-"হ্যালো, কই তুমি?" -"কেনো? বাসাতেই।" -"ও। আজকে বুঝি কাজ নাই?" -"আরেহ ছিল। কাজ শেষ তাই বাসায় জলদি জলদি চলে আসলাম।" -"কেনো? ঘুরতে যাও নাই ইফতির সাথে?" "কেনো? আপনার জ্বলতেছে নাকি?" -" নাহ। আমার কেনো জ্বলবে? মানুষজনবিয়ে করবে আর আমি ভাই পোলাও মাংস খাবো। আমার আর কিছুর দরকার নাই।" -"আপনাকে বিয়ে করতে কি কেউ মানা করছে। আচ্ছা দাড়ান দাড়ান। মানুষজন মানে? আরও কেউ বিয়ে করছে নাকি? কে করছে? বলে ফেলেন। আপনি জানেন আপনি আমার থেকে কথা লুকাতে পারেন না।" -" এই তো ১২.১২.১২ উপলক্ষে বিয়ে করছে একজন।" মিতু এইবার আর না হেসে পারে না। অট্টহাসি দেয একটা। "রিমা বিয়ে করতেছে নাকি? হাহাহা। কেমনে জানলেন?" -"জানলাম। তুমি হাসতেছ কেনো?" -"স্যরি স্যরি। আর হাসবো না। ব্যাপার নাহ। আপনিও একটা বিয়ে করে দেখায়ে দেন।" সায়েমের মেজাজ গরম হয়ে গেলো। " আমি রাখি।বাই।" রেখে দিল ও।
যতই রাগ দেখাক সায়েম কিন্তু মিতুকে ওর কোনো কথা শেয়ার না করলে ওর কিছুতেই ভালো লাগে না। রিমার বিয়ের কথাটাও ও জানার পরপরই মিতুকেই প্রথম ফোন করেছে। মিতুর বিয়ের কথাবার্তা চলছে এখন। একটা ছেলেকে মোটামুটি মিতুর পছন্দও হয়েছে। সায়েম কখনোই মিতুকে ভালোবাসেনি। তবুও মিতুর বিয়ের কথা শুনে কেনো জানি ওর ভালো লাগেনি। হয়তোবা নিজের অজান্তেই ও মিতুকে নিজের সম্পত্তি ভাবা শুরু করেছে। তিন বছর আগে যখন মিতুর জীবনে আরেকটা ছেলে এসেছিল সেই সময়ও সায়েম কেমন জানি একটা প্রচন্ড রাগ অনুভব করেছিল। অনেক দিন মিতুর সাথে ভালোভাবে কথাও বলেনি , যদিও ও জানে এভাবে রাগ করে থাকলে বাসার সবাই ভাবে যে ওরা একে অপরের শত্রু আর দুজন হিংসুটে। অথচ রিমার সাথে ব্রেক আপের পর সায়েম মিতুর কাছে যখন যেতে চেয়েছিল মিতুর একটা দাবী সে পূরন করতে পারেনি। মিতু চেয়েছিল, সায়েম ওকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিক। সব মেয়েই তো চায় ভালোবাসার মানুষের সংসার করতে। সায়েম বলেছিল সে ভবিষ্যতের কথা জানেনা। আর সব থেকে কঠিন যে কথাটা ও মিতুকে বলেছিল তা ছিল সে ফ্যামিলির সামনে কালার হতে পারবে না। ওর বাসায় ওকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন আর ওর ইমেজ অনেক ভালো ফ্যামিলির সামনে। মিতু রেগে গিয়েছিল। আর ওর দিকে ফিরে তাকায়নি। তবে ওদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। যখনই দুজন অনেক বেশি কোনো সুখ অথবা দুঃখের সামনে পড়েছে একে অপরকে স্মরন করেছে। যেমন আজ সায়েম করল।
মিতু কিছুই ভুলেনি। আজ রিমার বিয়ে। ও মনে মনে অনেক খুশি। আজকে সায়েম বুঝবে কতটা খারাপ লাগে এভাবে নিজেকে পরিত্যক্ত ভাবতে। ও সায়েমের খারাপ চায়নি কখনোই । কিন্তু মানুষ তো, তাই আজ কিছুতেই নিজের প্রতিশোধপরায়ন মনকে থামাতে পারছে না। ও মনে মনে হাসছিল। এমন সময় ফোন আসলো। ইফতির ফোন। মিতু একটু থেমে গেলো। ইফতি ছেলেটা ভালো। কিন্তু তাও কেনো জানি ওর ওকে ভালো লাগে না। মিতু আসলে পোড় খাওয়া গরুর মতোই ভয় পায়। ভালোবাসা ওর কপালে নেই এটা ও অনেক আগেই বুঝে গেছে। তাই মা বাবার কথা মতো ভালো পাত্রকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছে। কিন্তু ইফতির সাথে কথা বললেই ওর ভয় লাগে। ইফতির সাথে কথা বললে মনে হয় ইফতি পাত্রী কম, প্রেমিকা বেশি খুঁজছে। নরমালি পাত্ররা জিজ্ঞেস করে মেয়ের ভালো গুণ আর ইফতি চায় খারাপ গুণ। মিতু কনফিউজড হয়ে যায় । আর খুব ভালো বুঝতে পারে যে ইফতির সাথে বেশি কথা বললেই মিতু ওর প্রেমে পড়ে যাবে। আর একটা জিনিস ও খুব ভালো জানে। সেটা হলো, যেই মাত্র ও প্রেমে পড়বে তখন থেকেই ওর জীবনের দুঃসময় শুরু হবে। এটা ওর জীবনের সব থেকে বড় সত্য। ফোনটা কি ধরবে ও? ধুর। ধরতেই হবে। না হলে ল্যান্ডলাইনে ফোন করবে আবার লোকটা। "হ্যালো.."
" দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ ১৮ "
" দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ ১৭ "