somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেয়েদের স্তন

১১ ই আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি ডাক্তার নই তবে কিছু পরামর্শের জন্য সহায়তা করতে তো বাধা নেই।

উন্নত বিশ্বে মধ্য বয়স্ক মহিলাদের মৃত্যুর প্রধান কারন হলো স্তন ক্যান্সার। অনুন্নত বিশ্বেও এই হার আশংকাজনক। যুক্তরাজ্যে প্রতি ১২ জন মহিলার ১ জন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। ২০ বছর বয়সের নীচের মহিলাদের এই ক্যান্সার হয়না বললেই চলে। পুরুষদেরও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা খুবই কম (০.৫%)।

উন্নত বিশ্বের আধুনিক খাদ্যাভ্যাস নাগরিকদের অনেক সমস্যায় ফেলে, স্তন ক্যান্সার সেই খাদ্যাভ্যাসের কারনেই পশ্চিমা বিশ্বে বেশী দেখা যায় বলে ধরা হয়।বলে রাখা ভালো জাপান উন্নত বিশ্বের তালিকায় পরলেও সেখানে স্তন ক্যান্সার কিন্ত ইউরোপ আমেরিকার মতো অতো বেশী নয়। তবে যেকোনো দেশেই অতিরিক্ত মদ্যপায়ীদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার হার যে অনেক বেশী এটা এখন একটা পরীক্ষিত সত্য। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে সকল মা তাদের সন্তান কে নিয়মিত স্তন্য পান করিয়েছেন তাদের স্তন ক্যান্সার হবার হার তুলনামুলক হারে অনেক কম, তেমনি যে সকল মা কম বয়সে বাচ্চা নিয়েছেন এবং যেসকল মহিলার মাসিক একটু দেরিতে শুরু হয়েছে (Late menarche) এবং আগে বন্ধ হয়ে গেছে (Early menopause) তাদের মধ্যেও এই হার বেশ কম। অন্য দিকে যে সকল মহিলা একটিও সন্তান নেননি অথবা যারা menস্তন পরীক্ষাopause এর পরে স্থুলকায় (Obese) হয়ে গেছেন তাদের এই ক্যান্সার হবার হার তুলনামুলক হারে বেশী।

সমীক্ষা যাই বলুক না কেন ৩০ বছরের পরে যে কোনো মহিলারই নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করে দেখা উচিত তার স্তনে গোটার মতো কিছু পাওয়া যায় কিনা। এই জন্য আয়না (Mirror) এর সামনে দুই বুক খুলে দাঁড়িয়ে নিজে নিজেই তা ভালো করে চেপে পরীক্ষা করে দেখা উচিত এবং সন্দেহ জনক কিছু পাওয়া গেলে সাথে সাথে Breast surgeon এর সাথে যোগাযোগ করা উচিত। এই পরিস্থিতিতে আল্ট্রাসনোগ্রাম বা ম্যামোগ্রাম পরীক্ষা করিয়ে স্তন এ টিউমার আছে কিনা তা নিশ্চিত করা উচিত। টিউমার থাকলে তা ক্যান্সার না নিরীহ শ্রেনীর তা ১০০% নিশ্চিত করতে অবশ্যই বায়োপসি করে হিস্টপ্যাথলজি করতে হবে।

শুরুতে স্তন ক্যান্সার একটা ছোট্ট দানার মতো হাতে লাগতে পারে তবে অনেক সময় তা হাতে নাও লাগতে পারে। অনেক সময় এই রোগে স্তনের বোটা বা নিপ্যল (Nipple) কিছুটা ভিতরের দিকে ঢুকে যায় (Nipple retraction), কারো কারো আবার টিউমারের ঠিক উপড়ের স্তনের ত্বক কমলার খোসার মতো ছিদ্র ছিদ্র আকার ধারন করে (Peau d’orange)। এসব চিহ্ন স্তন ক্যান্সার যে বেশ অগ্রবর্তী পর্যায়ে চলে গেছে তা নির্দেশ করে। তবে এই ক্যান্সার অগ্রবর্তী হলে গোটার মতো টিউমারটি বুকের মাংসপেশীর সাথে লেগে যায় এবং বুকে ব্যথা করতে থাকে সেই সাথে বগলের লসিকা গ্রন্থিগুলো (Lymph node) ফুলে বড় হয়ে উঠতে থাকে। রোগের এক পর্যায়ে রোগীর স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়, তিনি দ্রুত ওজন হারাতে থাকেন, সেই সাথে ক্ষুদামন্দা, বমি বমি ভাব, ফুসফুসে পানি জমে শ্বাস কষ্ট, লিভার আক্রান্ত হয়ে পেটে পানি জমা এই সমস্যা গুলোও একে একে যোগ হতে থাকে।

