somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রোফেসরের বিয়ে এবং কিছু কথা!

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল একটি বিয়েতে গিয়েছিলাম। আসা যাওয়া মিলে মোট প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম বিয়েতে। বিবাহ ছিল আমার মাস্টার্সের মেন্টর Assoc. Prof. Dr. Alaaddin F. Paksoy এর। কনে নিজেও একজন University শিক্ষক।


বিয়েতে যাওয়া আসলে কৃতজ্ঞতা থেকেই। কারন অনেক বিপত্তির পথে তার বাড়িয়ে দেয়া হাতের কারনেই আসলে কোন অতিরিক্ত সময় ছাড়াই যথা সময়ে আমার থিসিস শেষ হয়েছিল। জীবনে শিখেছি অনেক কিছু।

আসলে একজন মেন্টর তার ছাত্রকে জ্ঞানের থেকেও যা বেশী দিতে পারে তা হচ্ছে মোটিভেশন। তবে আমার প্রোফেসর আমাকে কখনও ৩০ সেকেন্ডের বেশী মোটিভেশন দেয় নাই। শুনতে খুব অবাক হলেও এটাই সত্য। আসলে উনি আমাকে কিছু বলার চেয়ে তার আচরন দিয়ে এটা বুঝাতে পরেছিলেন যে সে আমার সাথে আছে।

একটা ছোট উদাহরন দেই; যেহেতু আমার কাজটা ছিল বাংলাদেশ এবং তার্কিকে নিয়ে, তাই গভেষনার কাজে প্রায় ৭ মাস বাংলাদেশে ছিলাম। সেখানে অনেক মানুষের সাথে শহর শহর ঘুরে সাক্ষাতকার নিতে হয়েছিল। আর আমি আসলে যাদের সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম তারা আসলে সামাজিক ভাবে এলিট শ্রেনী আর কর্ম বিবেচনায় অনেক ব্যস্ত মানুষ। সেই সাথে আমার পরিচিতির অভাবে প্রথম ৩ মাস আমি আসলে লিংক তৈরির কাজে ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু ৩ মাসেও যখন কোন কিনারা করতে পারছিলাম না- একদিন সন্ধায় তাকে নক দিয়ে বললাম আপনার সাথে আমার জরুরী কথা আছে। তাকে সব বর্ননা করলাম। এটাও বললাম যে, আমি অনেক হতাশ। আমি বোধায় এখানের সাক্ষাতকারগুলো নিতে পারব না।

উনি আমাকে শুধু এটাই বললেন; "মশিউর, এটাই দুনিয়ার শেষ না। তুমি চেষ্টা করছ আরো একটু কর। যদি একান্তই না পার আমরা আমাদের প্রোপজাল কে নতুন ভাবে সাজাব। যা আমাদের চেষ্টার পরেও হবে না সেগুলো আমাদের হাতে না"। আমি আবার নেমে পরলাম। এবং সত্যি আমি সফল হয়েছিলাম।

এরপর তার্কিতে ফিরে এসে বাকি সাক্ষাৎকারগুলো নিতে এবং সেগুলো ডিকোড করতে করতে পারায় জুন মাস চলে এলো। আমাকে জুলাই মাসে ডিফেন্স করতে হবে সময় মত শেষ করতে হলে। উনি তখন আমাকে শুধু বলেছিলেন; "এই একমাসে এনালাইসিস সহ থিসিস লেখা অন্য কোন ছাত্রের জন্য সম্ভব না। তবে তুমি যদি এখনও অনার্সের মশিউর হয়ে থাক তুমি পারবে"। বলে রাখি যেহেতু আমি অনার্সও এখানেই করেছি তাই আগে থেকে চিনতেন। তবে অনার্সের ৪ বছরে আমি তার থেকে ১ টা কোর্স নিয়েছিলাম। তবে ফাস্ট হওয়ার কারনে চেনার বিষয়টা আরো পরিপক্ক হয়েছিল। আমি পেরেছিলাম। ২৩২ পৃষ্ঠার থিসিস আমি ১ মাসেই লিখে শেষ করেছিলাম।
যাইহোক টিচারের, আমার উপর ভরসা দেখে আমি আসল অনেক দায়ভার ফিল করছিলাম। তাকে সেদিন বলেছিলাম, "প্রোফেসর, আমি শেষ করবই"।

