somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল)
নিজেকে বোঝার আগেই মনের মধ্যে একটা চেতনা তাড়া করে ফিরতো। এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে হবে, একটা বিপ্লব দরকার। কিন্তু কিভাবে?বিপ্লবের হাতিয়ার কি? অনেক ভেবেছি। একদিন মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠলো একটি শব্দ, বিপ্লবের হাতিয়ার 'কলম'।

প্রসঙ্গ আমাদের বিশ্বকাপ ফুটবল উন্মাদনা

২১ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি যে দেশটাতে বসবাস করি সেই দেশের ফুটবল টিম এবারের ফুটবল বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট টিম, যাদের এবারও বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ তারা গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন । অথচ, প্যারিসের কোন এপার্টমেন্টের বারান্দায়, বিল্ডিঙয়ের ছাদে, রাস্তার ধারে কোথাও ফ্রান্সের জাতীয় পতাকা বা ফ্রান্সের ফুটবল টিমের কোন পতাকা এখন পর্যন্ত আমার চোখে পড়েনি। এছাড়া বিশ্বকাপ ফুটবল উন্মাদনার বিশেষ কোন চিহ্ন কোথাও খুঁজে পাওয়া দায়। তার মানে ফরাসিরা ফুটবল ভালোবাসে না, অথবা তাদের ফুটবল নিয়ে কোন উচ্ছ্বাস নেই! তা কিন্তু নয়, ফ্রান্সের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ফুটবল এবং ইউরোপের অন্যতম জনপ্রিয় ক্লাব পারি ছা জেরমা Paris saint germain প্যারিসে অবস্থিত। এই খেলাকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সের মিলিয়ন মিলিয়ন ইউরোর ব্যবসা জড়িত। প্রশ্ন জাগতে পারে,তাহলে ফরাসিরা কিভাবে এই উৎসব উন্মাদনা উদযাপন করে ?

যেদিন ফ্রান্সের খেলা থাকে সেদিন শহরের বারগুলোতে ফুটবল প্রেমীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কারো অবসর সময় থাকলে বাসার টিভি পর্দায় খেলার আনন্দ উপভোগ করে। কিন্তু, খেলাকে কেন্দ্র করে অতিরঞ্জিত কোন কার্যকলাপ কখনো লক্ষ্য করা যায় না। কারণ, ফরাসিদের নানা আনন্দ উৎসবের মাধ্যমগুলোর মধ্যে ফুটবল একটি মাধ্যম মাত্র।এছাড়া, এখানকার প্রত্যেকের জীবন যাপনে প্রথমে গুরুত্ব পায় নিজের জীবিকা অর্জনের কর্ম,এরপর অন্যকিছু। যার কারণে কোন কিছুতেই ফরাসিদের মধ্যে আদিখ্যেতা পরিলক্ষিত হয়না।
গতবার যখন বিশ্বকাপ জিতল তখন একদিন প্যারিসের বিখ্যাত এভেনিউ শঁজেলিজেতে একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফরাসীরা একত্রিত হয়ে উল্লাস করেছে।এরপর ফুটবল উন্মাদনা ঝেড়ে ফেলে যার যার কর্মে মনোনিবেশ করেছে।এই বিষয়কে কেন্দ্র করে সপ্তাহ ব্যাপী অতিরঞ্জিত উৎসব আনন্দ করে সময় নষ্ট করেনি।

ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে বাংলাদেশ ফুটবল দল কখনো অংশগ্রহণ করেনি এবং আমাদের জীবদ্দশায় করবে কিনা তা সন্দিহান। অথচ, প্রতিটি বিশ্বকাপ আসলে বাংলাদেশে ভিনদেশে ফুটবল দলকে সমর্থন করে যা হয়, তা আমাদের জাতিগত মানসিকতা নিয়ে ভাবনায় ফেলে দেয়।আমরা ভিনদেশি দলগুলোকে নিয়ে যে কার্যকলাপগুলো করি তার কিঞ্চিত পরিমাণ ঐ সব দেশের মানুষ তাদের দলকে নিয়ে করে কিনা আমি সন্দিহান। ফেচবুকে চোখ রাখলে ভেসে আসে এই ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে সব অদ্ভুত সংবাদ।কেউ জমি ও স্ত্রীর গহনা বিক্রি প্রিয় দলের জন্য তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পতাকা টাঙ্গিয়ে তাক লাগিয়েছে, কোন আর্জেন্টিনা সমর্থক চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পতাকা টাঙ্গানোয় ব্রাজিল সমর্থক ঋণ করে পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পতাকা টাঙ্গিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।কেউ একজন ব্যক্তিগত অর্থ খরচ করে কাতারের ফুটবল স্টেডিয়ামগুলোর আদলে ডামি স্টেডিয়াম বানিয়ে ফেলেছে, কেউ প্রিয় দলের জন্য মোল্লা পুরোহিত দিয়ে প্রার্থনার আয়োজন করছে, কেউবা বাড়ীর বিল্ডিং ভিনদেশি পতাকার আদলে রং করে ফেলেছে।খেলা থেকে আনন্দ নেবার কথা,কিন্তু প্রশ্ন সবার কাছে, এসব অনুৎপাদনশীল কার্যকলাপের মধ্যে মানসিক আনন্দ ছাড়া আমাদের ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের বাড়তি কি অর্জন নিহিত রয়েছে? এসব খবর আবার জাতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করছে,সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রচার বাড়ানোর লক্ষ্যে। যেখানে সংবাদপত্রের দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে এসব অনুৎপাদনশীল কার্যকলাপকে প্রচার না করে নিরুৎসাহিত করার কথা।রক্ত দিয়ে পাওয়া নিজের স্বাধীন দেশে যে উপলক্ষেই হোক না কেন ভিনদেশী পতাকা উড়ানো যে সম্মানের বিষয় নয়, এই সামান্য সম্মান বোধটুকুই স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের আমরা নিজেদের মধ্যে তৈরি করতে পারিনি। জাতিগত ভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ যে অবরুদ্ধ তা এ থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায়।জাতীয় পতাকা হচ্ছে একটি দেশ ও জাতির পরিচয় ও সম্মানের প্রতীক।নিজের স্বাধীন সার্বভৌম দেশে ফুটবল ভালোবাসার নামে ভিনদেশি পতাকার মহোৎসব করা মানে নিজের পতাকাকে অপমান করা,নিজের সত্ত্বাকে অপমান করা।তা আমাদের উপলব্ধি করা অতীব জরুরি।

যেসব দেশের দল এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করছে সেইসব দল ও দেশের মানুষ সম্মান পাবে, আর্থিক পুরষ্কার পাবে, তাদের বাড়াবাড়ি আনন্দ উল্লাস মেনে নেয়া যায় , কিন্তু ভিনদেশী দল নিয়ে আমাদের যে বাড়াবাড়ি তা কান্ডজ্ঞানহীনতা ছাড়া অন্য কিছু ভাবা না যায়না। এগুলো করে খেলা চলাকালে মানুষের মূল্যহীন সস্তা বাহবা পাওয়া যাবে, কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার পর ঋণ করে পতাকা বানানোর টাকাতো নিজেকেই পরিশোধ করতে হবে। এমন ভালোবাসার প্রতিদান স্বরূপ আপনার ঋণের দায়ভারতো ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনা সরকার নেবে না।

কোন কিছুর প্রতি অবশ্যই ভালোবাসা থাকবে,উন্মাদনা থাকবে এবং থাকাটা অবশ্য ভালো, তবে তা হওয়া উচিত সীমার মধ্যে, শৃঙ্খলার মধ্যে, আত্মমর্যাদা বোধের মধ্যে।লাগামহীন অবশ্যই নয়।আমাদের মূল্যবান মেধা, শ্রম ও অর্থ যদি অনুৎপাদনশীল কাজে ব্যবহারের চর্চা বন্ধ করে উৎপাদনশীল কর্মে ব্যবহারের অনুশীলন শুরু করি তবেই আমাদের জাতিগত অগ্রগতি তরান্বিত হবে এবং তার মধ্যেই আমাদের সামগ্রীক কল্যাণ নিহিত।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৪৭
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×