জেনে রাখা ভালো যেদিন প্রথম স্তন ক্যান্সার ধরা পরলো সেদিন সম্ভবত তা সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পরেছে। স্তন ক্যান্সার খুব দ্রুত হারে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পরতে পারে, তাই রোগের সন্দেহ হবার পরপরই এর চিকিৎসা শুরু করা উচিত। এমন কোনো অসুধ এখনো আবিস্কৃত হয়নি যা স্তন ক্যান্সার কে পুরোপুরি ভালো করে দিতে পারে, তবে বিভিন্ন মডালিটির চিকিৎসা একই সাথে চালিয়ে গেলে এই রোগ নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্যান্সার ধরা পরার পরপরই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন রোগীকে একই সাথে কিংবা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কেমোথেরাপি / রেডিওথেরাপি (নিওএডজুভেন্ট থেরাপি) শুরু করে প্রথমেই রোগটিকে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেন। এরপর অবস্থা বুঝে অপারেশন করে টিউমার আক্রান্ত পুরো স্তন (Mastectomy) এবং সেইসাথে বগলের লিম্ফ গ্রন্থি ফেলে দেয়া হয়। এর পরে রোগীকে নির্দিষ্ট মাত্রার রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপি দিয়ে রোগীর দেহ থেকে ক্যান্সার আক্রান্ত সকল কোষ মেরে ফেলার পদক্ষেপ নেয়া হয়। তবে চিকিৎসার এই পদক্ষেপ গুলো নির্ভর করে রোগী ক্যান্সার এর কোন পর্যায়ে চিকিৎসক এর কাছে এসেছে তার উপর। বেশী দেরি করে আসলে এর কার্যকরী চিকিৎসার সুযোগ একদমই কমে আসে।

স্তন ক্যান্সার এর কেমোথেরাপি তে টেমোক্সিফেন, সাইক্লোফসফামাইড, টেক্সেডিওল, ক্যাপাসিটাবিওন, এনস্ট্রাজল ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের হরমোন বা বিষ জাতীয় অসুধ বিভিন্ন মাত্রায় ব্যবহার করা হয়। এসব নির্ভর করে রোগীর কোন ধরনের ক্যান্সার হয়েছে এবং সেই ক্যান্সার কোষের স্পর্শকাতরতার উপর। এসব অসুধ বেশ ব্যয়বহুল এবং এদের কার্যকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ভিন্ন ভিন্ন বটে, তাই সব রোগীকে একই ধরনের অসুধ দেয়া সম্ভব হয়না। তাই রোগীর উচিত চিকিৎসার শুরুতেই এসব ব্যাপারে খোলামনে তার চিকিৎসক এর সাথে আলাপ করে নেয়া।

পরিবারে মা, খালা, ফুপু, বড় বোন এমন কারো স্তন ক্যান্সার থেকে থাকলে অন্য সদস্যদের ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে, তাই এসব ক্ষেত্রে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এসব পরিবারের সদস্যাদের অল্প বয়স থেকেই নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করানো উচিত এবং দীর্ঘায়ু হবার লক্ষে স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ার সাথে সাথেই স্তনের অপারেশন সহ অন্য চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো দ্রুত গ্রহন করা উচিত।

স্তন ক্যান্সার হবার পরে অপারেশন করানো এবং কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি নেবার পরও রোগী পুরোপুরি মৃত্যুর ঝুকি থেকে মুক্ত হয়ে যায়না যদিও সব ধরনের উপসর্গ থেকে তিনি মুক্ত থাকতে পারেন। সমীক্ষায় দেখা গেছে সাধারনত রোগের যে সকল অবস্থায় বা স্টেজ (stage II/III) এ রোগীরা চিকিৎসক এর কাছে আসেন তার পুর্নাঙ্গ চিকিৎসা করা হলেও রোগীর ৫ বছর বেচে থাকার সম্ভাবনা থাকে শতকরা ৫০ থেকে ৭০ ভাগ। খুব প্রাথমিক অবস্থায় বা স্টেজ (stage I) এ আসলে এটা বেড়ে ৮৫% পর্যন্ত হতে পারে তেমনি খুব শেষ পর্যায় (stage IV) এ আসলে ৫ বছর বাচার সম্ভাবনা কমে গিয়ে থাকে মাত্র ২৫%।

তাই পরিশেষে এই বলতে হয় স্তন ক্যান্সার বেশ খারাপ ধরনের একটি রোগ, এ রোগ হওয়া অর্থ মৃত্যু ঘনিয়ে আসা, তবে কেউ যদি খুব প্রাথমিক পর্যায়ে এই রাগের চিকিৎসা নিতে পারেন তার দীর্ঘায়ু হবার সম্ভাবনা খুব প্রবল। তাই প্রত্যেক পরিণত মহিলার উচিত নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করে দেখা এবং কোনো প্রকার সন্দেহ হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×