আমি শুরু করলাম আমার কাজ। দৈনিক প্রায় ১৬-১৭ ঘন্টা একটানা কাজ করেছি। আর উনি প্রতি ৪ দিনে আমার সাথে ১ বার অনলাইনে জয়েন হতেন। কাজ দেখতেন এবং নির্দেশনা দিতেন।
সব ঠিক মতই চলছিল। তবে এর মধ্যেই আবার আমাদের সন্তান নির্ধারিত সময়ের ঠিক ১ মাস আগে সিজারে জন্মদান করাতে হল। যার অর্থ হচ্ছে পরের কাজ আগে চলে এলো। এই সময়ে আমি হাসপাতালের বারান্দায় বসেও থিসিস লিখেছি। কারন আমার স্ত্রী হয়তো এতে আমি তাদের থেকে থিসিসকে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছি এটা মনে করতে পারে কিন্তু আমি সাময়িকের পেছনে আমার স্থায়ীত্ব নষ্ট করতে চাই নাই। কারন আমি জানতাম এখন আমি এটা না করলে আমাকে ১ বছর প্রায় লস হবে। তাই আনন্দ পরেই করি। যা আমি এখন করি।
যাইহোক, শিক্ষকের মোটিভেশানে আমি সময়মতই শেষ করলাম। আমি লিখে লিখে তাকে নিত্য পাঠাতাম আর সে পড়ার সাথে সাথে ভাষাগত ত্রুটিও ঠিক করে দিতেন। একদিন বলছিলেন, " রাত ২ টায় আমি তোমার থিসিস পড়ছি দেখে আমার মা সব বাসার সবাই বেশ অবাকই হচ্ছিল। সেই সাথে বিবাহের আয়োজন কেন্দ্রিক আমার ব্যস্ততা তো আছেই"।

আমি তার প্রমানও পেলাম। কাল বিয়েতে তার মায়ের কাছে যেতেই আমাকে বলল, "তুমি বাংলাদেশী সেই ছেলেটা না? কিছুদিন আগে পাশ করেছ?" আমি হা বলার আগেই বলল, " আমি তোমাকে চিনি, আলাদ্দিন আমাদের তোমার ছবি দেখিয়েছে। তোমাকে জুব্বা পরিয়ে দিচ্ছিল"। তার ভাই যে নিজেও কিনা একজন প্রফেসর। সেও এসে বললেন, তোমার ছবি আমি আগে দেখেছি। আলাদ্দিন দেখিয়েছিল। বেশী অবাক হলাম যখন তার নতুন শশুর আমাকে এসে মশিউর বলে ডাক দিলেন- আর বললেন সেও আমাকে চিনে। আমার প্রোফেসার আমার গল্প করেছে।

বিষয়টা আসলে এমন না যে আমি তার প্রথম ছাত্র যার সে মেন্টর ছিল। এর আগে অসংখ্য PhD, মাস্টার্স ছাত্রদের থিসিসে সে মেন্টর ছিলেন এবং সফল হয়েছিলেন। হয়তো তাদের নিয়েও তার এই আবেগ ছিল।
এতবড় গল্প বলার পেছনে আসলে কারন এটাই যে, একজন প্রোফেসার কিভাবে তার ছাত্রদের মূল্যায়ন করেন, কিভাবে সহযোগিতা করেন এবং কিভাবে পাশে দাড়ান- এটা বুঝানোর জন্য। আমি কৃতজ্ঞ।।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:৫৭
১১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×