somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল এর স্বপ্ন

০৫ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঝালমুড়ি আমার খুব প্রিয়। তবে শাকসবজি ছাড়া অন্য কোন খাবার যে আমার প্রিয় না, তা আমার বন্ধুরাই বলতে পারবে। যাইহোক, গুলিস্থান হতে বাসায় ফিরবো, বাসে করে। ব্যাগ এ পানি আছে, তাই সামনে থাকা ঝালমুড়ি খাবার লোভ সামলাতে পারলাম না। নিলাম ১০ টাকার, লবন বেশী দিয়ে। খেতে খেতে দেখালাম প্যাকেটের গায়ে লিখা- এই কুরবানীর ঈদে উৎকৃষ্ট মানের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল কিনতে চলে আসুন......। কোথায় আসবো আর খুজে পেলাম না। আহারে, ছাগলটা বেশ সুন্দর ছিল। ঝালমুড়ি খাওয়ার পর পানি খেয়ে বরাবরের মতই সিটে হেলান দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতেই, বেজে উঠলো মুঠোফোন। ওপার হতে, “মামা, চলে গেছোস?”
-“এখনো বাসে। ক্যানরে মামা?”
-“আর কইস না। এইবারও চাকরিটা হইলো না।“
-“ক্যানরে? তুইতো পরীক্ষা ভালোই দিছিলি। টাকাওতো দিছিলি। তবে?”
-“তুই বুঝবি না। মালের উপরও মাল আছে। পরে ঢাকা আসলে বলমুনে”।
ওকে বলে দিলাম চোখ বন্ধ করে।
বাস চলতে চলতে কখন ঘুমিয়ে পরলাম, খেয়াল নেই। বাসের ঝাঁকুনিতে, ঘুমটা আধো আধো হয়ে রইলো। কি যেন কি মনে করতে করতে দেখছি আমি এক ছাগলের হাঁটে। সুন্দর সুন্দর, কিন্তু কালো কালো অনেকগুলো ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল। প্রত্যেক মালিক এক একটা করে দুধ দেয়া ছাগল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, বিক্রি করতে নয়, বর্গা দিতে, মানে কিছু দিনের জন্য পালতে। দেখলাম ছাগলের চেয়ে মানুষের সংখ্যা অনেক অনেক বেশী। সবাই চায়, কিছুদিনের জন্য হলেও একটি মাত্র ছাগল পেতে। কিন্তু মালিক কি এতোই বোকা যে যাকে তাকে নিজের ছাগল দেবে? তাই তারা ঠিক করলো যার যোগ্যতা বেশী থাকবে, মানে যার কাছে ছাগল দিলে তার ছাগলটা কিছু দিন খুব ভাল থাকবে, তাকেই দেয়া হবে ছাগলের বর্গা। মানুষ অনেক বেশী, তাই যাচাই বাছাই করা জায়েজ।
আমি কেনো জানি এই যাচাই বাছাই দেখতে আগ্রহী হলাম, অর্ধ ঘুমেই! সবচেয়ে সুন্দর কালো ছাগলের দিকে মনোনিবেশ করলাম। ছাগলের মালিক যথারীতি সবার যোগ্যতা জানতে চাইলো। অর্ধ ঘুমেও আমি কিছুই স্পষ্ট না বুঝলেও, স্বপ্ন দেখা চালিয়ে যেতে চাইলাম। আর দেখতে থাকলাম-
মালিকঃ ছাগলডা আমার বড্ড প্রিয়। খুব ভাল দুধ দেয়। আমার এই এহন এতো গুলা ছাগল লালন পালন করবার পারুম না। জায়গা বেশী নাই। তাই ভাল লালন পালন করবার পারে এমন মানুষের কাছে এডা দিবার চাই কিছু দিনের জন্যে।
আমি ভাবলাম বাকি গুলো লালন পালন করতে পারলে, এই দুধ দেয়াটাকে অন্যের কাছে দিবেন কেন? এই প্রশ্ন না করে ভাবলাম কি দরকার, চালিয়ে যাই স্বপ্ন দেখা। দেখি কে কি বলে, করে।
প্রথম ব্যক্তিঃ আমি ছাগল পালনে প্রশিক্ষিত। এই পরীক্ষায় শতকরা ৯৩ ভাগ নম্বর পেয়েছি। আমি জামানত দিবো। আপনার ছাগলের কিছু হলে, ওটা হতে কেটে রাখবেন।
মালিকঃ খুব ভালো, খুব ভালো। আপনে বাম পাশে আইসা দাঁড়ান। দেহি আর কার কি যইজ্ঞতা।
দ্বিতীয় ব্যক্তিঃ আমি ৬২ ভাগ নম্বর পাইছি। গ্রামের মোড়ল এর সই আছে। দেখেন। দেখেন।
মালিকঃ কন কি? আপনে বাম পাশে বহেনতো।
তৃতীয় ব্যক্তিঃ মালিক সাব, আমি ৩৯ ভাগ, তয় মোড়ল আমার চাচার মামা লাগে।
মালিকঃ ভাই, আপনে এতক্ষণ কোতায় আছিলেন। আপনে বহেন না বাম পাঁশে। এই কেডা আছিস, ভাইরে ঠাণ্ডা জল দে।
চতুর্থ ব্যক্তিঃ আরে মিয়া, নাম্বার টাম্বার দিয়া কি করবেন? হুনেন নাই এক্স ফেকটুর। আর এইডা ছাগলইতো। ঘাস খাইবো আর মোডা অইবো। এইডার লিগা আর কিছু জানা লাগে নি? আমি মোড়লের পোলা, ক্যামনে কি করতে হয়, সব কামের সব কিছুই জানি। কারুরতে হিগন লাগবোনা।
মালিকঃ আপনি মোড়লের পোলা? আগে কইবেন না? এতক্ষণ কই আছিলেন? আরে আপনেরা গেরামের মোড়ল। কোন কাম ক্যামনে হইবো, তা আপনাগো চাইয়া আর কেডায় ভালো জানবো। একটু বহেন ডান পাঁশের চেয়ারে। ওই পানির গেলাস রাইখ্যা ভাইরে বাতাস কর। আর ছাগল? নিয়া যান। দুধ খান। কয়েক মাস বাদে ফেরত দিলেই চলবো। তয়, চাচারে কয়েন আমার দিকে একটু নজর দিতে।
মোড়লের ছেলেঃ এইডা আবার কউন লাগবো নি? ছাগল দিছেন। কাইল বাড়িত আইয়েন। মাংস দিয়া দুপুরে ভাত খাওয়ামুনে আর বাপের লগে কতাও কয়ায় দিমু নে। আমরা কেমন বুইঝা যাইবেন।
মালিকঃ এতো আমার সইভাগ্য।
ঈশ! বেটা হেল্পার। চীৎকার করে আমার বাস হতে নামার জায়গার নাম বলল। স্বপ্ন নাকি কল্পনা, যেটাই হোক পুরোপুরি হয়ত দেখতে পারলাম না। বাস হতে নেমে, হাঁটতে হাঁটতে কেনো যেন ভাবতে লাগলাম, যে ছাগলের মালিক কে কি ছাগলের মাংস খাওয়াবে?
বাসার দরওয়াজায় শব্দ করতে করতে, আবার আমার সেই চাকরী প্রার্থী বন্ধু ফোন দিল। ফোনটা ধরতে ধরতেই আমি মনে মনে বললাম যে, আমি মনে হয় আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গিয়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:২৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×