। পরে তার আগ্রহ দেখে নাবাব তাকে দারবারে ডেকে পাঠান। মহারাজের অনুরোধে তিনি রাজদরবারের সকল যন্ত্র একে একে বাজিয়ে শোনান। তারপর নবাব কে সাক্ষী রেখে নাড়া বেধেঁ দিলেন ওয়াজির খা। ওস্তাদের অনেক সেবা যত্নের পর ওস্তাদ তাকে উজার করে দিলেন জ্ঞান ভান্ডার। ১৯১৮ সালে মাইহারের রাজার অনুরোধে নবাব তাকে মাইহারে পাঠিয়ে দেন। সেখানে রাজ দরবারে সাভা-সংগীতজ্ঞরূপে অধিষ্ঠিত হলেন আলাউদ্দিন। শিক্ষা গুরু হলেন নবাবের। ত্রিশ দশকে উদয় শংকরের দলের সাথে পাড়ি দিলেন বিদেশ। অভাক করলেন বিদেশী শ্রোতাদের তার অঘত পান্ডিত্যে। বৃটিশ সরকার তার সংগীত প্রতিভার স্বীকৃতী স্বরুপ কাকে 'খাঁ সাহেব' উপাদিতে ভুশিত করলেন। ১৯৫২ সালে ভারতের সংগীত নাটক একাডেমীর শ্রেষ্ঠ পুরুস্কার পান। ১৯৫৪ সালে তিনি সংগীত নাটক একাডেমির ফেলো র্নিবাচিত হন। ১৯৫৮ সালে "পদ্মভুষন" ১৯৭১ সালে "পদ্ম-ভিভুষন" খেতাব লাভ করেন। ১৯৬১ সালে বিশ্ব-ভারতী তাকে "দেশী কোত্তম" সন্মানে ভুষিত করেন। ভারতের দিল্লি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে "ডক্টরেট" উপাদি দেন। এমন অনেক সস্মানে আলাউদ্দিন ভুষিত হয়েছিলেন। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ বাদ্যযন্ত্রের আবিস্কর্তা। তিনি চন্দ্র সারং নামে একটি যন্ত্র আবিস্কার করেন। সরোদ নামক বাদ্য যন্ত্রের উন্নতি সাধন করে বর্তমান রূপ দান করেন। তার উদ্ভাবিত রাগ- হেমন্ত, দুর্গেশ্বরী, মেঘ বাহার, প্রভাতকেলী, হেম-বেহাগ, মদন-মঞ্জরী, রাগ আলাউদ্দিন ইত্যাদি তার অনবদ্ধ সৃষ্টি। তিনি অসংখ গুনী শিষ্য তৈরী করে গেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম পুত্র আলী আকবর খা, জামাতা পন্ডিত রাবিশংকর, কন্যা রওশনআরা ওরফে অন্যপূর্না, ভাতুষ্পুত্র রাহাদুর খা, তিমির বরণ, শ্যাম গাঙ্গুলী, নিখিল ব্যানার্জী, শরণ রাণী প্রমুখ্য।

১৯৭২ সালে ৬ সেপ্টেম্বর মাইহার রাজ্যে তার নিজস্ব বাসভবনে তিনি ইহলোক ত্যাক করেন। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খা ছিলেন যুগের শ্রেষ্ঠ সংগীত বিশারদ। তিনি আলাউদ্দিন ঘরানা সংগীতের শ্রষ্ঠা। দি আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গনের সম্পাদক কবি আবদুল মান্নান সরকার জানান বিশ্ব বিখ্যাত সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খা বাংলাদেশে খুবই অবহেলীত। নব্বই দশকের আগে বাংলাদেশের রেডিও টিভিতে তার মৃত্যূ বার্ষিকী পালিত হতো না। আমাদের প্রচেষ্টায় এখন তা হচ্ছে।
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খার স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইতোমধ্যে একটি সড়ক ও একটি মিলনায়তনের নামকরন করা হয়েছে।এখন একটি আন্তর্জাতিক মানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। প্রয়াত মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিলুর রহমান তার মৃত্যুর পূর্বেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসে এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যে এলজিইডি মন্ত্রীকে নির্দেশও দিয়ে গেছেন তার ।



এখনই সময় এই মহা স্বাধক ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ এর জীবনকে নিয়ে গবেষনা করে দেশীয় সঙ্গীত ও সংস্কৃতির যে অবক্ষয় চলছে সে অবক্ষয় থেকে নিজেকে মুক্ত করা এবং দেশীয় সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করা। আমরা তার মৃত্যু বার্ষিকীতে মরহুম সঙ্গীত সাধকের বিদেহী আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×